সোমবার   ০৬ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

মাকসুদের টাকা উড়ছে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪  

 

# প্রথম ১০ দিনেই তিনকোটি টাকা খরচ করার অভিযোগ
# আপনার রাজাকার পরিচয়টা দিলে বাংলার মানুষ ক্ষমা করবে না : সেলিম ওসমান
# কুটকৌশলের অংশ হিসেবেই বাবা-ছেলে নির্বাচনে আছে : স্থানীয়দের অভিযোগ

 

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রথম দশ দিনের মাথায়ই প্রায় তিনকোটি টাকার মতো খরচ করে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

এমনকি এই অভিযোগ করেছেন মাকসুদ হোসেনের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত এবং যিনি বিভিন্ন সময় তার নিয়ম-অনিয়মে মাথার ছাতা হয়ে তাকে রক্ষা করতেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানও। এ সময় মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কিনার অভিযোগও আসে। সে মতে মাকসুদ হোসেন এর নির্বাচনী আচরণ বিধির প্রতি তোয়াক্কা না করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

 

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে যখন মাকসুদ হোসেনের পিতা এমএ রফিককে রফিক রাজাকার আখ্যায়িত করে তার অতীতের কলঙ্কযুক্ত ইতিহাস নিয়ে সমালোচনা করা হয়, অতীত কু-কর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা হয় তখনও নিরব থাকা এবং তাদেরকে শেল্টার দেয়া এমপির মুখেও মাকসুদকে রাজাকারের সন্তান ও তার পরিবারের অতীত কর্মের সমালোচনা আসে বিষয়টি তখন খুবই ভেবে দেখার বিষয় বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

 

গত ৩০ মার্চ বন্দরের ধামগড়ে অনুষ্ঠিত একটি মত বিনিময় সভায় এমপি সেলিম ওসমান বলেন, এখন দুইজন আমার অমতে নির্বাচন করার চিন্তা-ভাবনা করছে (চেয়ারম্যান পদে)। একজন তো প্রমাণ করে দিয়েছেন (মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ) ওনি রাজাকার। আমি কখনও ধরি নাই, মানুষের জন্য কাজ করো, আগের পাপ, বাপ-দাদার পাপের কথা ভুলে যাও। পাপে বাপেরেও ছাড়ে না। আমি এতগুলো মানুষের সামনে বললাম, আল্লাহর কাছে মাফ চান এবং আপনার দায়িত্বে আপনি ফিরে আসেন।

 

তিনি আরও বলেন, আপনার এত টাকা কোথা থেকে হলো মাকসুদ সাহেব! আপনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। আমার হিসেব বলে, আপনি তিন কোটি টাকা ইতিমধ্যে খরচ করেছেন। আপনি মহিলাদেরকে বলেছেন, আপনাকে ভোট দিলে (জনপ্রতি) তিনশত করে টাকা দিবেন। আপনি ভুলে যাবেন না, বাংলার মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না যদি আপনি আপনার রাজাকার পরিচয়টা দেন। আমি নিষেধ করলাম, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিন্তু আপনাকে আমার মৃত্যু হলেও ছাড়বে না।

 

আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য মাকসুদ হোসেন এবং তার পুত্র মাহমুদুল হাসান শুভ দুইজনই অংশগ্রহণ করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, তারা প্রথমত ভেবেছিলেন যদি কোন কারণে একজনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয় জন যেন নির্বাচনে থাকতে পারে সেজন্য হয়তো দুইজনই প্রার্থী হয়েছেন। মাকসুদ হোসেনের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতে পারলে তার ছেলে শুভ সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু তা হয়নি।

 

তাই এখন তারা মনে করতেছেন, বিষয়টি হয়তো অন্যরকম। স্থানীয়দের ধারণা একই পরিবারের দুইজন প্রার্থী থাকলে দুইজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অজুহাতে ভোট কেন্দ্রে তাদের লোকবল বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে শক্তিমত্তা প্রকাশ ও এর ব্যবহারের মাধ্যমে জোর জবরদস্তি করে মাকসুদ হোসেনকে নির্বাচিত করার অপচেষ্টাও করা হতে পারে বলে মনে করেন তারা। এই জন্য প্রশাসনসহ সকল প্রার্থীদের সতর্কও থাকারও আহ্বা্ন জানিয়েছেন তারা।

 

মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক বাসিন্দার সাথে আলাপকালে তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় এমপির সমর্থন ও ছেলে শুভ’র গুন্ডাবাহিনীকে ব্যবহার ছাড়া মাকসুদ হোসেনে কখনও চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হননি। তাদের দাপটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও চুপসে যেতেন। তাই একদিকে অঢেল টাকা খরচ করে অন্যদিকে বিশাল বাহিনীর দাপট দেখিয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচনেও পার পেতে চাচ্ছেন তিনি। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর