শনিবার   ০৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

কালাম-বাবুর খোঁচাখুঁচি 

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৪  

 

নারায়ণগঞ্জে ৫টি উপজেলার মাঝে ৪টি উপজেলার নির্বাচনের ভোটের ঢামাডোল বাজতে শুরু করেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রার্থীরাও মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আজ নারায়ণগঞ্জের তিন উপজেলার প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ সময়। বিশেষ সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রচারনায় গিয়ে একে অপরকে নিয়ে খোঁচা দিয়ে মন্তব্য করছেন। তবে কেউ কারো নাম না নিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে খোঁচা দিয়ে বক্তব্য রাখছেন। এতে করে তাদের সমর্থকদের বুঝতে বাকি নেই কে কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন।

 

তবে রূপগঞ্জে একাধিক প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে আওয়ামী লীগের দলের রাজনীতি করা দুই প্রার্থীর মাঝে। তারা হলে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবু। তিনি এবার এই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য প্রার্থী হবেন বলে জানান দিয়ে মাঠে নেমে প্রচারনা চালাচ্ছেন।

 

এদিকে নারায়ণগঞ্জের উপজেলা গুলোতে প্রথম ধাপে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহন হতে যাচ্ছে ৮ মে। ২১ মে সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে এখানে সোনারগাঁ রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে হেভিওয়েট শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাথে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লড়াই হতে যাচ্ছে। আর এতে করে একই দলের প্রার্থীর সাথে আরেক প্রার্থী প্রতিপক্ষ হবে।

 

যা নিয়ে দলীয় ভাবে একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য নিমজ্জিত হন। এমনকি একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য ভোটারদের মাঝে দোষ ত্রুটি তুলে ধরছেন। সেই সাথে ভোটারদের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।

 

দলীয় সুত্রমতে, সোনারগাঁ উপেজলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম নির্বাচনী উঠান বৈঠক করে ভোটারদের মাঝে গিয়ে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া এই উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জানান দিয়ে মাঠে নির্বাচনী উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন। দলীয় নেতা কর্মীদের মতে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে এই দুই প্রার্থী উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এমনকি সরাসরি নাম প্রকাশ না করে  একে অপরকে ইশারা ইঙ্গিত নানা ভোটারদের কাছে নানা বিরুপ মন্তব্য করছেন। এই নির্বাচনে এখানে তাদের মাঝে মূল লড়াই হতে যাচ্ছে। আর এজন্য একজন আরেকজনকে ছাড় দিচ্ছে না।

 

জানা যায়, কয়েক দিন আগে সোনারাগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহফজুর রহমান কালাম তার বক্তব্যে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি কোন চাদাঁবাজি, ধান্দাবাজির টাকা দিয়ে রাজনীতি করি না। আমি নিজের কামানো টাকা দিয়ে রাজনীতি করে আসছি। সোনারগাঁয়ে শত শত মিল ইন্ডাস্ট্রি আছে কেউ আমাকে বলতে পারবে না আমি তাদের কাছে যাই। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হয়েও গত ৫ বছরে মানুষের কাছে আসে নাই এমন লোকও আছে।

 

কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে চেয়ারে বসে যা লুটার তা লুটপাট করেছে। চান্দাবাজি ধান্দাবাজি থেকে শুরু করে কোন কিছু বাকি রাখে নাই। ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে চাঁদা নেয় ১০০ টাকা, আর চেয়ারম্যান হলে তা বাড়িয়ে চাঁদা নিবে ২০০ টাকা। কেননা চেয়ারম্যানি পদ ভাইস চেয়ারম্যানের চেয়ে বড়। তখন চাঁদার পরিমানও বেড়ে যাবে। তবে তিনি নাম প্রকাশ না করলেও কাকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছেন তা কারো বুঝতে বাকি নেই।

 

জানা যায়, ২০১৯ সনে সোনারগাঁ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন বাবুল ওমর বাবু। তিনি গত ৫ বছর এই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। এখনো বর্তমান তিনি দায়িত্বে রয়েছেন। কালামের বক্তব্যে তাকে নিয়েই ইঙ্গিত করে মন্তব্য করা হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এ নিয়ে সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। কিন্তু তিনি ছাড় দেন নাই।

 

অপরদিকে গতকাল সোনারগাঁ উপজেলার চেয়ারপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামকে উদ্দেশ্য করে বাবুল ওমর বাবু বলেন, এত বড় জনসভা দেখে হয়তো সে পাগলও হয়ে যেতে পারে। দেখবেন সে কালকে বা আজকে রাতেই গাড়ি নিয়ে চলে এসে পড়ছে। তিনি এই দিয়ে দিবে, সেই দিয়ে দিবে। বাবা তুমি ৩৮ বছর রাজনীতি করে কি দিছো সোনারগাঁয়ে? সোনারগাঁয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবা আর অপকর্ম ছাড়া কিছুই দিতে পারো নাই।

 

যারা মাদকবিরোধী এবং ভূমিদস্যু বিরোধী তাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল সোনারগাঁয়ের এক সভায়। যে ভদ্রলোক আমাদের চাঁদাবাজসহ নানা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে তাকে কিন্তু সেখানে দাওয়াত দেওয়া হয় নাই। তাদের দুজনের লড়াই এখন ঘর থেকে শুরু করে সোনারাগাঁয়ের মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে পরেছে। কেননা ইতোমধ্যে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। তাদের লড়াই কর্মী সমর্থকদের মাঝেও প্রভাব বিস্তার করছে। সেই সাথে ভোটের মাঠের লড়াইয়েও কোন অংশে থেমে নাই।

 

অপরদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় সারা দেশে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও নেই।

 

তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ এবার উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না। দলটির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। ক্ষমতাসীনেরা এই ‘স্বতন্ত্র কৌশল’ নেওয়ার সময় আশা করেছিল, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে না থাকলে বিএনপির নেতাদের অনেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। কিন্তু প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়ে গেলেও বিএনপি এই নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানান তারা অংশ গ্রহন করবে না।

 

এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১৬৬টি উপজেলার মাঝে নারায়ণগঞ্জের ৩টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২১ মে ওই সব উপজেলায় ভোট হবে। তার মাঝে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াই হাজার উপজেলার নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর