শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বৃষ্টির পানি কালো কেন? 

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২১  

# জেলায় ৩২২টি কারখানায় রয়েছে ইটিপি প্ল্যান্ট


# তালিকাভূক্ত ১০৫ প্রতিষ্ঠান এখনো ইটিপি স্থাপন করেনি


# বিষাক্ত তরল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ফেলা হচ্ছে খালে


# আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে-পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক

 

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : গেল কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে, বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও এসব জলাবদ্ধতার পানির রং কোথাও কালো আবার কোথাও বিভিন্ন রং ধারণ করেছে। মূলত, বৃষ্টির জলাবদ্ধতার সাথে ডাইং কারখানার কেমিক্যালযুক্ত পানির সংমিশ্রনের কারণেই ডাইংয়ের পানির রংয়ে রূপ নিয়েছে জলাবদ্ধতা। বিষাক্ত ও দূষিত ওই জলাবদ্ধতার মধ্যেই দিনাতিপাত করছে ফতুল্লার লাখো মানুষ।

 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দূষিত তরল বর্জ্যকে পরিবেশ উপযোগী করতে কারখানাগুলোতে ‘ইফ্লিুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ (ইটিপি) অর্থাৎ তরলবর্জ্য পরিশোধন করার জন্য শোধনাগার ব্যবহার আবশ্যকীয় হলেও তা মানছেন না নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা। অনেকেই ইটিপি স্থাপন করেননি, আবার কেউ কেউ করলেও ব্যয় কমাতে তা বন্ধ রাখছেন। ফলে পরিশোধন ছাড়াই ড্রেনের মাধ্যমে কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে আশপাশের খাল, নদী এমনকি রাস্তা ঘাটেও।


গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে ফতুল্লার লালপুর, টাগারপাড়, রামারবাগ ও লামাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, ড্রেন উপচে সড়ক তলিয়ে আছে ডাইং কারখানার কেমিক্যাল যুক্ত বিষাক্ত তরল বর্জ্য। এসব বিষাক্ত পানি মাড়িয়েই চলাচল করছে লাখো মানুষ। এতে পানিবাহি নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়া ফেলার কারণে ফতুল্লার প্রতিটি খালের পানির রঙ এখন ঘন কালোতে রূপ নিয়েছে। তাছাড়া, খাল বা ড্রেন হয়ে ডাইং কারখানার এই দূষিত পানি নদীতে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদী শুস্ক মৌসুমে থাকে মৃত প্রায়।


এদিকে, নারায়ণগঞ্জে ইটিপি প্ল্যান্ট প্রয়োজন এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাজার ছাড়ালেও পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকায় আছে মাত্র ৪২৭টি কারখানার তালিকা। এর মধ্যে ৩২২টি প্রতিষ্ঠানে ইটিপি থাকলেও ১০৫টি প্রতিষ্ঠানে এখনো ইটিপি স্থাপন করা হয়নি। তবে, ১০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টি প্রতিষ্ঠান ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সূত্র।

 


এদিকে, ইটিপি পরিচালনা ব্যয়বহুল হওয়ায় ৩২২টি প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানই ইটিপি ব্যবহার করছেন না। গত বুধবার ফতুল্লা বাজার এলাকায় অবস্থিত আজাদ ডাইংয়ে গিয়ে এমনটাই দেখা যায়। কারখানার ভেতরে প্রবেশের পর মুরাদ নামে এক ব্যক্তি জানান, তাদের ইটিপি প্লান্ট ছাদে করা হয়েছে। তা চালু আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘যেই টেকনিশিয়ান ইটিপি চালায়, সে বাইরে আছে। ছাদের গেট তালা লাগানো, চাবিও নেই।’ অতঃপর ওই প্রতিষ্ঠানের একজন স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের ইটিপি বন্ধ রয়েছে। পানি পরিশোধন ছাড়াই তা নদীতে ফালানো হয়ে থাকে।
এমন উদাহরণ নেহাত কম না হলেও এসকল প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার নজির খুব একটা নেই।

 


এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘পুরো জেলায় আমাদের মাত্র ৩জন অফিসার। এই তিন অফিসারের অফিসিয়াল কাজের পর পরিবেশ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়েও কাজ করতে হয়। তাছাড়া, আমিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। এরপর হেড অফিস থেকে বলা হয়েছে যে, এই সময়টাতে বাইরে কাজের বিষয়ে সতর্ক থাকতে। তাই লোকবল সংকট ও করোনা পরিস্থিতির কারণে মনিটরিং কার্যক্রম করা যাচ্ছে না।

 

তবে, আমরা একটি সিডিউল করেছি, প্রতিমাসে ১০টি করে প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চালাবো। এতে করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মালিকরা অভিযানের ভয়ে হলেও তাদের ইটিপি প্লান্ট চালু রাখবে। আর অভিযানে যদি কোন প্রতিষ্ঠানের ইটিপি বন্ধ পাই বা ইটিপি না থাকে, তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘নারায়ণগঞ্জে ৩২২টি প্রতিষ্ঠানে ইটিপি আছে। ১০৫টি প্রতিষ্ঠানে নেই এবং এর মধ্যে ১৯টি প্রতিষ্ঠান ইটিপি স্থাপনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে, এই তথ্য হালনাগাদ করতে হবে, মনিটরিং করতে হবে। আমার ধারণা, নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে ইটিপি প্রয়োজন এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো বেশি হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’   


 

এই বিভাগের আরো খবর