শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

সোনারগাঁ-রূপগঞ্জ নির্বাচনে আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২৪  

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও লড়াই হতে যাচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতাদের নিজেদের মধ্যে। গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন না করায় বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দলের প্রার্থী ছিলেন। আর এ নিয়ে বিএনপি বরাবর বলে আসছে এই নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল নিজেরাই একটি নির্বাচন করেছে। এবার উপজেলা নির্বাচনেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের উপজেলা গুলোতেও তার ব্যতিক্রম নয়।

 

প্রথম ধাপে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহন হতে যাচ্ছে ৮ মে। ২১ মে সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে এখানে সোনারগাঁ রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে হেভিওয়েট শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাথে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লড়াই হতে যাচ্ছে। আর এতে করে একই দলের প্রার্থীর সাথে আরেক প্রার্থী প্রতিপক্ষ হবে। যা নিয়ে দলীয় ভাবে একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য নিমজ্জিত হন।

 

এদিকে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের দলের প্রার্থীরা মাঠে নেমে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে। এমনকি একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য ভোটারদের মাঝে দোষ ত্রুটি তুলে ধরছেন। সেই সাথে ভোটারদের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।

 

অপরদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় সারা দেশে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও নেই।

 

তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ এবার উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না। দলটির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। ক্ষমতাসীনেরা এই ‘স্বতন্ত্র কৌশল’ নেওয়ার সময় আশা করেছিল, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে না থাকলে বিএনপির নেতাদের অনেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। কিন্তু প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়ে গেলেও বিএনপি এই নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানান তারা অংশ গ্রহন করবে না।

 

এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এবার মোট চার ধাপে ৪৮০টি উপজেলা পরিষদে ভোট হওয়ার কথা। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে দুটি উপজেলার (নারায়ণগঞ্জ সদর ও কুমারখালী) ভোট স্থগিত করা হয়।

 

দ্বিতীয় ধাপে ১৬৬টি উপজেলার মাঝে নারায়ণগঞ্জের ৩টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২১ মে ওই সব উপজেলায় ভোট হবে। তার মাঝে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে।

 

দলীয় সুত্রমতে, সোনারগাঁ উপেজলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম নির্বাচনী উঠান বৈঠক করে ভোটারদের মাঝে গিয়ে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া এই উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জানান দিয়ে মাঠে নির্বাচনী উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন। তাছাড়া সোনারগাঁ যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়ে ভোটারদের মাঝে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে।

 

তিনি মাঠে থেকে নিজের শক্তির জানান দিচ্ছে। তার সাথে কোন অংশে পিছিয়ে নেই সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি গত নির্বাচনে একক ভাবে পার পেয়ে গেলেও এবার তা হচ্ছে না।

 

অপরদিকে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গোলাম মর্তুজা পাপ্পা গাজী প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্তান। তবে তার বিপক্ষ প্রার্থী হিসেবে এখনো তেমন ভাবে কেউ না থাকলেও ডন সেলিম প্রধান মাঠে নেমে হুঙ্কার দিচ্ছে। জানা যায়, সোনারগাঁ এবং রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যারা প্রার্থী হতে যাচ্ছে তারা প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা।

 

তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, এবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। এই নির্বাচনও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আদলে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই হবে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে এই নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতও হতে পারে। সেই সাথে নিজেদের দলের প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই হবে।

 

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় ওই নির্বাচনে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল মোট ২৮টি দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ২২৪ জন জয় পান। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জয় পান ৬২ জন, তাঁদের মধ্যে ৬০ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। এর বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে জয় পেয়েছিলেন ১১ জন। এই আসন গুলোয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতা হয়েছিল। নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে একটি করে আসন পেয়েছিল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি। আরেকটি আসন পেয়েছিল কল্যাণ পার্টি। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর