শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আলোচনা-সমালোচনায় ছাত্রলীগ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২১  

# কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষকে হত্যার হুমকির অভিযোগ


# মাদক ও জালজালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার ও বহিস্কারও হয়েছেন অনেকে


# কিশোর অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ


# বিব্রত ক্লিন ইমেজের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতারা


ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে ছাত্রলীগ। অনেক ক্ষেত্রে সমালোচনাও হচ্ছে এই ছাত্র-সংগঠনটিকে নিয়ে। বর্তমান জেলা, মহানগর ও থানা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন কিছু ব্যক্তিকে আনা হয়েছে, যারা নানামুখি উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্রলীগকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন-এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। এতে, বিব্রত হচ্ছেন সাবেক এবং বর্তমান ক্লিন ইমেজে থাকা ছাত্রলীগ নেতারাও। অনেকে হতাশাও প্রকাশ করছেন বিতর্কিতদের নিয়ে।

 


জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিলে অবস্থিত গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মীর মোসাদ্দেক হোসেনকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম। বিদ্যালয়ের একটি শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ নিয়ে ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম বিদ্যালয়ে গিয়ে অধ্যক্ষকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। ওই ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সর্বত্র।

 


এদিকে, নিজ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলেও বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশার মধ্যে আছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। জানতে চাইলে দৈনিক যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি যে, ওই বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের পক্ষ হয়ে ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু অধ্যক্ষকে হুমকি দিয়েছে কিনা- এমন কোন অভিযোগ আমাদের কাছে এখনো আসেনি।’

 


তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিপক্ষে যদি কোন জামায়াত শিবির বা বিএনপির কেউ অভিযোগ দেয়, সেক্ষেত্রে বলার কি আছে! আমি যতটুকু জানি যে, প্রতিষ্ঠানটি বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন এর। ওনার এখানে বিএনপি-জামায়াতের লোক দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। ইতিমধ্যেই তারা হেফাজতের মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী। সেক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন যদি ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই আমাদের তদন্ত করে দেখতে হবে।’

 


রিয়াদ বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমি তোলারাম কলেজের একজন ছাত্র। আমি কখনই এটা মেনে নিব না যে, একজন ছাত্র শিক্ষকের সাথে অন্যায় কোন আচরণ করবে। সে ছাত্রলীগ হোক বা যেই হোক, শিক্ষকের সাথে অন্যায় কোন আচরণ করলে আমরা তা মেনে নিব না। শিক্ষক তো শিক্ষকই। তবে, আমাদের কাছে এই বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে অবশ্যই বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হবে।’

 


এদিকে, প্রায় সময়ই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা। কখনো মাদক, কিশোর অপরাধীদের আশ্রয় এবং কখনো জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছে তারা। পর্যায়ক্রমে এর সত্যতাও মিলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অভিযানের মধ্যদিয়ে। জানা গেছে, গত ২১ জুন রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফয়সাল মিয়াকে ৮ কেজী গাঁজাসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। এসময় আজিম নামে তার এক সহযোগিকেও গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, আগে থেকেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল মিয়া।

 


ইতিমধ্যে, ওই ছাত্রলীগ নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তবে, বহিস্কার করা হলেও প্রশ্ন উঠেছে, কার হাত ধরে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ন পদে আসলেন এই মাদক ব্যবসায়ী? বিতর্ক ছড়িয়েছে সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগেও। গত ৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মদপানে অসুস্থ হয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীসহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান বাবু, পিরোজপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন, ছাত্রলীগ কর্মী মহসিন মিয়া ও নাহিদ হাসান জিসান।

 


তথ্য বলছে, গত বছরের ৫ অক্টোবর ওকালতনামা, হাজিরা ও জামিননামা জালিয়াতির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া থেকে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল আহমেদ রবিনকে গ্রেফতার করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। ওই অভিযানে পালিয়ে যায় জেলা ছাত্রলীগের অপর সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান শুভ্র। এর মধ্যে সোহানুর রহমান শুভ্র’র মাদক সেবনের একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। একই সময়ে মহানগর ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক তোফা আহাম্মদের মাদক সেবনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সর্বত্র। যদিও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ তোফার ডোপ টেস্টসহ তাকে নোটিশ দিয়েছিলেন এবং রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।

 

জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহরিয়া রেজা হিমেলও নানা সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তন্মধ্যে, এক অসহায় পরিবারের সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এমনকি হত্যার হুমকি, জমি দখল, মারধর, মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ একের পর এক অভিযোগে হিমেলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শুধু কী তাই? প্রতিকার না পেয়ে পৃথক দু’টি ভুক্তভোগী পরিবার কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধনও করেছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরফান মাহমুদ বাবুর বিরুদ্ধেও রয়েছে কিশোরগ্যাং লালনের অভিযোগ। ইতিমধ্যে ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর, পাইলট স্কুল ও খোঁজপাড়া এলাকায় বাবু ওরফে ভাগিনা বাবুর একাধিক অনুসারীর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

 

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ছাত্রলীগ কোন অনৈতিক, আদর্শহীন, দেশ বিরোধী, চাঁদাবাজি কিংবা এই ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা ছাত্রলীগের আদর্শ ও নৈতিকতার সাথে যায় না। এমন বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ঘটলে, সেসবের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ও সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আর প্রধান শিক্ষককে হুমকি দিয়েছে কিনা, তা এখনো আমি অবগত নই, তবে হুমকি দিয়ে থাকলে সে ছাত্রলীগ করার যোগ্যতা রাখে না বলে আমি মনে করি।’ তবে সাবেক এই ছাত্র নেতার মতে, “ছাত্রলীগে কেবল নেগেটিভ দিক দেখলেই চলবে না, পজেটিভ অনেক ইতিহাসও আছে। যেমন ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধ। সারা বিশ্বে এটা বিরল যে, এই সংগঠনের ১৭ হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে। সম্প্রতি করোনার মধ্যেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ধান কেটে দেয়াসহ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে।”  
 

এই বিভাগের আরো খবর