মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

গ্যাস কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ!

ফরিদ আহমেদ রবি

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৪  

 

গ্যাস সঞ্চালন লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বন্দরের বেশ কিছু এলাকায় গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ দিনের বেলা কয়েক ঘন্টার জন্য বিঘ্নিত হবে মর্মে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। গ্যাস সরবরাহে বিঘ্নতার জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। একই রকম বিজ্ঞপ্তি প্রায় সময়ই প্রকাশিত হচ্ছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে বলে।

 

 

দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ কতটুকু স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক সে প্রসঙ্গে না গিয়ে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় নারায়ণগঞ্জের অনেক অঞ্চলে গ্যাসের গ্রাহকগণ কোন অবস্থাতেই নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে না। দিনের বেলায় তো নয়ই! নারায়ণগঞ্জের এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে কয়েক বছর যাবৎ গ্যাস সরবরাহ নেই বললেই চলে।

 

 

যেসব অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নেই বললেই চলে তাদের জন্য এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি রসিকতার নামান্তর নয় কি? তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের একথা অজানা নয় কোন কোন অঞ্চল দীর্ঘদিন যাবত গ্যাস বঞ্চিত থেকেও নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তর লেখালেখিও হচ্ছে।প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন কম হয় নি।

 

 

অনেক গ্রাহক মনের দুঃখে এ কথা বলতেও বাধ্য হচ্ছে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে তাদের সংযোগ যেন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় যাতে অন্ততঃ গ্যাসবিল পরিশোধ করা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। গ্যাস না পেয়েও বিল পরিশোধের এ যন্ত্রণা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কারো বোঝার কথা নয়।

 

 

যারা নিয়মিত গ্যাস পাচ্ছে তারা কারা এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের তেমন কোন ধারনাই নেই তবে এ কথা সত্যি চৌর্য্যবৃত্তির মাধ্যমে অনেকেই তাদের গ্যাস সরবরাহ ঠিকই স্বাভাবিক রাখতে পারছে। ভাগ্যবান কিছু গ্রাহকও হয়তো আছে যারা গ্যাস সরবরাহ ঠিকমতোই পাচ্ছে। শিল্পঘণ নারায়ণগঞ্জের অনেক জায়গাতে গ্যাস না পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক গুণ বেশি।

 

 

এসব অঞ্চলে গ্যাস কখন থাকবেনা সেটা বড় বিষয় নয়। বরং ভাগ্যক্রমে কখন গ্যাস থাকবে সেটিই বিবেচ্য বিষয়। অনেক গ্রাহককে রাত জেগে অপেক্ষা করতে হয় কখন একটু গ্যাসের দেখা মিলবে! গ্যাসের অভাবে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটানো সাধারণ মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তাই কয়েক ঘন্টার জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সাধারণ মানুষকে উপহাস করার মতই মনে হয়।

 

 

যেসব অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নেই বললেই চলে সেসব অঞ্চলে কবে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে বরং সাধারণ গ্রাহক উপকৃত হবে। গ্যাসবিহীন অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করার দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করলে বরং সাধারণ গ্রাহক তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে খুশি হতো। তাদের কর্তব্যপরায়ণতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করতোনা।

 

 

গ্যাস বঞ্চিত এলাকায় গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে এ ধরনের বিনীত বিজ্ঞপ্তি কি অর্থ বহন করে? অনেকের মতে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি গ্রাহকদের উপহাস করার নামান্তর মাত্র! অনেকের মতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা যাতে কাগজে কলমে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়! রাস্ট্রায়ত্ত্ব একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জনগন দায়িত্বশীল আচরন আশা করে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করে দায়িত্বোধের পরিচয় দিতে পারে।

 

 

গ্যাস স্বল্পতা বা অন্য কোন কারণে তা সম্ভব না হলে গ্রাহকদের হয়রানিমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কোন এলাকায় সার্বক্ষণিক না হোক কখন গ্যাস থাকবে সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে গ্যাসের খোঁজে সারাক্ষণ চুলার ধারে বসে থাকার যণ্ত্রনা থেকে গ্রাহক মুক্তি পেতে পারে।

 

 

গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার অগ্রিম ঘোষণা এবং এজন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশের মত রসিকতার পরিবর্তে তিতাস কর্তৃপক্ষ বাস্তবতার আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন যাতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক বা সহনীয় পর্যায়ে থাকে,এমনটিই গ্যাস গ্রাহকদের প্রত্যাশা। লেখক: বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানী ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি