শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দেওভোগে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ শহরের আখড়া, বেপারীপাড়া, পানির ট্যাংকি, ভূয়ারবাগ, নাগবাড়ী ও মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত বৃহত্তর দেওভোগ। জানা গেছে, ১৯৯০ সনের পর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতীক দলের ক্যাডারদের কাছে জিম্মী ছিলো বৃহত্তর দেওভোগ এলাকা। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তখন ক্যাডাররা মূলত দেওভোগ জুঁড়ে জমি দখল, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াত। 

 

তবে ২০০৫ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে দেওভোগে ক্যাডারদের বিচরন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অপকর্ম কমতে থাকে। তাই এরপর বেশ কয়েক বছর শান্তিতেই ছিলো এই সুবিশাল এলাকার সাধারণ মানুষ। তবে সূত্র জানায়, সম্প্রিতি আবারো পুরনো রূপে ফিরছে দেওভোগের বিভিন্ন এলাকা। এখানে রাজনৈতীক দলের ক্যাডারদের পরিবর্তে এখন কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এতে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও খুনের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো দিন দিন বাড়তে থাকায় অশান্ত হয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ। সবশেষ গত ১৭ জুলাই রাতে পশ্চিম দেওভোগ হাজীরবাড়ি এলাকায় মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার ইমন নামে এক যুবকে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং’র সদস্যদের হাতে খুন হতে হয়েছে। এছাড়া, ইমনকে যেই কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা খুন করেছে, এরা ইমনের আগেও আরো একজনকে মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

 

 সূত্র জানায়, দেওভোগের বিভিন্ন এলাকায় এই মূহুর্তে ১৫ টিরও বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। সেইসঙ্গে এদের সদস্য সংখ্যা প্রায় দুইশ’র কাছাকাছি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিজানে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং’র সক্রিয় সদস্যদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু এই কিশোর গ্যাং’র মূল পৃষ্ঠপোষকরা আইনের আওতায় না আসায়, এই সমাজিক সমস্যাটি দিনশেষে সমস্যাই থেকে যাচ্ছে। দেওভোগ বেপাড়ীপাড়া এলকার বাসীন্দা আকরাম মিয়া বলেন, গত ১ মাস আগে আমি গভীর রাতে শহর থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন আনুমানিক রাত ২টা বাজে। দুইনং রেলগেট থেকে রিক্সা দিয়ে যখন আখড়ার সামনে এসেছি, তখনই দেখি কিশোর গ্যাং’র দুই গ্রুপের সংঘর্ষ! আর এ সময় যেই যিনিসটা দেখে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছি সেটা হচ্ছে, সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় সকলের হাতেই লাঠিসোটা ও বিভিন্ন ধাতব অস্ত্র ছিলো। তাই আমি মনে করি দ্রুতই এসব কিশোর গ্যাং-ট্যাং সমাজ থেকে ছাটাই করতে হবে। 

 

আর এর জন্য আমি স্থানীয় প্রশাসনকে আন্তরিক ভাবে আহবান জানাচ্ছি। কিশোর গ্যাং’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আমির নামে দেওভোগ মাদ্রাসা এলাকার এক হোসিয়ারি ব্যবসায়ী বলেন, এসব কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা এখন তুচ্ছ ঘটনা নিয়েই এলাকায় বড় বড় দূর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। গত পরশুও আমাদের এক হোসিয়ারী শ্রমিককে খুন করেছে এরা। তাই দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে একটি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন নইলে পরবর্তিতে প্রশাসনের পক্ষ্যেও এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবেনা। আর জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা ও সদর মডেল থানার দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) রকিবুজ্জামান ও শাহজ্জামান বলেন, আমরা এই কিশোর গ্যাং দমনে কাজ করে যাচ্ছি। আর এই গ্যাং’র সদস্য ও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। তাই আশা করি খুব দ্রুতই এই সমস্যাটি আমরা সমাধান করতে পারবো। 
 

এই বিভাগের আরো খবর