শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দেড় কিলোমিটারে অভ্যন্তরে  ১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

আশরাফুল আলম

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২  

 

সোনারগাঁ উপজেলা সদরে দিন দিন গণ হারে বেড়েই চলছে ব্যবসা কেন্দ্রিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্ডার গার্টেন স্কুল। ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা এসব কেজি স্কুল গুলো সরকারি শিক্ষানীতিমালার কোন তোয়াক্কা করছেন না। ব্যবসা কেন্দ্রিক এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষানীতিমালার আওতায় আনা উচিত।

 

 

 

নতুবা শিক্ষার মান নিম্নমুখী হয়ে পড়বে। উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর এলাকায় দেড় কিলোমিটার অভ্যন্তরে রয়েছে সরকারি বেসরকারি মিলে ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

 

 

বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো হল কোরবানপুর কবরস্থান মাদ্রাসা, মদিনাতুল উলুম মহিলা মাদ্রাসা, কোরবানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শান্তিনগর দারুল নাজাত মাদ্রাসা, রূপায়ণ মডেল স্কুল, সানবিম ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল, চরগোয়ালদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঙ্গলেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাহেরপুর সিনিয়র মাদ্রাসা,

 

 

 

তাহেরপুর এফদায়ি মাদ্রাসা, তাহেরপুর হাজী লাল মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, চাইল্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কান্দাপাড়া ফাতেমাতুজ জোহরা  মাদ্রাসা, জমিরুন নেছা মাদ্রাসা, লিটল এনজ্যোলস কিন্ডার গার্টেন ও দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  

 

 

 

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও লেখাপড়ার মান নিয়ে রয়েছে নানাহ প্রশ্ন। সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা নেই, আয়ের উৎস নেই, খেলার মাঠ নেই, নেই শিক্ষা বিনোদনের জন্য কোন পরিবেশ।

 

 

 

এমনকি সরকারি শিক্ষা নীতিমালার কোন বালাই নেই ও মান সম্মত শিক্ষকহীন এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া কচিকাচা শিক্ষার্থীদের  ওপর বাড়ছে শিশু মনে ধারন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বইয়ের চাপ।

 

 

 

প্রতিটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলই গড়ে উঠেছে প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ব্যতিত স্থানীয় পাড়া মহল্লার বৃত্তশালী ব্যক্তিদের সিন্ডিকেটে। যাদের কাছে শিক্ষার মান উপেক্ষিত তাদের অনেকেই আবার গড়ে তুলেছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

 

 

 

শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পড়াশোনার মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন প্রকাশনা কর্তৃক সরবরাহকৃত বই চুক্তিতে গ্রহণ করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোমলমতি এ শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর। শুধু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছাড়া নিচের সব শ্রেণিতে তুলে দেয়া হচ্ছে এসব বই।

 

 

 

ওই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো স্কুল প্রধান শিক্ষককে মোটা অংঙ্কের টাকা দিয়ে যাচ্ছে তাই চালিয়ে দিচ্ছে বইগুলো। ফলে সরকারি কারুকুলামের আওতায় পাঠ না শিখে, শিখছে বেশির ভাগ আউট নলেজ।

 

 

 


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক মিলে এই পর্যন্ত গড়ে উঠেছে প্রায় ২২২টি কেজি স্কুল। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেজি স্কুল রয়েছে ১৮৫টি।

 

 

 

উপজেলা সদর ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও পাশাপাশি গড়ে উঠেছে এসব কেজি স্কুল। নিজস্ব ভবন নেই, নিজেদের আয়ের উৎস নেই, সম্পূর্ণ ব্যবসায়ী মনোবৃত্তি নিয়ে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ স্কুলে মান সম্মত শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষানুরাগী সচেতন মহল।

 

 

 

আবার অনেক স্কুল গড়ে ওঠার পর রাতারাতি ভাঙ্গনেরও দৃশ্য রয়েছে। এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলেও বর্তমানে  কোথাও এর অস্তিত্ব নেই।

 

 

 


শিক্ষানুরাগী সচেতন মহলের কাছ থেকে জানা যায়, বেশির ভাগ কেজি স্কুলে পাঠদানরত শিক্ষক শিক্ষিকা পাঠদানে অদক্ষ ও প্রশিক্ষণহীন। তাছাড়া বেশির ভাগ স্কুল গুলোতে খেলার মাঠ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নেই।

 

 

 

ভাড়ায় চালিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বিনোদন, সাংস্কৃতি ও ক্রীড়া চর্চার কোন সুযোগ নেই বললেই চলে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন শিক্ষকরা যদি পার্ট টাইম হিসেবে নিযুক্ত হন তাহলে পাঠদানে তাদের পূর্ণাঙ্গ মনযোগ থাকে না। পাঠদান নির্ভর করে মাসিক বেতন ভাতার ওপর।

 

 

 

এছাড়া এসব কিন্ডার গার্টেন গুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশিত বইয়ের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে নিজেদের স্কুল কর্তৃক পাঠ্য বইকে। একেক স্কুলে একেক প্রকাশনার বই তুলে দিচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে। বইয়ের মূল্য ও মান নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে।

 

 

 

অন্য দিকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মসজিদে গিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা কোরআন পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। যে সময় কোরআন পড়া শিক্ষা করার সময় ঐ সময় চলে প্রতিটি কেজি স্কুলে পাঠদান। যার ফলে ধর্মীয় শিক্ষা একেবারে উপেক্ষিত বললেই চলে।

 

 

 

ভারী বইয়ের বোঝা বইতে শিক্ষার্থীদের যেমন কষ্ট হয়, তেমনি পাঠ গ্রহণেও হিমশিম খেতে হয় শিশু শিক্ষার্থীদের। যেখানে দেশীয় বিনোদন সাংস্কৃতিক চর্চা থাকার কথা সেখানে চলছে বিদেশী পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিকাশ। সোনারগাঁ উপজেলায় এই পর্যন্ত প্রায় ১৮৫ টি কেজি স্কুল গড়ে উঠেছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।

 

 

 


উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দৌলতর রহমান জানান, বেসরকারি ভাবে গড়ে ওঠা এসব কেজি স্কুল গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। সোনারগাঁয়ে আমি যোগদান করার পর একটি কেজি স্কুলও অনুমোদন পায়নি।

 

 

 

প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেদিকে খেয়াল না করে খুলে বসেছে একই স্থানে একাধিক কিন্ডার গার্টেন স্কুল। ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা এসব কেজি স্কুল গুলো সরকারি শিক্ষানীতিমালার কোন তোয়াক্কা করছেন না। ব্যবসা কেন্দ্রিক এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষানীতিমালার আওতায় আনা উচিত। নতুবা শিক্ষার মান নিম্নমুখী হয়ে পড়বে।

এই বিভাগের আরো খবর