শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টনক নড়লো পিডব্লিউডি’র

প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২১  

অবশেষে মানববন্ধনের আগেই আলীগঞ্জ খেলার মাঠ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার থেকে সরকারের এই প্রকৌশল বিভাগটি ঐতিহ্যবাহি আলীগঞ্জ খেলার মাঠে কাজ শুরু করেছেন। জানা গেছে, আলীগঞ্জে সরকারী আবাসন প্রকল্পের আওতায় স্থানীদের জন্য একটি ভালো মানের খেলার মাঠ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

 

তবে, যথা সময়ে মাঠের কাজ সম্পন্ন না করে উপরন্ত মাঠের কাজ বন্ধ রাখায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা যায়। অতঃপর দ্রæত মাঠ তৈরী করে দেয়ার দাবীতে এলাকাবাসীকে নিয়ে ১২ জুন মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আলীগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ। ওই বিষয়ে দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গণপূর্ত বিভাগ আলীগঞ্জ ক্লাব কর্তকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসেন এবং দ্রুত মাঠ নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

 

ইতিমধ্যেই আলীগঞ্জ খেলার মাঠে মাটি ভরাটের কাজ চলমান আছে বলে গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানিয়েছেন গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মীর জহুরুল আরেফিন। বিগত সময়ে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহি আলীগঞ্জ খেলার মাঠ নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের সাথে আলীগঞ্জবাসির জলঘোলা কম হয়নি। নানামুখি আন্দোলন ও আদালতের নির্দেশনার পর পূরনো মাঠের উত্তর পার্শ্বের জায়গাটি বরাদ্ধ হয় আলীগঞ্জ খেলার মাঠ হিসেবে। তবে, করোনার কারণে কাজের গতি কমতি থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ যেমন শেষ হয়নি, তেমনই ঝুলে ছিলো আলীগঞ্জ খেলার মাঠ তৈরীর কাজও।  


 
নতুন মাঠ বরাদ্ধ দেয়ার দীর্ঘ এক বছরেও তা খেলার উপযোগি হিসেবে তৈরী না করায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের উপর ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছিলো স্থানীয়রা। মানববন্ধনের খবরে মাঠের কাজ শুরু করায় আর আন্দোলনে নামতে হয়নি স্থানীয়দের। এতে করে স্থানীয়রা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং দ্রæত সময়ের মধ্যে মাঠ তৈরী করার আবেদনও জানিয়েছেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মীর জহুরুল আরেফিন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমরা আলীগঞ্জ ক্লাবের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছি। তাদের বলা হয়েছে যে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই মাঠ তৈরী করে দেয়া হবে।

 

ইতিমধ্যেই মাঠের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ভালো মানের মাটি ফেলে মাঠ ভরাট করা হচ্ছে। মাটি ভরাটের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কাজও সম্পন্ন করে দেয়া হবে। প্যাভিলিয়ন হবে, আলীগঞ্জ ক্লাবের ক্লাব ঘর তৈরী করে দেয়া হবে, মাঠের সীমানা প্রাচির ও বিশুদ্ধ পানির জন্য মটরও স্থাপন করে দেয়া হবে। ঠিক কতদিনের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন হবে, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ বর্ষা মৌসুম চলে আসছে। বৃষ্টির জন্য কাজে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো দ্রæত সময়ের মধ্যে মাঠ তৈরী করে দেয়ার।’ আলীগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব কাউসার আহমেদ পলাশ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘সাবেক জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন থাকাকালিণ গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে, পূরাতন মাঠে আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই নতুন মাঠটি খেলার উপযোগি করে তৈরী করে দেয়া হবে।

 

এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলো। কিন্তু আমরা কাজের বাস্তবায়ন দেখছিলাম না। এতে এলাকাবাসি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলো এবং আজ (গতকাল) ১২ জুন সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন করার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে প্রস্তুত হয়েছিলো। অতঃপর গণপূর্ত বিভাগের লোকজন আমাদের সাথে বৈঠক করে এবং তারা প্রতিশ্রæতি দেয় যে, চলতি মাসের মধ্যেই মাটি ভরাট কাজ সম্পন্ন করবে এবং আগামী মাসের মধ্যেই মাঠের অন্যান্য কাজ যেমন, প্যাভিলিয়ন, কমেন্ট্রি বক্স, আলীগঞ্জ ক্লাবের ভবন, সীমানা প্রাচির, পানির ব্যবস্থা এবং উইকেট নির্মাণ সহ আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করবে। আশা করছি যথা সময়ের মধ্যে তারা তাদের প্রতিশ্রæতি রক্ষা করবে।’

 

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলীগঞ্জে ১১ দশমিক ৬৫ একর জমি রয়েছে পিডবিøউডির। এখানে প্রায় ৫ একর ৭০ শতাংশ জমিতে ঐতিহ্যবাহী আলীগঞ্জ খেলার মাঠ ছিলো। দেশ বরেণ্য ক্রীড়াবীদদের আগমণ ঘটেছিলো ওই মাঠে। কখনো ক্রিকেট, কখনো ফুটবল, একেরপর এক জমজমাট টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্রীড়া মোদিদের প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠে আলীগঞ্জ খেলার মাঠটি। তাইতো কমলমতি শিক্ষার্থী থেকে হাড় কাপুনে বৃদ্ধরাও মাঠ রক্ষায় ছিলেন সোচ্চার। মাঠ রক্ষায় নানা আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন আলীগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি কাউসার আহমেদ পলাশ। একনেকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশনও দায়ের করেন তিনি।

 

অতঃপর পূরনো মাঠে আবাসনের কাজ চলমান রেখে পার্শ্ববর্তী বিস্তির্ণ জায়গাটি খেলার মাঠের জন্য বরাদ্ধ হয়। পূরনো মাঠে আবাসন ভবন নির্মানের কাজ চলমান রেখে নতুন ওই জায়গাটিতে আলীগঞ্জ খেলার মাঠ স্থানান্তর করা হয়। নতুন মাঠটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৩৭৫ ফিট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৪৭৫ ফিট। এই মাঠের প্রায় মধ্যস্থলে বিশালাকৃতির একটি ইলেক্ট্রিক টাওয়ার ছিলো। মাঠের সুবিধার্থে বিশালাকৃতির ওই টাওয়ারটিও নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে, মাঠ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলো স্থানীয়রা। অবশেষে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের মাছে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।   
 

এই বিভাগের আরো খবর