বুধবার   ০৮ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

চেয়ার চায় রাজাকারের উত্তরসূরি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৪  

 

বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বন্দরের অন্যতম কুখ্যাত রাজাকার রফিকের পুত্র বিতর্কিত মাকসুদ হোসেন আনারস মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী প্রচারণায় মগ্ন রয়েছেন যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে জেলা জুড়ে। এই মাকসুদ মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড অনেকটা তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য বলেই জেনে আসছেন সমগ্র বন্দরবাসী।

 

তিনি মুছাপুর ইউনিয়ন থেকে তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান একটি চিহ্নিত রাজাকার পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও এবং তিনি তার বাপ-চাচা, ভাই-ব্রাদার ও পুত্রসহ পরিবারের প্রায় সকল পুরুষের বিরুদ্ধেই হত্যা, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক সিন্ডিকেট, ধর্ষণে সহযোগিতা ইত্যাদি বিভিন্ন কুকর্মে আছে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে তার পরে ও উনি একটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারে কোন মুখ নিয়ে বসতে চায়। এমনটাই প্রশ্ন তুলছে বন্দরবাসী।

 

এদিকে জানা গেছে, বিতর্কিত মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী আচরণ বিধির প্রতি তোয়াক্কা না করে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রথম দশ দিনের মাথায়ই প্রায় তিনকোটি টাকার মতো খরচ করে ফেলেছেন। মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কিনার অভিযোগও আসলে ও বিভিন্ন লবিংয়ে তার মনোনয়ন বৈধ হয়ে যায়।

 

তা ছাড়াও গত (২১ এপ্রিল) মাকসুদের দ্বিতীয় স্ত্রী সুলতানা বেগমের দায়েরকৃত একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়। যা নিয়ে মাকসুদের নির্বাচনে বাধা আসবে মনে হলেও উপজেলার চেয়ারম্যানে চেয়ারে বসার জন্য মরিহা থাকায় তাড়াহুড়া করে সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে ৮ দিনের জামিন নিয়ে আবারো নির্বাচনী প্রচারণায় রাজাকার পুত্র মাকসুদ।

 

সর্বশেষ সময়ে আরো একটি মামলার আসামী হওয়া আশঙ্কা পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ৮ মে এর পূর্বে বিতর্কিত রাজাকার পুত্র মাকসুদ মাঠে থাকতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। আর একজন রাজাকার পুত্র কিভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে বৈধতা পায় এমনটি ও জানতে চায় সুধীমহল।

 

সূত্র বলছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ভোল পাল্টায় রাজাকার রফিক। কিছুদিন আত্মগোপনের পর আবার ফিরে আসে এলাকায়, আবির্ভূত হয় স্বরূপে। গড়ে তোলে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। ছলে বলে কৌশলে নির্বাচিত হয় ইউপি চেয়ারম্যান। আবার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত রাজাকার। কয়েক বছর আগে রাজাকার রফিকের সন্ত্রাসীরা কুড়িপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে।

 

আলাউদ্দিনের অপরাধ, তিনি রফিকের ছেলেকে বলেছিলেন- ‘রাজাকারের ছেলে’। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে বন্দরে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বন্দর কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করে। আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসীরা। রাজাকার রফিক বিয়ে করেছে ৪টি। ৪ পক্ষে তার ছেলে রয়েছে ৮ জন। প্রায় সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

 

রাজাকার রফিকের ছেলেদের বিরুদ্ধে বন্দর থানা সহ দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদক, অস্ত্র মামলা সহ একাধিক মামলা হয়েছে। তাছাড়া রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনের ছেলে শুভ এর বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি ও অপহরণ সহ একাধিক মামলা হওয়ার কারণে সারা বন্দর জুড়ে তারা আধিপত্য বিস্তার করে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।

 

তা ছাড়া আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য মাকসুদ হোসেন এবং তার পুত্র মাহমুদুল হাসান শুভ দুইজনই অংশগ্রহণ নিয়েছেন। আর মাসকুদ তার ছেলে শুভকে অংশ করিয়েছেন এই কারণে যে তিনি তার গুন্ডাবাহিনীর মাধ্যমে নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে জয় লাভ করার ক্ষেত্রে।

 

গত ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জিমখানা স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, ‘সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় নৌকাকে ফেল করিয়ে রাজাকারের সন্তান মাকসুদকে চেয়ারম্যান বানানো হয়। আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষদের বলবো সোচ্চার হওয়ার জন্য।’

 

সর্বশেষ ২০১৬ সালে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি সমর্থক প্রার্থী মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের আব্দুল কাদির। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির নেতা একেএম সেলিম ওসমান মাকসুদ হোসেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

 

পরবর্তীতে গত ৩০ মার্চ বন্দরের ধামগড়ে অনুষ্ঠিত একটি মত বিনিময় সভায় এমপি সেলিম ওসমান বলেন, একজন তো প্রমাণ করে দিয়েছেন (মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ) উনি রাজাকার। আমি কখনও ধরি নাই, মানুষের জন্য কাজ করো, আগের পাপ, বাপ-দাদার পাপের কথা ভুলে যাও। পাপে বাপেরেও ছাড়ে না। আমি এতগুলো মানুষের সামনে বললাম, আল্লাহর কাছে মাফ চান এবং আপনার দায়িত্বে আপনি ফিরে আসেন।

 

তিনি আরও বলেন, আপনার এত টাকা কোথা থেকে হলো মাকসুদ সাহেব! আপনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। আমার হিসেব বলে, আপনি তিন কোটি টাকা ইতিমধ্যে খরচ করেছেন। আপনি মহিলাদেরকে বলেছেন, আপনাকে ভোট দিলে (জনপ্রতি) তিনশত করে টাকা দিবেন। আপনি ভুলে যাবেন না, বাংলার মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না যদি আপনি আপনার রাজাকার পরিচয়টা দেন। আমি নিষেধ করলাম, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিন্তু আপনাকে আমার মৃত্যু হলেও ছাড়বে না। সেলিম ওসমানের এমন বক্তব্যকে পা দিয়ে ঠেলে দিয়ে উপজেলা নির্বাচন করতে এখনো বহাল সেই রাজাকার পুত্র মাকসুদ। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর