বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

কলাগাছিয়া ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার নাকাল অবস্থা

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২১  

উন্নয়নের শ্লোগানে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখনো সড়কগুলোর নাকাল অবস্থায় নাকানি চুবানি খাচ্ছে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কল্যান্দী হতে সাবদী সড়ক এবং উপজেলার প্রধান প্রশাসনিক এলাকা উপজেলা পরিষদ ঘেঁষে যাওয়া ফরাজীকান্দা হতে কলাগাছিয়া সড়ক এর আশেপাশের এলাকাবাসি।

 

কমপক্ষে অর্ধযুগ ধরে এসব সড়কে পড়েনি উন্নয়ন কিংবা সংস্কারের ছোঁয়া। এলাকাবাসির ক্ষোভ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের উন্নয়নে তাদের সমর্থিত সংসদ সদস্য থাকা সত্ত্বেও এবং সংসদ সদস্যের দলীয় চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও এই এলাকার মানুষ কেন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা ভেবেই পাচ্ছেন না তারা।


 
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্দরের কল্যান্দী হতে সাবদী পর্যন্ত এবং ফরাজীকান্দা হতে কলাগাছিয়া যে সড়ক দুইটি গেছে এগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই সড়ক দিয়ে রিকশা, অটো, স্কুটার কিংবা সিএনজি যে গাড়ি দিয়ে চলাচল করুক না কেন এখান দিয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বড় কথা ফরাজীকান্দা হতে কলাগাছিয়া যে সড়কটি গেছে তা উপজেলা পরিষদ ঘেঁষে গেছে। এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, এলজিইডি কর্মকর্তাসহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের অবস্থানের পরও উন্নতি হচ্ছে না এই ভাঙ্গা সড়কের। মেরামত ও করা হচ্ছে না। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের গাড়িও এই সড়ক দিয়ে যাওয়া আসা করে।


 
এ সড়কের জিউধরা আদমপুর চৌরাস্তার মোড়ে স্থানীয় ষাটোর্ধ বৃদ্ধ আসাদ মিয়া জানান, কমপক্ষে অর্ধযুগ আগে সর্ব শেষ এখানে পিচ ঢালাইয়ের মাধ্যমে রাস্তার ভাঙ্গচুরা স্থানগুলো ঠিক করা হয়। এখানে পুরো রাস্তা এক সাথে মেরামত কত বছর আগে হয়েছে তা আমাদেরও মনে নেই। এলাকার সাধারণ মানুষ এখান দিয়ে কোন গাড়িতে না উঠে হেঁটে যাওয়াটাই পছন্দ করেন। তবে সমস্যা হয় নারী, বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে। কোন একটা গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে শান্তি পায় না।


 
সিএনজি চালক ইমতিয়াজ জানান, বন্দর এলাকায় গাড়ির পরিমান বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য জায়গার যাত্রি না পাওয়াতে বাধ্য হয়েই এই রোডে গাড়ি চালাই। তাছাড়া এখান দিয়ে গাড়ি না চালালে এই এলাকার মানুষজনের চলবে কি করে? তিনি বলেন, আমার এই গাড়ি দিয়ে এখান দিয়ে যে জায়গা দশ মিনিটে যেতে পারি সে জায়গা যেতে এখন সময় লাগে কমপক্ষে ৪০ মিনিট। তাই দশ টাকার ভাড়া আমাদের ২০ টাকা নিলেও পোষায় না। অন্যদিকে এই বেশী ভাড়া দিতেই এলাকাবাসি হিমশিম খাচ্ছে।


 
ঘাড়মোড়া এলাকার বাসিন্দা হাফিজউদ্দিন বলেন, আমাদের এই রাস্তাটির পাশেই উপজেলা পরিষদ। সেখানকার কর্মকর্তাগণ এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। অথচ এ রাস্তাটি কি করে যে, এত বছর যাবত এমন শোচনীয় যা ব্যবহারের একেবারেই অনুপোযক্ত তা তাদের চোখে পড়ছে না তা বুঝতে পারছি না। তিনি আরো জানান, বর্তমান সরকারের সমর্থিত এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ ইউপি’র চেয়ারম্যান। এতগুলো জনপ্রতিনিধির চোখের সামনে এই রাস্তাটি কি করে এমন শোচনীয় অবস্থা থাকে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।


 
ঘারমোড়া এলাকার ব্যবাসায়ী হাছান মিয়া জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের কথা শুনি, বিভিন্ন সংবাদেও আমরা দেখি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট হচ্ছে। আমাদের এলাকায় নতুন রাস্তা হওয়া দুরের কথা, উপজেলা পরিষদের নাকের ডগা দিয়ে যাওয়া রাস্তার যে অবস্থা সে রাস্তাটিই মেরামত করতে পারছে না জনপ্রতিনিধি নামক স্থানীয় প্রতিনিধিরা। তারা তাদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত আছেন। তার মতে বর্তমান এমপি বন্দরের এত উন্নয়ন করতেছে শুনি কিন্তু আমাদের এই রাস্তাটির দিকে উনার দৃষ্টি পড়তাছে কেন? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়াম্যানসহ এখানে তো প্রশাসেনর বন্দরের মাথারাই আছেন তাহলে এই সড়কটি তাদের কাছে এত অবহেলিত কেন? আপনারা ভাল করে সংবাদ প্রকাশ করেন, যাতে কর্তৃপক্ষেরে চোখে পড়ে, রাস্তাটির যেন একটি গতি হয়।


 
এ বিষয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা কল্যান্দী থেকে সাবদী এবং এবং ফরাজীকান্দা থেকে কলাগাছিয়ার যে রাস্তা দুটি করে গেছে তার অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের মাধ্যমে এই দুইটি রাস্তার আংশিক কাজের টেন্ডার হয়েছে। এই দুইটি রাস্তারই মেইন রোড থেকে ১ হাজার মিটার করে কাজের টেন্ডার হয়েছে আজ থেকে এক বছর আগে। করোনার কারনে এতদিন বন্ধ ছিল। এখন কাজ অনুমতির দেয়া হলেও যে ঠিকারদাররা কাজ নিয়েছে তারা কাজ শুরু করার আগে এলজিইডিতে যোগাযোগ করলে তখন তাদের ঐখানে ফান্ড ছিল না।

 

তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে ১৩ টি রাস্তার টেন্ডার হয়ে আছে কিন্তু ফান্ড নাই। ইতিমধ্যে রুস্তমপুর মিরকুন্ডি রাস্তার ৫০০ মিটার একটি কাজ ইতি মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে এই দুই রোডের মধ্যে কল্যান্দী সড়কের ১ হাজার মিটারের কাজ শুরু হয়েছে। বাকীটা বেহাল অবস্থাই থাকবে। বিল বাট্টা হওয়ার পর পরবর্তীতে আবার ১ হাজার মিটার হোক কিংবা ২ হাজার মিটার হোক আবার টেন্ডার হবে। এটা অনেক বড় রাস্তা আমরা এটার টোটাল স্টীমেট করে এলজিইডি’র হেড অফিসে ১৪ কোটি টাকার টেন্ডারের জন্য আমরা পাঠাইছি। এত বড় বাজেটের কারণে এখন পার্ট পার্ট করে এটা ৪টি ভাগে টেন্ডার দেয়া হবে। ফরাজীকান্দা থেকে কলাগাছিয়া রাস্তাটির কাজ এহসান চেয়ারম্যান (বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান) টেন্ডার নিয়েছেন এখনো তার কাজ ধরা হয়নি।
 

এই বিভাগের আরো খবর