শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনে পরিবর্তন চায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২১  

বন্দর উপজেলায় অবিস্থত ৫টি ইউনিয়ন পরিষদে যারা বর্তমান চেয়ারম্যান আছেন তাদেরকে পুনরায় নির্বাচিত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের ঘোষণাকে কোন অবস্থায়ই মানতে নারাজ বন্দরের তৃণমূলের আওয়ামী লীগ। তাদের মতে এক যুগেরও বেশী সময় ধরে বন্দরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নাই। আর তাতে করে জাতীয় পার্টির চাপায় পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড, হারিয়ে যাচ্ছে বনেদি এই সংগঠনের স্বকীয়তা এবং ভেঙে যাচ্ছে সাংগঠনিক মেরুদন্ড।

 

আওয়ামী লীগের স্বার্থবাজদের কাজে লাগিয়ে তাদের কাঁধের উপর ভর করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া পরগাছা ও রাজাকারপুত্রদের হাতে মার খাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া এই দলটির একনিষ্ঠ ভক্তরা। দলীয় ব্যানারে যারা এখন চেয়ারম্যান হিসেবে আছে তারাও নিজের চেয়ার ঠিক রাখতে পরগাছার মতো জাতীয় পার্টির ছত্রছায়ায় কাজ করছে। আর এতে করে যাদের কোন নাম বংশ পরিচয় ছিল না, জীবনে কোনদিন রাজনীতি করেনি, এমন অনেক ভিটে মাটিহীন এখন পুরোদস্তুর জাতীয় পার্টি কিংবা আওয়ামী লীগ নেতা সেজে কামাচ্ছে কারি কারি টাকা, আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গড়ে তুলছে বিলাসবহুল বাড়ি। তাদের ধারে কাছেও ভিড়তে পারছে না, যারা তিল তিল করে আওয়ামী লীগের সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছে কিংবা যারা চরম বিপদে নিজের স্বচ্ছলতার কথা মাথায় না রেখে দলের জন্য কাজ করে গেছে তারা।


 
এবারের নির্বাচনে যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ কিংবা যেকোন দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের জন্য জীবন বাজি রাখতে পারে, কোন ফাঁপর দালালের সাথে হাত মিলিয়ে যারা দলের স্বার্থ বিকিয়ে দেয় না, তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখার ইচ্ছে মনের মাঝে পুষে রেখেছেন তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ তৃণমূলের অনেকেই আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী এবং তাদের ধারণা এখানকার সংসদ সদস্য যদি কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি না করে তাহলে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন পদস্থ নেতার দরকার হবে না, তাদের প্রচেষ্টায়ই প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নির্বাচিত হবেন। তৃণমূলের ধারণা এখানকার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মাঠ আওয়ামী লীগের জন্য এখন খুবই উর্ভর। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাতে করে স্থানীয় জনসাধারণও প্রকৃত আওয়ামী লীগকে চেয়াম্যান পদে নির্বাচিত করতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।


 
বন্দরের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণের মনে বর্তমান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে বসা জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের উপর তাদের প্রচন্ড ক্ষোভ। তারা মনে করেন, সরকারের বর্তমান উন্নয়নমূখী কর্মকাÐের কারণে এখানকার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থান খুবই ভাল। এখানকার এমপি খুবই ক্ষমতাবান। তার কারণে তিনি যখন ঘোষণা দেন যে, এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান যারা আছে তাদেরই তার দরকার। জনগণ তার মুখের সামনে না বলার সাহস পায়নি বটে, তবে এই চেয়ারম্যানদের তার দরকার হলেও এখানকার জনগণের দরকার নাই।

 

বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির কথা উল্লেখ করে তারা প্রশ্ন করেন, কমিটির প্রথম সারির পদে বসা কোন নেতা সাধারণ জনগণের পাশে কিংবা আওয়ামী লীগের বনেদি কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন? তারা সবসময় এমপি ও তার দলের লোকদের খুশি করতেই ব্যস্ত থাকেন। তারা আরো জানান, এইসব নেতাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এমনকি বিএনপির কিছু নামধারী নেতা আছে, যাদেরকে প্রতিটি অনুষ্ঠানের মঞ্চেই দেখবেন ক্যামেরাবন্দি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এইসব নেতারাও সবসময় মঞ্চে বসে তাদের পিছনে এই পরিচিত এবং মার্কা মারা লোকদের রাখতে পছন্দ করেন। আর এই মার্কা মারা লোকগুলো দলের জন্য কোন ভূমিকা থাকুক কিংবা না থাকুক, নেতাদের পিছনের দাড়িয়ে ছবি তুলে সেই ছবি দেখিয়ে নেতাদের খুব কাছের লোক পরিচয় দিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় সুবিধা নেয় এবং ধান্দাবাজি করার সুযোগ তৈরী করে।

 

এদের বেশীর ভাগ লোকেরই এর বাইরে কোন কাজ নেই। তাই আমরা চাই আমাদের এখানে কোন প্রকার ধান্দাবাজ নেতা নয়, কোন চাটুকার নয়, প্রকৃত, ত্যাগী এবং নিঃস্বার্থ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্য হতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে। এখানকার আওয়ামী লীগ কর্মীদের, বঙ্গবন্ধুর কর্মীদের, শেখ হাসিনার কর্মীদের যেন অন্য কোন দলের নেতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণ যেন একটি নির্দিষ্ট পরিবারের হাতে চলে না যায়।


 
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, স্থানীয় পদবীপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা এখন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জাতীয় পার্টির মাঝে বিলীন হয়ে গেছেন। তারা জনগণের প্রতিনিধি না হয়ে জাতীয় পার্টি নামের একটি দলের এবং বর্তমান এমপি’র প্রতিনিধি হয়ে গেছেন। যারা অর্থের রঙ্গীন গøাসে তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কর্মী বা ত্যাগী নেতাদেরও চিনতে পারছেন না। এমনকি বিরোধীদের হাতে বারবার মার খেলেও তারা কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না, সান্তনার হাত বাড়িয়ে দেয় না। উল্টো তাদের সাথে মিশে তাদের পক্ষ নিতেও দেখা যায়। তাই এবারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় ভেজালমুক্ত ত্যাগী নেতাদের নির্বাচিত করতে চান।


 
এ বিষয়ে আরজু ভূঁইয়া বলেন, সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির মনোনীত এমপি এবং ওসমান পরিবারের সদস্য। আমি এর আগেও বলেছি বন্দর থানা আওয়ামীলীগ ওসমান পরিবারের বাইরে যেতে পারে না। আর ওসমান পরিবারের বাইরে যেতে পারে না বলেই বন্দর আওয়ামী লীগের আজকের এই পরিস্থিতি। যতদিন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে দলীয় প্রার্থী না দিবে, ততদিন পর্যন্ত এখানে আওয়ামী লীগের কোন উন্নতিসাধন হবে না। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হলে দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর দলীয় প্রতীক চাওয়ার অধিকার আছে। সেটা তারা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারীর মাধ্যমে চাইবে, চাওয়ার পর এটা উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাবে। এখানে যতজন প্রতিদ্বন্দিতা করতে চাইবে তাদের প্রত্যেকের নামই কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।

 

তিনি বলেন, রাজনীতি করার মতো যোগ্যতা যাদের থাকবে আর এবং এ সমস্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে, তাকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিৎ। এ বিষয়টা দেখভাল করবে থানা আওয়ামী লীগ। তবে আমি আগেই বলেছি থানা আওয়ামী লীগ ওসমান পরিবারের বাইরে যেতে পারবে না। তাই এখানে জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারীর উপর দায়িত্ব বর্তাবে তারা এটা কীভাবে দিবে তার উপর। তিনি বলেন, বন্দর, সদর, ফতুল্লা এবং সোনারগাঁ এই চারটি থানাই ওসমান পরিবারের বাইরে যেতে পারবে না। একাধারে আওয়ামী লীগ ১২ বছর যাবত ক্ষমতায় আছে, তিনি সব বিষয়ে যেহেতু অবগত আছেন সুতরাং আমরা এখানে কিছু বলতে পারি না। তিনি বলেন, বন্দর আওয়ামী লীগ ওসমান পরিবারের ভক্ত না নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাদের মধ্যে যদি নির্বাচনে লড়াই করার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন হয় তাহলে তার সাপোর্ট এমনিতেই এসে পড়বে।


 
আবু সুফিয়ান বলেন, সেলিম ওসমান হচ্ছেন জাতীয় পার্টির একজন মনোনীত সংসদ সদস্য। আমার দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রত্যেকটা ইউনিয়নে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দিবেন। সেলিম ওসমান কী চাইলেন কী চাইলেন না তা আমার দলের বিষয় না। আমার দলের বিষয় হলো, যাদের মনোনয়ন দিবে তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কারো চাওয়া এবং ইচ্ছার উপর আওয়ামী লীগের যায় আসে না। তিনি বলেন, এখানকার ৫টি ইউনিয়নের ২টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান বাকি ৩টিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। আমরাতো আর জাতীয় পার্টির পক্ষে হয়ে কাজ করবো না, আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়েই কাজ করবো।
 

এই বিভাগের আরো খবর