শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এমএ রশীদকে ঘিরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২১  

আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে বন্দর ও জেলা আওয়ামী লীগের উপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টি ঘেঁষা ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে বঞ্চিত রাখার দরুণ বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশীদের উপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা। এছাড়া বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি  নিয়েও ধোঁয়াশা কাটছেনা।

 

জেলা আওয়ামী লীগের একাংশ যারা উপরের সারির নেতা তারা অভিযোগ করছেন, তার এলাকায় কীকরে সভাপতি ও সেক্রেটারি কমিটি দেয় যেটি জানবার মতো অধিকার জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরই নেই। তোপের মুখে রয়েছেন এমএ রশীদ। এছাড়া সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাদের উপর। সূত্র জানিয়েছে, এদিকে এমএ রশীদের অনুসারীরা অবস্থা সামাল দিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের উপর চড়াও হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তা আমলে নিতে রাজি নন তৃণমূল নেতারা।

 

তারা বলছেন, দলের জন্য জীবন, যৌবন দিয়ে রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন। আর এখন হাইব্রীডদের আস্কারা দিয়ে তৃণমূলদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কয়েকজন সুবিধাবাদী নেতারাই এই উপলক্ষ তৈরি করেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সবসময় তৃণমূলের কথা ভাবেন। কিন্তু কিছু নেতা আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী বললেও তাদের কাজেকর্মে নিজেদের আখের গোছাতেই দেখা যায়। এমপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের সময়ও এমন দেখা গেছে। এখন ইউপি নির্বাচনেও স্বেচ্ছাচারিতা দিয়ে হাইব্রীডদের জায়গা দিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করছে তারা। এসব প্রতিরোধে তৃণমূল আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধভাবে স্বোচ্চার রয়েছে। 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ শুধু মাত্র একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলই নয়, দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলও বটে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন একটি ভ‚-খন্ডের সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। আর এই আওয়ামী লীগকে যারা ভালবাসেন, তারা কোন কিছু পাবার আশায় ভালবাসেন না। তবে হ্যা, তারাও অবশ্যই কিছু একটা পাওয়ার আশা অবশ্যই করেন, আর তা হলো দলের মান-সম্মান কিংবা দলের অস্তিত্ব রক্ষা। এমনও নেতাকর্মী আছে যারা এক বেলা খাবার না পাইলেও তাদের অসুবিধা হয় না, কিন্তু দলের বিরুদ্ধে বা দলের দুর্নাম হবে এমন কিছু শুনলে তারা মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েন। আর তাই স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া এই দলটির সবচেয়ে বড় ভরসা হলো তৃণমূল।

 

তারা শিকড়ের মতো আওয়ামী লীগের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন। তারা ত্যাগ করতে পারেন নিজের সব ভোগ-বিলাস কিংবা উচ্চাভিলাষের হাতছানি। কিন্তু ত্যাগ করতে পারেন না বঙ্গবন্ধুর ও তার কন্যার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। সেই ভালবাসাকে আঁকড়ে ধরে থাকা বন্দর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মী ও নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা স্থানীয় প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের মধ্যে এখনো বিরাজ করছে দলের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। বন্দর আওয়ামী লীগের হাইব্রীড ও দুই নৌকার মাঝিদের উৎপাতে কলুষিত হওয়া আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার লড়াই। তারা আজ অসহায় হয়ে প্রতি পরতে পরতে শুধু এই সব আওয়ামী লীগ নামধারীদের হুমকির মুখে আছে তা নয়। এইসব হাইব্রীড সুবিধাবাদি নেতাদের ঘাড়ে উঠে তাদেরই যোগানো সাহস ও প্ররোচনায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের দমনে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি চক্র।


 
বন্দর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, নামধারী আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদি নেতারা অনেক ক্ষমতবান হওয়ায় এবং তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থের বিনিময়ে তাদের সুবিধা ভোগ করা ও ভাড়াটে লোকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাপিয়ে রাখার কারণে তারা না পারছে সহ্য করতে না পারছে প্রতিবাদ করতে। সুবিধাবাদিরা অনেক শক্তিশালী হওয়ায় তৃণমূল এখন আছে জেলা পর্যায়ের বেশ কিছু ত্যাগী ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ ও প্রকৃত নেতাসহ বঙ্গবন্ধু কন্যার সদয় দৃষ্টির অপেক্ষায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় তাদের উপর হামলা, মামলা এবং অর্থের প্রভাব বিস্তার করে কোনঠাসা করে তাদের মুখ বন্ধ করার অপচেষ্টাও চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মী।

 

তবে আওয়ামী লীগের এসব নির্যাতিত নেতাদের অভিমত, একাধারে দীর্ঘ বছর একটি দল ক্ষমতায় থাকাকালেও তাদের এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (সংসদ সদস্য) আওয়ামী লীগের বাইরে থাকায় এখানে ক্ষমতা ও অর্থের লোভ ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বেশি। দল ক্ষমতায় থাকায় দলের সুযোগ সন্ধানীদের কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা লুটিয়ে নিচ্ছে আর সুবিধা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা। আর যেহেতু তারা প্রকৃত অর্থে আওয়ামী লীগের নেতা বা কর্মী না, তাই তাদের দলের প্রতি তাদের কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না।


 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কর্মী জানান, বন্দরের বিভিন্ন ইউনিয়নের যে সকল তালিকাভ‚ক্ত মাদক সম্রাটসহ ক্যাডার ও মাস্তান যারা আছে তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিলে জানতে পারবেন স্থানীয় প্রভাশালী নেতা, তাদের সন্তান কিংবা তাদের ভাতিজা, ভাগিনার সাথে এদের বেশীর ভাগেরই সখ্যতা আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শুধু সখ্যতা নয়, এসকল প্রভাবশালিরা নিজে থেকে এসব অনৈতিক ও দেশদ্রোহী কাজগুলোতে নেতৃত্বও দেন। প্রায়ই দেখা যায় তাদের নেতৃত্বে একাধিক মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে একটি ত্রাস তৈরী করে স্থানীয়দের ভিতর ভয় ঢুকিয়ে দেয়, তারা সংকেত দেয় যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের পরিণতি কি হতে পারে।


 
এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, আমাদের নেত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা অনেক প্রজ্ঞা নিয়ে দেশ পরিচালনা করেন। দেশের কোথায় কি হচ্ছে সবই যেহেত তার নখদর্পনে আছে, সুতরাং বন্দর প্রশাসনসহ বন্দর আওয়ামী লীগের প্রকৃত চিত্রও সম্পর্কেও তিনি অবগত আছেন সুতরাং আশাকরি তিনি সামনের দিকে এই বিষয়ে যে ধরণের সিদ্ধান্ত নিবেন তা দলের কথা ভেবেই করবেন। তারা আরো জানান, কারা আওয়ামী লীগের সুযোগ সন্ধানী, কারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অন্য দলের সহযোগিতা নিয়ে প্রচুর অর্থ ও সম্রাজ্যের পাহাড় গড়ছেন তা তিনি অবশ্যই অবগত আছেন। যেহেতু আমাদের দলের প্রধান বঙ্গবন্ধুর কন্যা, সুতরাং দলকে সুরক্ষিত করতে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর