শনিবার   ০৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

ঈদ শেষ হয়নি বিএনপির

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৪  

 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে অনেকটাই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে সরকার পতনের কঠোর আন্দোলনে মাঠে নেমে ও মামলা-হামলা থেকে নেতাকর্মীরা ছাড় না পেয়ে দীর্ঘ ৪ মাস ছিলেন আত্মগোপনে, আবার অনেকে দীর্ঘদিন কারা নির্যাতিত হয়েছেন। যাকে ঘিরে পূণরায় নেতাকর্মীরা রাজপথে হামলা-মামলা শিকার হতে আসতে চাচ্ছেন না।

 

যাকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের বিএনপি নেতাকর্মীর মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট দেখা গেলে ও তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন ঈদুল ফিতরের পর থেকেই কঠোর আন্দোলনমুখী হবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নারায়ণগঞ্জের শেষ স্মৃতি জিয়ার হলে থাকা জিয়ার মুর‌্যাল ভেঙ্গে ফেললে বিএনপির নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পরেন আর সরাসরি মুর‌্যাল ভাঙ্গার পিছনে দায়ী করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা একে.এম শামীম ওসমানকে।

 

তা ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম ও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের এই আল্টিমেটাম বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। সে সময় গণমাধ্যমকর্মীদের নানা প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেছিলেন বর্তমানে সংযমের মাস রমজান প্রবাহিত হচ্ছে। এ সময় কঠোর আন্দোলনে যাওয়া ঠিক হবে না, ঈদের পরপরই কঠোরভাবে রাজপথে আন্দোলন হবে। সরকার পতনের আন্দোলনের পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের মুর‌্যাল ভাঙ্গার আন্দোলন ও যুক্ত হবে। কিন্তু ঈদুল ফিতর শেষ হয়েছে আজ ৯দিন হলেও এখনো বিএনপি কোন প্রকারের আন্দোলন দৃশ্যমান হয়নি। তা ছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো আন্দোলনের কোন প্রেস আসেনি।

 

আরো জানা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচনের পর কয়েক দফায় রাজপথে আন্দোলন করলে ও আন্দোলন জমাতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা এদিকে বহু নেতাকর্মী আন্দোলন করেও পায়নি রাজনৈতিক পরিচয় তারা বর্তমানে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দিন দিন নিষ্ক্রিয় হয়ে পরছেন। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখনো সকল মামলায় জামিন পেয়ে উঠেনি। যার কারণে বর্তমানে ও তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।

 

তা ছাড়া মহানগর বিএনপিতে আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু ব্যাতিত শহরে প্রকাশ্যে নেই বিএনপির আর কোন নেতাকর্মীবৃন্দ। কেউ কেউ ঘরবন্দি আবার কেউ কেউ আছেন আত্মগোপনে। তাহলে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে হাঁকডাক করে ঈদুল ফিতরের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ও এখনো ও পিছপা কেন আর কবে ঈদ শেষ হবে বিএনপির এমনটাই প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলে।

 

সূত্র বলছে, চলতি মাসের (৫ এপ্রিল) রাতের আঁধারে চাষাঢ়ার টাউন হলে স্থাপিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলে দুর্বৃত্তরা। দুপুরে মোবাইলে খবর পেয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। জিয়ার ভেঙ্গে ফেলা ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে ফটোশেসন করেন।

 

এরপর এ কাজের জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানকে দায়ী করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো’ বলে হুংকার দিয়ে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম ছুঁড়ে দেন। এতেই ক্ষান্ত হয়ে পরেন আর এই আল্টিমেটাম শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আন্দোলনের মাঠে তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি এমনকি শহরে দেখা মিলেনি কোন প্রকারের প্রতিবাদ মিছিল। এদিকে জিয়ার ম্যুরাল ভাঙ্গা নিয়ে (৬ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শামীম ওসমান জোরালো বক্তব্য রাখার পর সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে দেখা যায়।

 

এদিকে শামীম ওসমান সেখানে বলে গিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সাংসদ শামীম ওসমান জিয়া হলের জায়গায় ‘৬ দফা মঞ্চ’ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আসছে ১৫ আগস্ট এ মঞ্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে। এতে ও কোন প্রকারের মাথা ব্যথা দেখায়নি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাহলে কি এখানেই শেষ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুর‌্যাল ভাঙ্গার আন্দোলন।

 

জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ডাকে বিএনপির বহু নেতাকর্মীর মুখ থুবড়ে পরেছে আবার অনেকে প্রকাশ্যে না আসলেও তলে তলে ঠিকই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একাংশ নেতাকর্মীরা অনেকেই বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বহু নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে উপজেলা নির্বাচনের নামে তলে তলে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

 

যেহেতু বর্তমানে বন্দর উপজেলা, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের টার্গেট বিএনপির ভোট হিসেবে অনেকেই তাদের সাথে সখ্যতা করছে আর বিএনপির নেতাকর্মীদের চাপ দিচ্ছে ভোটে অংশ নেওয়ার জন্য। যাকে ঘিরে বর্তমানে আন্দোলন থেকে উপজেলা নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির একাংশ হেভিওয়েট নেতারা।

 

এদিকে ঈদের ৯দিনেও আন্দোলন নিয়ে নেই বিএনপির মধ্যে কোন আলোচনা। আবার বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের এখনো রাজপথে সেই পুরনো রূপে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এদিকে হাইব্রিডদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে অনেকে দল ছেড়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার রাজনীতিই ছেড়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। সে দিকে লক্ষ্য করে কর্মীরা বলছেন, বিএনপির নেতাদের ঈদ এখনো শেষ হয়নি। যার কারণে নারায়ণগঞ্জে এখনো দেখা মিলছে না আন্দোলনের। এস.এ/জেসি 

এই বিভাগের আরো খবর