মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

‘ধর্ষিত-মৃত’ কিশোরী জিসামনির ফিরে আসা : আদালতে সিআইডির চার্জশীট

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২১  

নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণের পর হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি  দেয়ার পর স্কুলছাত্রীকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনায়  প্রধান আসামী মো. আব্দুল্লাহসহ মোট ৩ জনকে আসামী করে আদালতে প্রতিবেদন (চার্জশিট) দিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

 

এদিকে ঘটনার সাথে মাঝি খলিলুর রহমান খলিলের বিরুদ্ধে তদন্তে কোন অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছে সিআইডি পুলিশ।

 

সোমবার (২২ মার্চ) রাতে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


তিনি জানান,  গত ১৬ মার্চ আদালতে নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট জমা দেন অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুনানীর পরবর্তী তারিখ আগামী ২৯ এপ্রিল ধার্য করা হয়েছে।


অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নারায়ণগঞ্জ জেলার এএসপি হারুণ অর রশীদ  এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান,  গত সপ্তাহে কিশোরীকে ধর্ষণের পর অপহরণের মামলায় তিনজনকে আসামী করে চার্জশীট জমা দেয়া হয়েছে।  মামলা তদন্তে ওই কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণের বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে।  এ কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহসহ মামলায় তিনজনকে আসামী করা হয়েছে।

 

মামলায় আসামীরা হলেন, বন্দর উপজেলার বুরন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে  মো. আব্দুল্লাহ (২২), বুরন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে ও আব্দুল্লাহ্’র বন্ধু রকিব (১৯) এবং  ওই কিশোরীর কথিত স্বামী ইকবাল পন্ডিত (৩৬)।


আদালতে দেয়া চার্জশীট সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্তে ওই  কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণের বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট, ভুক্তভোগী ওই কিশোরী ও আসামীদের সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদসহ সকল সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে আব্দুল্লাহ্, রকিব ও ইকবাল পন্ডিতসহ  তিনজন আসামীর সম্পৃক্ততা পাওয়া  গেছে। তবে হত্যাকান্ডের বিষয়টি প্রমানিত হয় নি।

 

এছাড়া এ ঘটনার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায়  মাঝি খলিলুর রহমানকে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য আবেদন করা  হয়েছে।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নারায়ণগঞ্জ জেলার ইন্সপেক্টর  আতাউর রহমান জানান, গত ৪ জুলাই আব্দুল্লাহ্ ওই কিশোরীকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি নির্জন মাঠে ধর্ষণের পর ফেলে চলে যায়। পরদিন সকালে ওই কিশোরী অসুস্থ অবস্থায় অটোরিকশা চালক ইকবাল পন্ডিতের কাছে সহযোগিতা চায় বাসা পৌঁছে দেয়ার জন্য। কিন্তু ইকবাল পন্ডিত  সেখান থেকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখে এবং যৌন নির্যাতন চালায়। এ মামলায় আব্দুল্লাহ্র বন্ধু ও সহযোগী রকিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে খলিল মাঝির এ মামলায় কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় নি।


আসামীদের ধর্ষণের পর হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত তদন্ত কার্যক্রমকে বিভ্রান্ত করা জন্য তারা এ ছলনার আশ্রয় নেয়।

 

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে ৪ জুলাই নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জে শহরের এক কিশোরী। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা বাবা ১৭ জুলাই সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপর  জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ্, ইজিবাইক চালক রাকিব ও নৌকার মাঝি খলিল আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তারা।  পরে ৬ আগস্ট ওই কিশোরীর  বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করে।


 
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল মামুন তিনজনকে রিমান্ডে নিলে গত ৯ আগস্ট জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানায়, পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে।

 

এদিকে, নিখোঁজের ৫১ দিন পর ২৩ আগস্ট মোবাইল ফোনে টাকা চেয়ে মায়ের কাছে ফোন করে ওই কিশোরী। খবর পেয়ে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকা থেকে স্বামীসহ ওই কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আদালতে ২২ ধারা জবানবন্দিতে কিশোরী বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন বন্দরের স্বামী সাথে বসবাস করে আসছিলো বলে জানায়।

 

এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুনের আসামির পরিবারের কাছ থেকে নির্যাতন না করার কথা বলে অর্থ আদায় ও তিন আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে প্রাথমিক তদন্তে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুনের অসততা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও এ মামলার তদন্ত থেকে সরিয়ে  দেয়া হয়।


 
পরে ২৫ আগস্ট জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয় । আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে জানায়, তাদেরকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে,মারধর ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে পুলিশ আদালতে ওই ধরণের ধর্ষণের পর হত্যাকান্ডের জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে দেয়া হয়।

 

বর্তমানে আবদুল্লাহ্ ও রকিব জামিনে রয়েছে ও কিশোরীর কথিত স্বামী ইকবাল পন্ডিত কারাগারে।  মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরির্দশক (বরখাস্ত) শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত মামলা হয়েছে।
 

এই বিভাগের আরো খবর