শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

জমানো ক্ষোভ থেকেই এ বর্বরতা

সৈয়দ রিফাত

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৪  

 

# প্রায় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল অতিষ্ঠ গ্রামবাসী
# মৃত্যু নিশ্চিত অবদি পেটানো হয়েছে ডাকাতদের

 

“৭ দিন হয় নাই- কাজরদীতে এক মহিলারে কোপাইছে ডাকাইতরা। এইটা নিয়া গ্রামের ছোট পোলাইপাইন থেইকা শুরু কইরা বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত চরম ক্ষ্যাপা আছিলো। সবতে মিল্লা কইছে, এইবার এলাকায় ডাকাইত ঢুকলে পিটাইয়া মাইরা ফালাইবো। হইছেও তাই।” সোনারগাঁয়ের সাদীপুরে গণপিটুনীতে ৪ ডাকাতকে মেরে ফেলা প্রসঙ্গে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, স্থানীয় দোকানদার ইবু মিয়া। তার ভাষ্যমতে, গ্রামবাসীর জমানো ক্ষোভ থেকেই এই বর্বরতা।

 

এর আগে, রোববার রাত দেড়টার দিকে সোনারগাঁও উপজেলাধীন কাঁচপুর ও সাদীপুর ইউনিয়নের বাঘড়ি এলাকায় ডাকাত সন্দেহে চারজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ সময় আহতাবস্থায় আরও একজনকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত ৪ জনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও বাকি একজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

 

পরিচয় শনাক্ত করা তিনজন হলেন- জেলার আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া জালোকান্দি এলাকার নবী মিয়ার ছেলে রহিম মিয়া, একই এলাকার মজিদ হোসেনের ছেলে নবী হোসেন এবং সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়ন সুখেরটেক এলাকার আমান মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন। এছাড়াও আহত আলী মোহাম্মদ আড়াইহাজার জালোকান্দি এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে।

 

সরেজমিনে সাদীপুর ও কাঁচপুর ইউনিয়স্থ বাঘড়ি, নানাখী, কাজিরগাঁও, বানিয়াবাড়ি, সুখেরটেক, কাজরদীসহ বেশ ক’টি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, ডাকাতদের অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পরেছিল ৮ থেকে ১০টি গ্রামের মানুষ। বিভিন্ন সময়ে ছোট বড় ডাকাতির ঘটনাসহ মানুষকে কুপিয়ে জখম করতেও দু’বার ভাবতো না ডাকাত দলের সদস্যরা। ঠিক সেই কারণেই নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে চারজন ডাকাতকে।

 

বানিয়াবাড়ি এলাকার কৃষক জুলহাস মোল্লা জানান, চলতি বছরেই ছোট-বড় একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এই গ্রামে। এ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে দিনযাপন করছিল গ্রামের সাধারণ মানুষ।

 

কাজরদী গ্রামের গৃহিনী মাকসুদা জানান, এক সপ্তাহ হয়নি কাজরদীতে ডাকাতি হয়েছে। ওই সময় এক মহিলাকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়েছে ডাকাত দলের সদস্যরা।

 

একাধিক গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির বেশ ক’জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাদীপুর জুড়ে ধারাবাহিক ডাকাতির ঘটনা ঘটায় মানুষ রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পরেছিল। সর্বশেষ, কাজরদীতে একজনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় চরম ক্ষিপ্ত ছিল প্রায় ৮ থেকে ১০টি গ্রামের মানুষ। বলা চলে, গ্রামবাসীরা প্রায় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল। গ্রামে এবার ডাকাতের প্রবেশ হলে ঘটনাস্থলেই যেনো ওদের চিরতরে শেষ করে ফেলা হয়- এমন পরিকল্পনাই ছিল অনেকের। মূলত, এ কারণেই মৃত্যু নিশ্চিত করা পর্যন্ত প্রত্যেককে পিটিয়েছে ছোট বড় সকলে।

 

এদিকে সোনারগাঁ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত চারজনের মধ্যে একজন ছিল সোনারগাঁয়ের দুর্ধর্ষ ডাকাত সরদার। নাম জাকির হোসেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে ছিল ১০টি মামলা। জাকিরের মামা আনোয়ার হোসেনও ছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত সদস্য। মূলত, মামার হাত ধরেই ডাকাতি জীবন শুরু হয়েছিল জাকিরের।

 

এর আগে, ২০২২ সালের ৩ মার্চ সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর গ্রামের নানাখী এলাকায় ডাকাতি করার সময় বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছিল জাকির। এছাড়াও ২০২৩ সালের শুরুর দিকে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় গণপিটুনীতে নিহত ওই জাকির হোসেন।

 

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসাইনের ভাষ্যমতে, গণপিটুনী থেকে বেঁচে ফেরা আহত আলী মোহাম্মদ স্বীকার করেছেন তিনি ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। আহতাবস্থায় আলী জানিয়েছে, মোট সাতজন মিলে তারা বড়বিলের পাড়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। পরবর্তীতে সেখানে আরও তিনজনের আসার কথা ছিল। তার আগেই, বিষয়টি গ্রামবাসী টের পেয়ে গেলে তারা আর সেখান থেকে পালানোর সুযোগ পায়নি।এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর