শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুনের জনপদ ইসদাইর এলাকা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২  

# প্রশাসন নির্বিকার

 

ফতুল্লা থানার ইসদাইর এলাকায় একের পর এক নির্মম হত্যাকান্ড ঘটে চলেছে। গত কয়েক মাসে অন্তত চারটি খুনের ঘটনা ঘটেছে ইসদাইর বাজার এবং আশপাশের এলাকায়। আর এসব হত্যাকান্ডগুলি ঘটিয়েছে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা। তাই গোটা ইসদাইর এলাকা জুরে এখন সাধারন মানুষের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে।

 

আবার কখন কোন মায়ে বুক খালি হয় এটা কেউ বলতে পারছে না। তাই সাধারন ঘরের ছেলে মেয়েরা এখন ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। কারন ইসদাইর এখন এক খুনের জনপদে পরিনত হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে ফতুল্লা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন আসার পর থেকে আইনশৃংখলার অবনতি ঘটতে থাকে।

 

ফলে বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারাও। তাই অল্প দিন থাকার পরেই রকিব উদ্দিনকে ফতুল্লা থেকে বদলী করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে এসেছেন শেখ রিয়াজুল হক দীপু। তিনি কতোখানি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারন পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে ঠেকেছে তাতে তাকে সফল হতে হলে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করেন ইসদাইরের সাধারন মানুষ।


এদিকে এ বিষয়ে জানতে ওই এলাকার বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম জীবনের সাথে যোগোযাগ করা হলে তিনি বলেন, হা আমরা দেখতে পাচ্ছি সম্প্রতি ইসদাইর এলাকা খুনী সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে।

 

সেখানে মাদক ব্যাবসা এখন একেবারেই প্রকাশ্যে চলছে। আর এই মাদক ব্যাবসার আধিপত্যকে ঘিরেই একের পর এক খুনের ঘটনা চলছে। মাত্র অল্প কিছুদিনের ব্যাবধানে অন্তত চারজন যুুবক খুন হয়েছে। প্রত্যেকটি খুনের ঘটনায় পিটিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখনই ওই এলাকায় সন্ত্রাসীদের তালিকা করে কঠোর ব্যাবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটবে বলে আমরা মনে করি।


এদিকে এ বিষয়ে একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন ইসদাইরের পরিস্থিতি বেশ অনেক দিন ধরেই ভয়াবহ। এলাকার একের পর এই খুনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। তাই আমি মনে করি এখনই যদি এ বিষয়ে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া না হয় তাহলে থামবে না এই খুনের হোলিখেলা। তাই বিষয়ে আমি র‌্যাব ও পুলিশের উর্ধতন অফিসারদের জরুরী এবং কঠোর পদক্ষেপ আশা করছি।


প্রসঙ্গত ইসদাইর এলাকা বছরের পর বছর ধরেই সন্ত্রাসী আর মাদক ব্যাবসায়ীদের অভয়ারন্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অত্র এলাকায় মাদকের হাট বসে অনেকটা প্রকাশ্যেই। এছাড়া কিছুটা রাজনৈতিক শেল্টারে থেকে কিশোর যুবকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে অত্র এলাকায় এখন নুনের চেয়ে খুন সস্তা হয়ে উঠেছে। তাই প্রশাসন গাফিলতি করলে আরো বহু মায়ের বুক খালি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।


গতবছরের ২৮ জুন রাতে মাত্র ৬ ঘন্টার ব্যবধানে ইসদাইরে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে একটি মাদক কারবার, অপরটি ঘটে অটোরিক্সা ছিনতাইকে কেন্দ্র করে। সূত্র জানায়, ইসদাইরে আধিপত্ত বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে বরাবরই সক্রিয় রয়েছে একাধিক গ্রুপ। এসব গ্রুপগুলো ক্ষমতাসীন দলের ব্যানার ব্যবহার করলেও আদোতে মাদক ব্যবসায়ী,

 

কিশোরগ্যাং ও সন্ত্রাসীদের লালন পালন করছেন এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখার জন্য। স্থানীয়রা জানায়, ইসদাইরে এমন কিছু নেতার আশ্রয়ে থেকেই সংঘবদ্ধ হচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। ঘটিয়ে চলেছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এদের অনেকেই আবার জড়িত আছে মাদক কারবারের সাথে। এভাবেই মাদক, কিশোরগ্যাং ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বৃহত্তর ইসদাইর এলাকা।

 

সবশেষ গতবছরের ২৮ জুন রাতে ইসদাইর রেললাইন ও চাষাঢ়া রেলস্টেশনে মাদকের স্পট থেকে মাসোহারা আদায় করাকে কেন্দ্র করে মাদককারবারী শামীম, রকি ও মানিক গ্রুপের সাথে ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার জামান, সোহাগ ও শিমুল গ্রুপের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে শামীম গ্রুপের হাতে নির্মম ভাবে খুন হয় রুবেল নামে এক রাজমিস্ত্রি। একই ঘটনায় মাদকের মাসোহারা দাবি করা সোহাগও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। পরবর্তীতে জামান, সোহাগ ও শিমুল গ্রুপের লোকজন পাল্টা হামলা চালায়। এসময় ইসদাইর বাজারে অবস্থিত অখ্যাত ‘জয়যাত্রা ক্লাব’ ও কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।


জানা গেছে, ওই সংঘর্ষে রাজমিস্ত্রী রুবেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েকৃত মামলায় উভয় পক্ষের ৩৩ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় এখনো পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

 

গ্রেফতারদের মধ্যে ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার ফারুক হোসেন শিমুল ফতুল্লা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং এক আওয়ামী লীগ নেতার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে এলাকায় পরিচিত। চাষাঢ়া রেলস্টেশন ও ইসদাইর রেললাইন এলাকার বিভিন্ন মাদক স্পট থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শিমুল ও তার সহযোগিরা মাসোহারা আদায় করতো বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

এদিকে, চাষাঢ়া রেলস্টেশন ও ইসদাইর রেললাইন এলাকার মাদক ব্যবসায়ী শামীম, মানিক ও রকিসহ তাদের সহযোগিরা ইসদাইর এলাকার এক ব্যক্তির শেল্টারে দাপিয়ে বেড়ায় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের একটি বিশেষ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য ‘হাজী সাহেবের লোক’ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, কিশোরগ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন সেক্টর দখলের লক্ষ্যে এমন একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে ইসদাইরে।


এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা শিমুল, তার সহযোগি জামান, সোহাগ এবং মাদক ব্যবসায়ী শামীম ও মানিক গ্রুপ ছাড়াও রয়েছে কাপুরাপট্টি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী পেটকাটা রকি, ইসদাইর এলাকার পায়েল, কমল, মানিক, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী কিশোরগ্যাং লিডার ইভন, হাসান, উজ্জল, খান বাবু, অনন্ত ও মুরগি মামুন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে থানায় মামলা ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

 

প্রতিটি গ্রুপেই রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ। পান থেকে চুন খশলেই আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ইসদাইরে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মহড়া চালায় এসব সন্ত্রাসীরা। জড়িয়ে পড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। ভয়ানক হয়ে উঠা এসব অপরাধীদের উৎপাতে ভীত থাকে ইসদাইর এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা।
 

এই বিভাগের আরো খবর