শনিবার   ০৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

সুফিয়ানকে চাপে ফেলার কৌশল 

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৪  

 

# নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে তথ্যগত ভুল : আবু সুফিয়ান
# কোন ধরণের চাপ তৈরি করা হচ্ছে না : এম.এ রশিদ
# দু’জনের মধ্যে একজনই থাকবেন : ভিপি বাদল

 

বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল হলেও ১৯ এপ্রিল রাতেই বন্দরে আয়োজিত এক বৈঠকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ রশিদকে সমর্থন দিয়ে বসে যাওয়ার প্রোপাগাণ্ডা চালানো হয়েছে।

 

বসে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে তথ্যগতভুল বলছেন আবু সুফিয়ান অপরদিকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ রশিদও বিষয়টিকে আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এদিকে আবু সুফিয়ান যদি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তবে তা তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

কেননা, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকেই দলীয় প্রার্থী না দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। তাছাড়া ভোটার উপস্থিতি যাতে বাড়ে সেজন্য মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান, আত্মীয়দের অংশগ্রহণ ঠেকাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূল নেতাদের অংশগ্রহণে জোর দিয়েছেন।

 

তাই স্থানীয় কোন আওয়ামী লীগ নেতা তো দূূরের কথা এমনকি কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কোন আওয়ামী লীগ নেতাও তৃণমূল নেতাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ, অপচেষ্টা, প্রলোভন দেখানোর সাহস করার কথা না বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একেএম আবু সুফিয়ান ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন কিনে আলোচনায় এসেছেন। তাছাড়া উপজেলায়ও অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিয়েও দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে পরে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি উল্টো।

 

আওয়ামী লীগের মতো বড় দলই এখন কর্মীদের প্রার্থী হতে উদ্বুদ্ধ করছেন। সুফিয়ানের ২০১১ ও ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে মেয়র আইভীর হয়ে সামনের সারির নেতা হিসেবে ভোট করার অভিজ্ঞতা আছে। এবার উপজেলা নির্বাচনে সুফিয়ানের যেহেতু আওয়ামী লীগের তরফ থেকে দলীয় কোন বাধা নেই তাই স্থানীয় কোন নেতার সমর্থনেরও প্রয়োজন পড়বে না। তৃণমূল কর্মী ও স্থানীয় জনগণ চাইছে সুফিয়ান নির্বাচনে অংশ নিক। তবে সুফিয়ানকে গলার কাঁটা মনে করে প্রচ্ছন্ন চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। যদিও বিষয়টি সবাই এড়িয়ে যাচ্ছেন।

 

সূত্র বলছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ রশিদের চাইতে বেশি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আবু সুফিয়ানের। তবে এই নির্বাচনে এম.এ রশিদকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন এই আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান। সূত্র বলছে, সেই পক্ষ থেকেই হয়তো সুফিয়ানকে চাপে ফেলতে নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টিও তেমনই প্রপাগাণ্ডা। এমন প্রচারণাকে তথ্যগত ভুল রয়েছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান। তার ভাষ্য, আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তে শেষতক তিনিই থাকবেন মাঠে।

 

এদিকে একই বিষয়ে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আমার প্রস্তুতি খুবই ভাল মনে করি। সুফিয়ানকে নিয়ে মিটিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিটিং হয়েছে তবে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এ ব্যাপারে আজ ২১ এপ্রিল আরেকটি মিটিং রয়েছে। এই ব্যাপারটি সেখানে আমরা পরিষ্কার করবো।

 

দল যেখানে প্রতীক না দিয়ে তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করছে সেখানে এই মিটিং করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে এম.এ রশিদ বলেন, দল এটা বলতেই পারে। তবে আমরা সমমনা কাজে বিশ্বাসী, আমরা একসাথে বসতে পারি, আলাপ আলোচনা করতে পারি। আলাপ আলোচনায় জনগণের কল্যাণে ভাল ফল বয়ে আনতে পারে এই লক্ষ্যেই এই মিটিং।

 

মিটিং এর উদ্দেশ্য প্রার্থীর উপর চাপ প্রয়োগ কি না এমন প্রশ্নে এম.এ রশিদ বলেন, আপনারা কেউ এখন পর্যন্ত বলতে পারবেন না, কোন চাপ তৈরি করা হয়েছে কারও উপর। আপনি যে প্রার্থী (সুফিয়ান) তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, তাকে কোন চাপ প্রয়োগ করে মিটিংয়ে আনা হয়েছে কি না? বর্তমান এমপির আরো দুইজন ঘনিষ্ঠ লোক (মাকসুদ হোসেন, আতাউর রহমান) প্রার্থী হয়েছেন, তারা সরেননি, তাই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এমন সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা।

 

এই অবস্থায় সুফিয়ানের উপর চাপ থাকলে সেটি কি পরিস্থিতি তৈরি করবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে চাপের কোন বিষয় নেই। কিছুদিন আগে আরেক প্রার্থী মুকুলের সাথে আমার প্রাণবন্ত আলাপ হয়েছে। এটা পরিবেশ ভালো রাখার জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্দরে একে অপরের সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছি সেই লক্ষ্যেই এসব আলাপ আলোচনা। এখানে অন্য কোন বিষয় নেই।

 

এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান যুগের চিন্তাকে বলেন, আমি ও রশিদ ভাই একই দলের হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  এডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা একটি জরুরী বৈঠকে বসেছিলাম। কেননা, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়লাভ করানোর বিষয়ে। সে কারণেই আমরা বসেছিলাম।

 

তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমাকে পুনরায় ছাড় দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। আমি বলেছি, এর আগেও আমি রশীদ ভাইকে সমর্থন দিয়ে বসে পরেছি। এবার যেনো দল থেকে আমাকে সমর্থন দেওয়া হয়। আমি শেষতক মাঠে থাকতে চাই।

 

জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার রাতে বন্দর উপজেলাধীন মদনপুর ইউনিয়নের সাইরা গার্ডেন রিসোর্টে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যেখানে নেতৃত্বে ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। দুই ঘন্টার ওই বৈঠকে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী এমএ রশিদ ও একেএম আবু সুফিয়ানের মধ্যে যেকোন এক প্রার্থীকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে, শেষতক তাদের দু’জনের একজনও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে মুখ খুলেননি।

 

এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলকে মুঠোফোন করা হলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা আমাদের প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলাম। এমএ রশিদ ভাই ও আবু সুফিয়ানকে নিয়ে কথা আমাদের আলাপ আলোচনা হয়েছে। আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের দু’জনের মধ্যে যেকোন একজনই থাকছেন এটাই সত্য। তবে, কে বসবেন আর কে থাকবেন সে বিষয়ে আমরা এখনো কোন ঘোষণা দেইনি। রোববার পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।

 

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ১৫ এপ্রিল সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে তারা মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আসে যে, কোন মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়রা যেনো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না হন। একইসাথে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 

আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল, জাতীয় পার্টি নেতা ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান। 

 

অপরদিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল এবং ২১ এপ্রিল আপিল নিষ্পত্তি। একইসাথে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল আর ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর