শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

উন্নত সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত রূপগঞ্জ  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

এস এম শাহাদাত

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২  

 

মানব সেবার শপথ নিয়েই চিকিৎসকদের চিকিৎসা পেশায় প্রবেশ করতে হয়। চিকিৎসকরা মানুষের জীবন রক্ষায় কাজ করেন। রোগীর পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো দাঁড়াতে হয় চিকিৎসকদের। গ্রামীণ জনপদে উন্নত সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

 

 

গত ৬ মাসে এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। রূপগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষের সরকারী ভাবে চিকিৎসা সেবার জন্য একমাত্র হাসপাতালের অবকাঠামোর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, ডিজিটাল সেবা চালু, নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবার মান ব্যপক পরিবর্তন এসেছে।

 

 

বর্তমানে হাসাপাতালের সেবা নিয়েও এলাকার মানুষ বেশ সন্তোষ্ট। উপজেলার ৪ লক্ষাধীক মানুয়ের চিকিৎসা সেবার কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অতিতের সকল রেকর্ডকে পিছনে ফেলে স্বাস্থ্য সেবায় মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

 

 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জনবল সংকট,কিছুটা দালালদের দৌরাত্ম্যসহ কিছু বিড়ম্বনা, কিছু সমস্যার মধ্যে দিয়েও স্বাস্থ্য সেবার মান আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭২ সালে নির্মিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ থানা সংলগ্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

 

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে প্রশ্নই থেকে যায়। এতে করে মানুষ উন্নত স্বাস্থ্য সেবার আশায় রাজধানীর ঢাকামুখী হয়ে পড়ে।

 

 

এদিকে উপজেলায় তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় ডজন খানেক প্রাইভেট ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয়। সে সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ডাক্তার, ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সহ প্রকট জনবল সংকট ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে মেশিন বয়সের ভারে বিকল হওয়া,সিজারিয়ান অপারেশন সিস্টেম না থাকা, দালাল ও বখাটেদের উৎপাতসহ নানাবিধ সমস্যায় স্বাস্থ্য সেবায় ভাটা পড়ে।

 

 


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ ও জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক চেষ্টায় গত একবছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রশাসনিক ভবন সংস্কার, জরুরী বিভাগ সম্প্রসারণ, মুজিব কর্নার স্থাপন, কিটস কর্নার, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাটন টিপে সিরিয়াল দিয়ে বহির বিভাগের রোগী দেখা 

 

 

কিশোর-কিশোরীদের স্পেশাল স্বাস্থ্যসেবা চালু, অপারেশন থিয়েটার চালু, নতুন করে ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে মেশিন সংযোজন, সিজারিয়ান অপারেশন থিয়েটার চালু করা, সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু করা, বজ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট স্থাপনা তৈরি করা। সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

 


সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির বিভাগে রোগী প্রতিদিন ৭শ থেকে ৮শ রোগী সেবা গ্রহন করছেন। তবে জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা কিছুটা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

 

 


এদিকে দালালদের দৌরাত্ম্যও আগের চেয়ে আনেকটা কমে গেছে। কিছু দালাল নিরীহ মানুষদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে ফাঁদে ফেলে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে নিয়ে যাছে।

 

 


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জনবল রয়েছে। তবে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর মঞ্জুরীকৃত কর্মচারীর সংকট বেশী। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ২৮জন মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ২১ জন। এর ভেতর একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। ৩য় শ্রেনীর মঞ্জুরীকৃত কর্মচারী পদ ২৩টি থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১০জন। ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর মঞ্জুরীকৃত পদ ২৪টি থাকলে কর্মরত রয়েছে ১১জন।

 

 


উপজেলার তারাব পৌরসভার মাসাব এলাকার মোখলেছ মিয়া জানান, এক বছর আগেও এ হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে সেন্টাল অক্সিজেন থাকায় শাসকষ্টজনিত ভর্তি রোগীরা ভাল সেবা পাচ্ছে । রোগীদের মাথার কাছে দেয়ালে রয়েছে অক্সিজেনের পাইপ শাসকষ্ট বাড়লেই অক্সিজেন নিতে পারছে।

 

 


সড়ক দূর্ঘটনার শিকার বাগবেড় এলাকার জালাল মিয়া জানান, ৬ মাস আগে এ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে একটি বেড ছিল। একজন রোগী চিকিৎসা দেয়া যেত। বর্তমানে জরুরী বিভাগটি সম্প্রসারণ করার কারনে ৩টি বেড দেয়া হয়েছে। একই সাথে ৩জন রোগীর চিকিৎসা দেয়া যায়। জরুরী বিভাগে আসা রোগীরা দ্রুত সেবা পাচ্ছে।

 

 


গন্ধর্বপুর এলাকার মোকলেমা আক্তার জানান, তার চার বছরের শিশু শিহান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগী বেশী থাকায় খালী বেড পেতে কষ্ট হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ হাসপাতালের সেবায় আমরা খুশি।

 

 


বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা দাউদপুর এলাকার বাবুল মিয়া জানান, আগে এ হাসপাতালে অর্থপেডিকস ডাক্তার ছিলনা এখন আছে। চিকিৎসা পেয়ে ভাল লাগলো।

 

 


হাসপাতাল ও স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তিনি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে রোগীদের খাবার, সহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম সুষ্ঠ তদারকির মাধ্যমে স্বচ্ছতা এনেছেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময় রাত অবধি এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

 

 


আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নাজমুল আহম্মেদ বলেন, রূপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপেক্সে আগত সকল রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন করতে টিএসও মেডামের নির্দেশ ক্রমে আমরা কাজ করছি।

 

 


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডিজিজ কন্টোল অফিসার ডাক্তার মশিউর রহমান বলেন, যেকোনো সময়ের চেয়ে সেবার মান এখন অনেক বেড়েছে। রোগীও বেড়েছে।

 

 


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী ফেরদৌস বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সাধারন জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা মানুষের সেবা নিশ্চিত ও ভর্তি রোগীদের সার্বক্ষণিক তদারকি, প্যাথলজি সেবা কফ ও যক্ষা পরীক্ষা, আল্ট্রা, ইসিজি করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা ও টিকা, সপ্তাহে দুইদিন সিজারিয়ান অপারেশন, গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারী তাছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে ডেলিভারীর ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

 

 

তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকটসহ কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই সংকটের কথা জানিয়ে দ্রুত সমাধান করতে অনুরোধ করা হয়েছে। বর্তমানে বহির বিভাগে রোগী বেশী হওয়ায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে বহির বিভাগের রোগীর সিরিয়াল দেয়া হয়। তাতে আগে পরে চিকিৎসা নেয়া কোন সুযোগ নেই।

 

 

স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধিসহ হাসপাতালের সার্বিক উন্নতি কল্পে সকল চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সহযোগিতা নিয়ে হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিসহ উন্নয়ন এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চেষ্ঠা করছি।

 

রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান ভুইয়া বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পক্ষ থেকে যখন যা চাওয়া হয়। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে রূপগঞ্জবাসীর সুচিকিৎসার স্বার্থে তখনি সে বরাদ্দ দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

এই বিভাগের আরো খবর