শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কে এই দাউদ সোহেল-ডাকাত সাহাবুদ্দিন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৪  

 

# নিত্যদিন পুলিশ-ডিবি সদস্যদের আনাগোনার অভিযোগ
# খোঁজ নিচ্ছি, কারা মাদক ব্যবসা করে: এএসপি জহিরুল

 

ফতুল্লার শিয়াচর ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকার ইব্রাহীম মিয়ার ছেলে সোহেল ওরফে দাউদ সোহেল। আর দাপা মসজিদ এলাকার মৃত মহিউদ্দিনের পুত্র সাহাবুদ্দিন ওরফে ডাকাত সাহাবুদ্দিন। সংঘবদ্ধ এই চক্রটি বর্তমানে ডিজিটাল সব মাধ্যম ব্যবহার করে ফতুল্লার শিয়াচরে হাজার পিস ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বিক্রি করে চলেছে।

 

অভিযোগ আছে, প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর শিয়াচরের ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকায় দাউদ সোহেলের আড্ডাখানায় পুলিশ ও ডিবির কতিপয় সদস্যের আনাগোনা হয়। মূলত এ কারণেই স্থানীয় পঞ্চায়েত ও সচেতন নাগরিকদের কেউ বাধা প্রদান করলে তাদের পুলিশ-ডিবি দিয়ে হয়রানি করার দুঃসাহস দেখাতে পারে সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি, বলছেন খোদ এলাকার মসজিদ কমিটির লোকজন। যদিও পুলিশ বলছে, খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

কে এই দাউদ সোহেল?

সোহেল ওরফে দাউদ সোহেল সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও অপরাধ সাম্রাজ্যে তার প্রবেশ হয়েছিল অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে। আজ থেকে প্রায় এক যুগ পূর্বে সোহেলের নেতৃত্বে শিয়াচর এলাকায় একটি অপহরণ চক্র গড়ে উঠে। এ চক্রের সক্রিয় সদস্য ছিল, হাসিনা বেগম, সাজ্জাত হোসেন ও শাহাদাত। ২০১২ সালের দিকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে মাদারীপুরের তাছলিমা বেগম নামের এক নারীকে অপহরণ করে সোহেল ও তার সহযোগীরা। এরপর মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে ওই নারীকে শ্লীলতাহানি ও ব্যাপক নির্যাতন করে সোহেল। এই ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় সোহেল ও তার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও সোহেল ওরফে দাউদ সোহেলে বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মাদক আইনে অন্তত ডজন খানেক মামলা হয়েছে। অবৈধ সাম্রাজ্য চালিয়ে কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এই সোহেলের বিরুদ্ধে এতো মামলা থাকলেও প্রতিবারই আইনের ফাঁকে বের হয়ে আসে দাউদ সোহেল। আর ফের শুরু হয় তার অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনার কাজ।

 

কে এই ডাকাত সাহাবুদ্দিন?

ফতুল্লার এক সময়ের ডাকাত নেতা রতনের শিষ্য ছিলেন বর্তমান আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার সাহাবুদ্দিন। নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরলে ওই সময় মৃত্যুবরণ করেন কুখ্যাত ডাকাত রতন। এরপর থেকেই তার স্থলে আসে সাহাবুদ্দিন। মূলত, ২০১৪ সালে প্রথম আলোচনায় আসে ডাকাত সাহাবুদ্দিন। ওই বছর ২৪ মার্চ রাতে ফতুল্লার পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণকালে ডাকাত সর্দার রতন, সাহাবুদ্দিন, ইয়াছিন ও আমিন। ওই সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি নোয়া মাইক্রোবাস, একটি পিস্তল, ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। সে ঘটনায় তৎকালীন উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেছিলেন। শুধু নারায়ণগঞ্জই নয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডাকাতির কাজ করতো ডাকাত সর্দার সাহাবুদ্দিন ও তার দলের সদস্যরা। ২০১৫ সালে ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানায় কুখ্যাত ডাকাত সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও হত্যা চেষ্টায় মামলা হয়েছিল।

 

এদিকে নাম না প্রকাশ করে শর্তে বেশ ক’জন বলেন, ফতুল্লার শিয়াচর ইয়াদ আলী মসজিদ এর আশপাশে ২৪ ঘন্টা মাদক ব্যবসা হয়। দিনের বেলায় কিছুটা আড়ালে হলেও সন্ধ্যার পর থেকে রীতিমতো প্রকাশ্যে মাদক বেচাবিক্রি করে দাউদ সোহেলের নেতৃত্বাধীন ২০ থেকে ২৫ জনের একদল কিশোরগ্যাং সদস্য।

 

অপরদিকে শিয়াচরের স্থানীয় পঞ্চায়েত ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অনতিবিলম্বে এ সকল বিষয়ে যদি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ কোন ব্যবস্থা না নেয় সেক্ষেত্রে খুব শীঘ্রই চাঁনমারীর মতো রূপ ধারণ করবে শিয়াচরের ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকা।

 

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জহিরুল ইসলামকে অবগত করলে তিনি প্রতিবেদককে ধন্যবাদ দিয়ে যুগের চিন্তাকে বলেন, মাদকের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ একেবারেই জিরো টলারেন্স। বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করার জন্য ধন্যবাদ। আমি তাদের নামগুলো কোড করে রাখছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি কারা সেখানে মাদক ব্যবসা করে। সত্যতা পেলে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর