রোববার   ০৫ মে ২০২৪   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

প্রখর রোদেও থেমে নেই রিকশার প্যাডেল

নুরুন নাহার নিরু

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  


সারাদেশসহ নারায়ণগঞ্জের আকাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তঅব্র তাপমাত্রা। দিনভর তীব্র তাপদাহ আর গরমে অতিষ্ট জনজীবন। গরমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরেছেন খেটে খাওয়া মানুষ। নারায়ণগঞ্জে আজ সবোর্চ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া তীব্রতা দেখে অনুভব হচ্ছে যেন ৪৪ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রথমে ৫ দিনের হিট অ্যালাট জারি করলেও তাপমাত্রার তীব্রতা দেখে ফের তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

 


চলমান এ তাপপ্রবাহের কারনে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ । জীবিকার তাগিদে প্রখর এই তাপকে উপেক্ষা করেও তারা রাস্তায়বের হচ্ছেন। বিশেষ করে প্যাডেল চালিত বা ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকরা পড়েছেন মহাবিপদে। কারণ ইট-পাথরের নগরীতে রাস্তার দুপাশে নেই গাছপালা। মাঝে কয়েকটি গাছ লাগানো থাকলেও তাতে হচ্ছে না কোনো ফায়দা।

 

 

এতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে যাত্রী ধরতে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। অথবা যাত্রীদের তাদের গন্তব্য স্থানে পৌছে দিতে এই খোলা আকাশের নিচে দিয়ে যাতায়াত করছে হচ্ছে। প্রখর এই রোদেও থামাতে পারেনি নিম্নআয়ের এসব রিকশা চালকদের।  

 


গতকাল নগরীর বেশ কয়েকটি জায়গা এবং বঙ্গবন্ধুসড়ক ঘুরে এমন দেখা যায়, ভোর হওয়ার আগেই যাত্রীর আশায় সড়কে বের হয়ে পরে রিকশা চালকরা। বেশ কদিন ধরে চলা প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যেও এসব রিকশা চালকরা রোদের মধ্যে হয়তো দাড়িয়ে আছে নয়তো যাত্রী নিয়ে ছুটছেন।

 

 

অন্যদিকে তীব্র গরমে কারনে আগের তুলনায় সড়কে যাত্রীসংখ্যা তুলনামূলক কম। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরে বাইরে বের হচ্ছেন না মানুষ। তাই যাত্রী ধরতে কাঠফাদা রোদের মাঝে চালকরা দাঁড়িয়ে থাকছেন।

 


এ নিয়ে একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, কয়েকদিন ধরে বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গেই রোদের তাপ বাড়তে থাকে। এতে আমরা খুব সহজেই দুর্বল হয়ে পরে। বিশেষ করে একবার যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পর শরীর ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে।

 

 

তাই এই ক্লান্তির কারনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে, শরবত বা ঠান্ডা পানি খেয়ে ফের রাস্তায় বের হতে হয়। আর এই বিশ্রামের কারনেই আমাদের আগের মতো ইনকাম হচ্ছেনা। এছাড়া রোদের তাপ বেশি থাকার কারনে রাস্তায় আগের তুলনায় যাত্রীসংখ্যা কম। এতে ইনকাম কমে যাচ্ছে।

 


বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিবাজার মোড়ে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,  ১০-১৫ মিনিট ধরে যাত্রীর জন্য এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। তবুও পরিবারে খরচ চালানোর জন্য রোদকে সহ্য করতেই হয় আমাদের। নয়তো সংসার চলবে না। এই সড়কের মাঝখান দিয়ে গাছ লাগানো কিন্তু দুপাশে গাছপালা খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রাম হলে ক্লান্তি লাগলে কাজের ফাঁকে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেওয়া যায়। কিন্তু এই শহরে এটা সম্ভব নয়।

 


এদিকে দেওভোগ এলাকায় যাত্রী নিয়ে এসেছেন মো. কামরুল । পুরো শরীর গামে ভেজা। নিজের কাছে থাকা গামছা দিয়ে ঘাম মুছছেন, আরেক হাতে টাকা নিচ্ছেন। টাকা নেওয়ার পর রিকশা রেখেই গেলেন রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে পানি খাওয়ার জন্য।

 

 

সেখানে ৩ টাকা দিয়ে এক গ্লাস ফিল্টার করা ঠান্ডা পানি খেলেন। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, এখন আয়ের কিছু অংশ ঠান্ডা পানি খেতেই ব্যয় হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তাই শরবত বা ঠান্ডা পানি খেতে হয়। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি