শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সেলিম ওসমানের কথাই সত্যি হলো

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২২  

 

# ফজর আলীর দুই বিচ্ছুবাহিনীর কোন্দলে দৌলত হত্যা
# বিচ্ছুবাহিনীর ভূমিদস্যুতার যন্ত্রণায় গোগনগরবাসী

 

 

গত বছরের শেষের দিকে নভেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জের ইউনিয়ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী জেলার সদর উপজেলা ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচন গত বছরের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। তখন ওই নির্বাচনে সদর উপজেলার গোগনগর ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ফজর আলী গোগনগরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু এই গোগনগর ইউনিয়নের নির্বাচনের আগে গত বছর উন্নয়ন শীর্ষক মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সদর বন্দর ৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।


তিনি তখন ফজর আলীকে নিয়ে নানা বিরুপ মন্তব্য  করে বলেন, এই শহরে অনেকে বিশাল অট্রালিকার মালিক হলেই যে চেয়ারম্যান হবেন তা হবে না। তার জাপানে এক বউ দেশে আরেক বউ এই সকল লোকদের জনপ্রতিনিধি না বানানোর আহবান জানান তিনি। একই সাথে তিনি বলেন, ফজর আলী চেয়ারম্যান হলে গোগনগরে লাশের বন্যা বয়ে যাবে। তাই তাকে জনপ্রতিনিধি বানানো যাবে না। তবে সব কিছুর উর্ধে গিয়ে গত বছরের ইউনিয়ন নির্বাচনে গোগনগর ইউনিয়নে ফজর আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।


তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে গোগনগরে একের পর এক মারামারি ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ফজর আলীর বিচ্ছু বাহিনীর অন্যতম সদস্য রানার গুলিতে গোগনগর ইউপির সংরক্ষিত নারী সদস্য নিলুফা মেম্বার আহত হন। যা নিয়ে পরবর্তিতে মামলা পর্যন্ত হয়। আর সেই মামলায় বুধবার ২০ জুলাই বিকেলে গোগনগর সৈয়দপুর থেকে নিলুফা মেম্বারকে গুলিবিদ্ধকারী রানা গ্রেপ্তার হন। তাকে আগামী রোববার রিমান্ডের জন্য আদালতে তুলা হবে।


অপর দিকে এই বছরের ১৫ মার্চ গোগনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরান সৈয়দপুর এলাকায় জমিসংক্রান্ত কারনে গোগনগর ইউপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর হোসেন ও নিলুফা মেম্বারে উপর হামলা করেন রানার সন্ত্রাসবাহিনী। আর তখনই রানা নিলুফা মেম্বারের উপর গুলি ছুড়েন। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিলুফা মেম্বার আহত হয়ে হাসপাতালে যান।  ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ নিলুফাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তখন ঘটনার পর ধারালো অস্ত্র নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় নিলুফা মেম্বার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। গুলিবিদ্ধ নিলুফা বেগম গোগনগর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওর্য়াডের (৭, ৮, ৯) মেম্বার।


খোঁজ নিয়ে জানাা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুরান সৈয়দপুর এলাকায় বিচ্ছু বাহিনীর দুই গ্রুপের মধ্যে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং প্যানেল চেয়ারম্যান, মেম্বার রুবেল ও রানা বাহিনীর মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। (২০জুন) রাত ১০টার দিকে ফজর আলীর ২ বিচ্ছুবাহিনীর মাঝে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  প্রথমে চর সৈয়দপুর এলাকায় এই সংঘর্ষ যা রাত ২ টা পর্যন্ত চলে। ফজর আলীর বিচ্ছু বাহিনী নেতৃত্ব দেন আনসার, রুবেল মেম্বার এবং রবিন সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন মেম্বারকে পিস্তল দিয়ে গুলিবিদ্ধকারী রানা, তার সহযোগি কাশেম সম্রাট, সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। আর এই দুই গ্রুপ গোগনগরে ফজর আলীর শেল্টারে একের পর এক নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। সম্প্রতি গোগনগরের প্রিমিয়ার সিসেন্ট ফ্যাক্টরী, ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যক্টরী সহ আলী আহম্মেদ ডকইয়ার্ডের ওয়েষ্টেজ মালামাল আদিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ লাগে। এই সংঘর্ষের ঘটনার জের হিসেবে দৌলত মেম্বারকে জীবন দিতে হয়। গোগনগরবাসির মতে ফজর আলীর শেল্টারেই গোগনগরে দৌলত মেম্বারকে হত্যা করা হয়। আর এত করে বুঝা যায় তাহলে নির্বাচনের আগে সেলিম ওসমানের কথাই এখন সত্য হলো। ফরজর আলী চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে একের পর সংঘর্ষের ঘটনায় গোগনগরবাসিকে এখন আতঙ্কে দিন পার করতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় মানুষ জন ফজর আলীর বিচ্ছুবাহিনীর দুই গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হয় তাহলে হয়ত মানুষের মাঝে কিছুটা শস্তি ফিরবে।


রানা এবং রুবেল মেম্বারের মারামারির ঘটনায় রুবেলের লোকজন রানার বাড়ি পুরাতন সৈয়দপুর গিয়ে দুইটি মটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সাথে বাড়ি ঘড়ে ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় নারায়নগঞ্জ সদর থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। ২১ জুন রানা বাহিনীর বিপক্ষে ১৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে লুৎফর রহমান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ২৩। অপর দিকে একই দিনে রুবেল বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৪ জনের নাম উল্লেখ্য করে হাসি বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ২৪। তবে এই মামলায় তখন দুই গ্রুপের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। তাই সচেতন মহল মনে করছেন তাদের বিরুদ্ধে তখন কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় আজকে দৌলত মেম্বার হত্যার ঘটনা ঘটে।

 

একই ঘটনায় রুবেল বাহিনীর রবিন ব্যাংককে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তার খেসরাত দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগী  দুই পরিবারকে। কেউ বাবা হারিয়েছে, আবার কেউ সন্তান হারিয়েছে। তারপরেও এই ঘটনার শেষ কবে হবে তা গোগনগরের সচেতন মহল জানেন না। তবে নিলুফা মেম্বারকে গুলিকরা রানার অস্ত্রের বিষয়ে রহস্য উৎঘাটন হয় নাই। তাই এলাকাবাসি প্রশ্ন তুলেন রানা কোথায় থেকে অস্ত্র পেল। তার অস্ত্রের লাইসেন্স আছে কি না। সেই সাথে তার সেই অস্ত্র এখন কোথায় আছে। তার অস্ত্রে বিষয়ে তদন্তের দাবী তুলেন স্থানীয় লোকজন। এবং তাকে রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসার দাবী তুলেন সচেতন মহল। তাছাড়া গোগনগরের চেয়ারম্যান ফজর আলীর বিচ্ছুবাহিনীর দুই গ্রুপের সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অসহায় মানুষের জায়গা দখলে অভিযোগ আছে। এই ভূমিদস্যুতা করে অনেকে কোটিপতি বনে গেছেন। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও পরে আর তেমন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় মানুষ তাদের ভয়ে আতঙ্কে থাকেন। 


রানাকে গ্রেপ্তারে  বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার তদন্ত ওসি সাইদুজজ্জামান বলেন, রানা অভিযুক্ত মামলার আসামী তাই তাকে বুধবার বিকেলে অভিযান পরিচালনা করে গোগনগর ইউনিয়ন সৈয়দপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরন করা হয়। রিমান্ডের আবেদন করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ তার অস্ত্রের বিষয়ে রহস্য উৎঘাটন করা হবে। একই সাথে কোন অপকর্মকারীকে ছাড় না দেয়ার কথা জানান তিনি।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর