শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টেস্ট বাণিজ্যে নাজেহাল রোগী

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# ঘাটে ঘাটে চিকিৎসা বাণিজ্য
# কারণ না জানিয়ে ধরিয়ে দেয়া হয় টেস্ট তালিকা
# হাসপাতাল ক্লিনিকের লাভের গুড় টেস্ট বাণিজ্য

সারাদেশে রাজনীতি ও অর্থনীতি দুই ধরনের অস্থিরতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশজুড়ে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ সংকট, ডলার বাজারের অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক রিভার্জ কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতিসহ বেশ কিছু সংকট চলছে বাংলাদেশে।

 

 

সংকট মোকাবিলায় সরকার লোডশেডিং দিচ্ছে এবং ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে।বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের শিল্পখাতে এই সংকটের ব্যপক প্রভাব পরেছে। এছাড়া দিন এনে দিনে খাওয়া আয় উপার্জন কারীদের মাঝেও অনেক প্রভাব পড়ছে।

 

 

এখন মানুষ তার পাচঁটি মৌলিক চাহিদা মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তার মাঝে চিকিৎসা নিয়ে নানা জটিলতায় পরে আছেন। বিশেষ করে চিকিৎসা সেক্টরে টেস্ট বাণিজ্য নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ তৈরী হয়ে আছে। টেস্ট বাণিজ্যের কারণে মানুষ এখন নাজেহাল হয়ে আছে।

 

 


জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ২শ’ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল রয়েছে। যাদের মূল বাণিজ্য হলো চিকিৎসার নামে টেস্ট বাণিজ্যের নামে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া। তার মাঝে ভুল চিকিৎসার অভিযোগের শেষ নেই।

 

 

কয়দিন পর পর অমুক ক্লিনিক তমুক ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে রোগী মারা গেছে। পরে তা টাকার বিনিময়ে সমাধানও হয়ে যায়। আবার কিছু ঘটনায় মামলাও হয়।

 

 

এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকার ৩শ’শয্যা হাসপাতাল এবং নগরীর নিতাইগঞ্জ জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের সামনে প্রতিনিয়ত এক শ্রেনির দালাল চক্র থাকেই। তারাই আবার বিভিন্ন রোগিদের ডেকে নিয়ে ক্লিনিক গুলোতে নিয়ে টেস্ট বাণিজ্য করেন। তারাও প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে কমিশন পেয়ে থাকেন।

 

 

বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে এই দালাল চক্রের হোতাদের গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ করেন। রোগীদের অভিযোগ শহরের সরকারি এই দুই হাসপতালের ডাক্তাররা রোগীদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে টেস্ট দিয়ে থাকেন।

 

 

তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীদের প্রয়োজনের থেকে বেশি টেস্ট দিয়ে থাকেন। এই ভাবে ডাক্তাররা টেস্ট বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা বাণিজ্য করে থাকেন।

 

 

এমনকি শহরের পাশের ইউনিয়ন গুলোর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র গুলোর ফ্যামিলি ভিজিটররা এখন ক্লিনিক গুলোর সাথে কমিশন ভিত্তিতে টেস্ট বানিজ্যে মেতে উঠেছেন। তাদের কাছে মানুষও অনেক অসহায় হয়ে আছে।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনায়েত ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতী মহিলারা চিকিৎসা নিতে যান। এখানকার দায়িত্বরত ফ্যামিলি ভিজিটর সালেহা রোগিদেরকে অনেক পরিমানে টেস্ট দিয়ে বলেন ফতুল্লার মোস্তাফিজ সেন্টারে তা পরীক্ষা করতে। কেননা মোস্তাফিজ সেন্টারের সাথে তার কমিশনের একটা চুক্তি রয়েছে।

 

 

অভিযোগ রয়েছে গার্মেন্টস কাজ করা অনেক গরিব মহিলারা এখানে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টেস্ট পরীক্ষার নামে তারা বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। আর এতে করে মানুষ তাদের টেস্ট বাণিজ্যের ফলে নাজেহাল হয়ে আছে। এছাড়া কি পরীক্ষা দিয়ে থাকে তারা ঠিকমত বলেও দেন না রোগীদের।

 

 

একাধিক সূত্র জানান, রোগীদের চিকিৎসা, ওষুধ বা অপারেশনের ব্যাপারে ঠিকমতো অবহিত করা হয় না। এমনকি চেম্বারে চিকিৎসকরাও রোগীদের কথা ভালোভাবে না শুনেই চিকিৎসাপত্র দেন বলে অভিযোগ আছে। ঢালাও টেস্টের খরচে বেড়ে যায় চিকিৎসার ব্যয়।

 

 

অনেক চিকিৎসক নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টেস্ট করাতে বলেন। কিংবা যেখানে তিনি রোগী দেখেন সেই ক্লিনিক থেকে টেস্ট করাতে বলেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল গুলোর আয়ের বড় উৎস এই টেস্ট।

 

 

এই টেস্ট বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও এখন পর্যন্ত হয়নি কোনো নীতিমালা। টেস্টের সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন দামের কোনো নির্ধারিত মানদণ্ড না থাকায় রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো দাম রাখছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো।

 

 

তাদের থেকে কবে নাগাত রক্ষা পাবে মানুষ নিজেও জানেন না। দেশের সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, সংকট, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা। বেসরকারিতে রয়েছে আস্থার সংকট, প্রতারণার ফাঁদ। উচ্চবিত্তের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাকে এসব কারণ আরও উসকে দিচ্ছে। ভালো সেবার আশায় মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষও ছুটছেন কোথাও ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায়নি।

 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান জানান, আসলে ডাক্তাররা রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। এখন কেউ যদি আর্থিক সুবিধার জন্য অতিরিক্ত টেস্ট দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা অনৈতিক হবে। এর কারো পক্ষে তা করা উচিৎ নয়।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর