শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দুই সাংসদের আসনে মাদকের ডিলার সবুজ বাহিনী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৪  

 

# অর্ধশত অপকর্মের মূলহোতা সবুজ অধরা
# বাবুরাইলে মাদক তৈরির কারখানায় অভিযানেও প্রকাশ্যে আসেনি তা নাম

 

নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত মাদকের ডিলার, কাশীপুর ও বাবুরাইলের বিভিন্ন অপকর্মের মূলহোতা সবুজ বাহিনী কিছু কথিত প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাদকের ডিলারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি, কাশীপুর ও বাবুরাইলের বিভিন্ন মিনি গার্মেন্টসগুলো থেকে জুট সন্ত্রাসী, চোরাই গ্যাস সিন্ডিকেট, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, জুয়ার আসর, মোবাইলের বিট জুয়া পরিচালনা, ভূমিদুস্যতা, কিশোরগ্যাং দ্বারা চুরি-ছেচঁড়ামী, এলাকার সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে উচ্চ মূল্যে ইট-বালু সিমেন্টসহ ফ্ল্যাট তৈরির সকল কার্যক্রম নিজ গ্যাংয়ের লোক দিয়ে পরিচালনা, ফিটিংবাজিসহ প্রায় অর্ধশত অপকর্ম পরিচালনা করছে এই সবুজ বাহিনীর সদস্যরা।

 

জানা গেছে, ফতুল্লা থানা ও সদর থানার কিছু কথিত প্রশাসনের কর্মকর্তাকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে দিব্বি মাদক কারবারি সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে রাজত্ব কায়েম করছে তারা। এদিকে মাদকের ডিলার সবুজ প্রকাশ্যে না এসে আত্মগোপনে থেকে তারই সহচর জোড়া খুন মামলার আসামী শহিদ ওরফে ভোগা শহিদ, মাদক সাপ্লাইকারি খান সুমন তিনি বিগত দিনে টানবাজারের চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস দারুণের লোক হিসেবে কাজ করলে ও বর্তমানে রয়েছেন সবুজের হয়ে মাদক সাপ্লাই দিয়ে আসছে, মাদকের ডিলার সবুজের বায়রা বরিশাইল্লা মামুন, পলাশসহ আরো বেশি কয়জন সবুজের মূল সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অপকর্ম প্রকাশ্যে পরিচালনা করে আসছেন।

 

এদিকে গত ২৭ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকাসহ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এলাকা থেকে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিদসূতাসহ নানা অপকর্ম নামক অপরাধ মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই সাথে মাদক কারবারিদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে ও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তারপরে ও শামীম ও সেলিম ওসমানের নির্বাচনী আসনে দেদারসে মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে ও পাড় পাচ্ছেন সবুজ বাহিনী। আর এই সকল অপকর্মকে পরিচালনা করতে এই সবুজ বাহিনীকে শেল্টার দিয়ে আসছেন স্থানীয় কাউন্সিলর, মেম্বারসহ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাবুরাইল বড় বাড়ির বদুর বড় ছেলে সবুজ মিয়া দীর্ঘ বছর যাবৎ এলাকায় মাদক কারবারি পরিচালনা করে আসছেন। বিগত দিনে ছোট আকারে লোক দিয়ে ব্যবসা করালেও বর্তমানে মাদকের ডিলার বনে গেছেন। তার মাদকদ্রব্য ইয়াবা শুধু বাবুরাইলেই সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পরেছে কাশীপুরের ৯টি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বক্তাবলী, সৈয়দপুর, আলীরটেক, বন্দর, সোনারগাঁ, দাউদকান্দিসহ আরো বেশি এলাকায় যার মেইন স্পট বাবুরাইলের তাঁতিপাড়া।

 

সবুজের নেতৃত্বে এখানে মাদকদ্রব্য ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, হিরোইন আসলে সবুজ কোথায় কত জিপার ইয়াবা, কোথায় কত পিছ ফেন্সিডিল, কোথায় কত কেজি গাঁজা দেওয়া হবে তা লিস্ট করে তারই সহযোগী শহিদ, মামুন, খান সুমন ও পলাশের হাতে তুলে দেয়। তারা রাতের অন্ধকারে এই মাদকদ্রব্য আমবাগান নতুন রোড কাঁচা গলি এলাকায় একটি ভাড়াকৃত গোডাউনে নিয়ে যায়।

 

এলাকাবাসী জানে এই গোডাউন ঝুট রাখার গোডাউন যেখানে সবুজের লোক মামুন, শহিদসহ হোসাইনগর এলাকা শিকদার বাপ্পি, কানা রবিন, মোল্লা রবিনসহ আরো অনেকেই সেই গোডাউনে বিভিন্ন এলাকার মিনি গার্মেন্টসগুলো থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফ্রেশ ঝুট ৫০/৭০ টাকার টা ৮ টাকা করে দিয়ে নিয়ে আসে। এর পর বিভিন্ন লোক দিয়ে সেখানে লিষ্ট অনুযায়ী প্যাকেট করে একটি ভ্যান গাড়িতে ৮ বস্তা ঝুট এর মধ্যে ১টিতে মাদকদ্রব্য নিয়ে সকল জায়গায় সাপ্লাই দেওয়া হয়। এদিকে মাদকের ডিলার সবুজ হওয়ায় এখানকার পুরো ভাগই পায় তিনি। কিন্তু তার শেল্টারে বাকি অপকর্মকৃত সকল সিন্ডিকেটের বিভিন্ন অপকর্ম থেকে সবুজ ভাগ পায় ২৫%।

 

তা ছাড়া ও খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বিগত দিনে এই সবুজের মাদক বিক্রি করতেন ইব্রাহিম ব্রিজের অনিক ও ফরিদ কিন্তু তারা নানা অপকর্মে প্রশাসনে চিহ্নিত হয়ে গেলে তিনি এখন শহিদ, খান সুমন, মামুন ও ওয়ান পিস ফয়সালের দ্বারাতে কাশীপুরে মাদক সাপ্লাই দেয়। আর ১ বা ২ বছর পর পর লোক পরিবর্তনের মাধ্যমে তার অস্তিত্ব ধরে রাখেন তিনি। এদিকে মাদকসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এলাকায় তারাই কিছু আত্মীয়র নামে কিনেছেন জমি, ঢাকা গুলশানে ও রয়েছে ও একটি ফ্লাট।

 

দীর্ঘদিন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সিসি ক্যামেরা দ্বারা যাকে ঘিরে অপকর্ম করলে ও অধরা সবুজ। কিন্তু তারই লোকদের দাবি, ভাইয়ের যে টাকা র‌্যাব, ডিবি, পুলিশ আসলে বান্ডিল দিলেই চলে যায়। আর কাশীপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর আত্মীয় হিসেবে পরিচিত আবার তার সকল কাজে সবুজের তেমনই ভূমিকা দেখা যায়।

 

গত ইউপি নির্বাচনে সুবজ প্রকাশ্যে কেন্দ্রে এসে আইয়ুব আলীর পক্ষে কাজ করার দৃশ্য ও দেখা গেছে। আবাা অপর দিকে সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিয়াদের সাথে ও রয়েছে এই মাদক ডিলার সবুজের ভালো সখ্যতা। আবার বিএনপি নেতা মজিদ ও হাসানের সাথে পূর্ব থেকেই এই সবুজের রয়েছে নানা সখ্যতা। অপর দিকে কাশীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছেলে নাজমুল হাসান সাজনের সাথে নানা যোগসাজশে থাকায় শক্তিশালী সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে এই সবুজ বাহিনী।

 

এর আগে গত ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জে শহরের ১ নং বাবুইল এলাকায় ইয়াবা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিলো বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও অনলাইন মিডিয়ায় নিউজ দেখা গিয়েছিলো। পরবর্তীতে পুলিশ সেখানে তৈরি করা বেশ কিছু ইয়াবা এবং ইয়াবা তৈরির বিপুল পরিমাণ উপকরণ ও মেশিন জব্দ এবং তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। জানা গিয়েছিলো গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ১ নং বাবুরাইল এলাকায় আমজাদ হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায়।

 

এ সময় দলটি ওই বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষে ইয়াবা তৈরির কারখানার সন্ধান পায়। ওই কক্ষ থেকে ২৫০টি ইয়াবা ও ইয়াবা তৈরির বিপুল পরিমাণ উপকরণ এবং যন্ত্রপাতিসহ ওই তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ১ নং বাবুরাইল এলাকায় কারখানা গড়ে তোলা বাড়িটির মালিক আমজাদ হোসেন এবং তাঁর দুই সহযোগী ফতুল্লা থানাধীন তল্লা সবুজবাগ এলাকার সামিউল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জের রাজেশ চৌধুরী শ্যাম।

 

তাঁরা সংঘবদ্ধ ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। এদিকে নানা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কারখানার মূলহোতা হিসেবে ছিলেন এই মাদকের ডিলার সবুজ কিন্তু তার না প্রকাশ্যে না আসায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর