শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আইভীর ইশতেহারে কদমরসুল সেতু মেট্রোপলিটনের হাতছানি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২২  

 

 

# দীর্ঘদিন ফতুল্লাবাসীর সিটিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বাসনা পূরণ
# বড় দাগের দশটি প্রকল্প উদ্বোধনের পরপরই সুবিধা পাবে নগরবাসী


তৃতীয়বারের মতো মেয়র হওযার বিরল রেকর্ড গড়ার দ্বারপ্রান্তে নারায়ণগঞ্জে উন্নয়নের রূপকার হিসেবে খ্যাত ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। গতদুইবারের চেয়ে এবার তার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়াটা পুরো নগরবাসীর জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আগামী ২৪ ঘন্টা পর শুরু হওয়া নাসিকের তৃতীয় নির্বাচনে আইভী নির্বাচিত হলে শহর-বন্দরবাসীর স্বপ্নপূরণে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে। আইভী তার নির্বাচনী ইশতিহারের বিষয়ে সবচাইতে গুরুত্ব দিয়েছেন কদম রসুল সেতুকে। শহর-বন্দরের লাখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এই সেতু হবে অন্যতম মাধ্যম। ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই সেতুর অনুমোদন একনেকে পাশ হয়ে গিয়েছে। সাড়ে তিন কিলোমিটারের এপ্রোচ রোড এবং ৩৮০ মিটারের মূল সেতু তৈরি করার কাজটি টেন্ডার পর্যায়ে রয়েছে।

 

শহরের ৫নং গুদারাঘাট এলাকা থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ঝুলন্ত এই সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। গত দুই মেয়াদে আইভীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর অনুমোদন একনেকে পাশ করেন। কোরিয়ান কোম্পানির মাধ্যমে টেন্ডার পর্যায়ে রয়েছে সেতুর কাজ। আইভী নির্বাচিত হলে মাত্র দুইবছরের মধ্যেই এই সেতু ব্যবহারের সুবিধা নিতে পারবে শহর ওবন্দরবাস। নদী পারাপারের যে অসহনীয় দুর্ভোগ এবং বিপত্তি তা হ্রাস পাবে এই সেতুর মাধ্যমে।  এই সেতুর জন্যই শহর ও বন্দরবাসী আবারো নির্বাচিত করবে আইভীকে। আইভীর নির্বাচনী ইশতিহারের প্রথমটিই হচ্ছে এই সেতু।


এদিকে সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে পুরো সিটি এলাকার চেহারা বদলে দিয়েছে জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা ধরণের প্রতিবন্ধতার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবুও নানা উন্নয়ন কাজের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে সেসবের বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। নগরবাসীসহ আওয়ামী লীগের বৃহত্তর অংশ চাইছে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মাধ্যমে তৃতীয় বারের মতো আইভীই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিক।



সূত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী কী কী উন্নয়ন কাজ করেছেন এর ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবেনা। সিদ্ধিরগঞ্জ, শহর ও বন্দর এলাকা ঘুরে দেখে যে কেউ পার্থক্যটা নিজ চোখেই যাঁচাই করে নিতে পারেন। সূত্র জানায়, নগরবাসী খুব বেশি করে আরেক মেয়াদে আইভীকে চাইছে বেশ কিছু বড় ধরণের উন্নয়ন প্রকল্প শেষ পর্যায়ে রয়েছে যেগুলো আইভীর একক প্রচেষ্টাতেই দীর্ঘদিন পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে বন্দরবাসীর স্বপ্নের কদম রসুল সেতু এর মধ্যে অন্যতম। হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে শহর-বন্দরে যাতায়াত করে। ইতিমধ্যে কদমরসুল সেতুর কাজে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। এমন আরো দশটি বড় বড় প্রজেক্টের কাজ আইভীর কল্যাণেই এতোদূর এগিয়েছে। আইভীর অবর্তমানে এসব কাজ বিলম্বিত হবে। নগরবাসীর জন্য আরেক বড় দুর্ভোগ হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। সিদ্ধিরগঞ্জের ৯নং ওয়াডের দশপাইপ এলাকার ১০ একর জায়গা নিয়ে যেই বিস্তীর্ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে তার কাজও এগিয়েছে। এখানে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎউন্নপন্ন করার কথা রয়েছে। তাছাড়া বন্দর এলাকাতেও আরো একটি আলাদা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জায়গা বরাদ্দ হয়েছে। তাছাড়া বাবুরাইল খাল, শেখ রাসেল পার্ক, সিদ্ধিরগঞ্জের ডিএনডি এলাকায় হাতিরঝিলের আদলে তৈরি ডিএনডি খাল প্রকল্পের কাজও শেষ পর্যায়ে। আরেক মেয়াদে আইভীর হাত ধরেই খুব দ্রুত এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং নগরবাসী সুবিধা পাবে। এছাড়া আটোসাটো নগরভবন ছেড়ে নতুন ও আধুনিক ১০ তলা নগরভবনও উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। এসব প্রকল্প উদ্বোধন হলে চোখের পলকেই গোটা সিটি এলাকার নাগরিক সুবিধা আরো বাড়বে। যারা কারণে নগরবাসী চাইছে আরেক মেয়াদে আইভীই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হোক।



সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন সুপেয় পানির কষ্টে রয়েছে নগরবাসী। একসময় পৌরসভা তার এলাকার জনগণকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পেরেছিলো। কিন্তু ৯০এর দশকে সুপেয় পানির ভার ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধানে গেলে নগরবাসীর কষ্ট বাড়ে। বেশ কাঠপোড় পেরিয়ে নগরবাসীর সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র আইভীর হাত ধরেই দায়িত্ব নিয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই মেয়র বলেছেন আগামী দুবছরের মধ্যেই সুপেয় পানি নগরবাসীকে দিতে পারবেন। ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ করেছেন মেয়র আইভী। যার কারণে এই মেয়াদে নির্বাচিত হলে নগরবাসীকে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।



একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিটি এলাকা থেকে উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে ফতুল্লা এলাকা। এই এলাকার একটি বড় অংশ সিটি করপোরেশনে যুক্ত হতে চায়। কিন্তু নানা জটিলতা ও কয়েকজনের হস্তক্ষেপে এটি এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। ফতুল্লা এলাকার বেশিরভাগ মানুষও চান আইভী এবার নির্বাচিত হয়ে সিটি এলাকায় ফতুল্লাকে অন্তুর্ভূক্ত করা হোক। এতে ফতুল্লার জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসনসহ নানা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে।


এদিকে সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুর ও রংপুরের সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশন এলাকাও মেট্রোপলিটন এলাকা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি পক্ষের জোর তদবিরে সেটি আর হয়নি। নয়তো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা মেট্রোপলিটন এলাকা হলে এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা আরো জোরদার হত। ব্যবসায়িক এলাকা বিধায় এই এলাকায় আরো ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা নিয়ে আসতে নিরাপদ বোধ করতো। এবার তৃতীয় মেয়াদে আইভী সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পেলে নারায়ণগঞ্জে মেট্রোপলিটন এলাকা তৈরির ব্যাপারটিও আরো গুরুত্ব পাবে।



নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জবাসীর সুখে দুখে রয়েছেন আইভী। এই এলাকার মানুষের সকল সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে তিনি অবগত। সেটি ধরে ধরেই তিনি বাস্তবমুখী ও নাগরিকবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর নাম প্রস্তাব ও বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। এতে নগরবাসী আশানুরূপ সুবিধা পেয়েছে। সামনে বেশ কিছু বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নও শেষ পর্যায়ে। ফতুল্লাবাসীর আশা আকাঙ্খা পূরণ, নগরবাসীর জন্য আরো সমৃদ্ধ ও স্থায়ী উন্নয়ন এবং মেট্রোপলিটন এলাকা তৈরি এসব কিছুই এবার আইভী তৃতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হলে আরো বেগবান হবে।

এই বিভাগের আরো খবর