শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন আজ

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২  

 

আজ ২৫ ডিসম্বর। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড়দিন আজ। নারায়ণগঞ্জে বিশ্বময় শান্তির প্রার্থনায় উদযাপিত হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব বড়দিন।

 

 

দিনটি উপলক্ষে শহরের দুটি গির্জা বর্ণিল আলোয় ভরে উঠেছে। গির্জাগুলোতে গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রিসহ নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জের খ্রিস্টান ধর্মানুসারীরা যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করছেন। বড় দিন উপলক্ষে বাড়িঘর নানা রঙের আলোয় সাজিয়েছেন তারা।

 

 

বড়দিন উপলক্ষে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) থেকেই আয়োজন করা হয়েছে প্রার্থনা সভা, কেক কাটা, কীর্তন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বঙ্গবন্ধু সড়কের সাধু পৌলের গির্জা ও সিরাজউদ্দৌলা সড়কের ব্যাপ্টিস্ট চার্চকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। তৈরি করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি।

 

 

নারায়ণগঞ্জের দুই গীর্জায় ঘুরতে আসে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের লোকজনও। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা জানান , বড়দিন নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের নয়। এটি একটি সার্বজনীন উৎসব। সব ধর্মের সব মানুষের জন্য। সব ধর্মের মানুষ এই উৎসবে শামিল হতে পারবে। আর এটাই উৎসবের সার্বজনীনতা।

 

 

আমাদের বড়দিনের প্রার্থনার মূল সুরও কিন্তু শান্তির আহ্বান। তারা জানান, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। দুই হাজারেরও বেশি বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট।

 

 

বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে কুমারীমাতা মেরির কোলে জন্ম হয়েছিলো যিশুর। এ দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটে।

 

 

বড়দিন উদযাপনের প্রস্তুতি দুই ধরনের— আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক। আধ্যাত্মিক হলো ঈশ্বরের কাছে নিজের পাপের অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়া। আর বাহ্যিক হলো সাজসজ্জার মাধ্যমে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠা।

 

 

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা আজ সারা দিন আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করবেন। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন।

 

 

ক্রিসমাসে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে ক্রিসমাস কেক, পিঠা এবং কুকিজ। খ্রিস্টানরা গির্জা পরিদর্শন করে এবং বড়দিনের কেক তৈরি করে। গির্জা আলো এবং ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো হয়। গির্জার গায়করা বাংলা ক্রিসমাস গান পরিবেশন করেন।

 

 

বড়দিনের সকালে গির্জায় বড়দিনের ভোজকে প্রীতিভোজ বলা হয় এবং কীর্তন বলা হয়। শহরের সাধু পৌলের গির্জার দায়িত্বরত একজন জানান, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস। ২৫শে ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মের দিনে এই উৎসবটি পালিত হয়।

 

 

কারণ খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্ট এদিনেই বেথলেহেম নগরীতে অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস যিশু খ্রিস্ট মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে এসেছিলেন সব পাপ থেকে মুক্তি দিতে আর মানবিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে। তার এই আগমনকে স্মরণ করে খ্রিস্টানরা শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বিশ্বব্যাপী তাকে স্মরণ করেন ও জাকজমকপূর্ণভাবে দিনটি উদযাপন করেন।

 

 


সাধু পৌলের গির্জায় ঘুরতে আসা একজন জানান, মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন। যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন, বিশ্বব্যাপী বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী। যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তার জন্মদিন।

 

 

সে কারণেই এটিকে বড়দিন হিসেবে বিবেচনা করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। এখানে ঘুরতে আসা আরেকজন ইতিহাসের ছাত্র বলেন, আঠার ও উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা এসে এ অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করে। যারা ধর্মটি গ্রহণ করেছেন তাদের কাছে এটি আরও মহিমান্বিত বিষয়। বাঙালি যারা খ্রিস্টান তাদের অধিকাংশই এই ধর্মে রুপান্তিরিত হয়েছেন।

 

 

তারা ভাবেন যিশু এমন একজন যিনি তাকে ধর্ম দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিনটাই তারা সব আবেগ দিয়ে পালন করেন। এ কারণেই দিনটি তাদের কাছে বড়দিন হিসেবে বিবেচিত। তিনি বলেন, বাঙালি সমাজে আঠার শতকের শেষের দিকে এই বড়দিন পালনের চর্চা শুরু হয়েছিলো এবং একই সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইউরোপীয়দের অনুকরণে জন্মদিন পালনও শুরু করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহর ছাড়া ফতুল্লার সস্তাপুর, পাগলা, দেলপাড়া, বন্দরের লক্ষ্মণখোলা, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড, সদর থানার গোগনগর এলাকায় খ্রিস্টানদের বসবাস। তাদের বেশির ভাগই চাকরিজীবী। বিশেষ করে গার্মেন্টস, বায়িং হাউস, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও বিউটি পার্লারে তারা কর্মরত।

 

 

নারায়ণগঞ্জে ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট ছাড়াও খ্রিস্টানদের কয়েকটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের লোকও রয়েছে। তাদের জন্য নারায়ণগঞ্জে কোনো চার্চ নেই। তারা বাসায় কিংবা অফিসে অথবা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ট্রি সাজান। তারা অস্থায়ী গির্জা তৈরি করে প্রার্থনা করেন।