শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শহীদ মিনারের চতুর্দিক হকারদের দখলে

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# বিজয়ের মাসে চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভের চতুর্দিকে হকারমুক্তের দাবি

নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসন থেকে কিছুদিন পরপরই অভিযান চালাতে দেখা যায়। অভিযানে ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা হলেও কিছুদিন পর আবার দেখা যায় পূর্বের চিত্র। কিছুদিন পরই অবৈধ শক্তির ছত্রছায়ায় ফুটপাতগুলো আবার দখল হয়ে যায়।

 

 

এমন চিত্র দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, ভাষা সৈনিক সড়ক সহ অন্যান্য প্রধান সড়কে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত চাষাড়া মোড়ের শহীদ মিনারকে ঘিরে ফুটপাত দখলের চিত্র বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব ফুটপাত দখল করে ব্যবসায়ীরা করছেন রমরমা ব্যবসা।

 

 

যার ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলের স্থানে অস্থায়ী বিভিন্ন রকমের দোকানগুলো এমন ভাবে স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে, যে এসব উচ্ছেদে প্রশাসনকেও অনেক সময় বিভিন্ন জটিলতায় পরতে হয়। যার কারনে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা দিনে দিনে কঠিন হয়ে পরছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের এসব ফুটপাত দখলের পিছনে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী মহল জড়িত বলে সূত্রে জানা গেছে। আজ ৩০ নভেম্বর (বুধবার) নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা গেছে, এর আশে পাশের ফুটপাতগুলো দখলের কারনে চলাচলের জন্য পথচারীরা ব্যবহার করছেন প্রধান সড়ক।

 

 

যদিও ফুটপাত তৈরী করা হয়েছে সাধারন মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য। কিস্তু সরেজমিনে গেলে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। যার কারনে ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে সাধারন মানুষদের। বিশেষ করে নারীদের পরতে হয় বিপাকে। তারা সইতেও পারে না আবার কাউকে বলতেও পারে না।

 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহীদ মিনারের সামনের প্রধান সড়ক এবং ভাষা সৈনিক সড়কের ফুটপাত দখল করার পর তিন ভাগের এক ভাগ সড়ক দখল হয়ে গেছে। সূত্রে জানা গেছে, দখলকারীরা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বিধায় বিশেষ সুবিধায় প্রশাসনও সবসময় নিরবতা পালন করে।

 

 

শহীদ মিনারের সামনে একটি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডও আছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, এখান থেকে সিএনজিতে করে নির্দিষ্ট টাকার চুক্তির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যায়। আর অবৈধ স্ট্যান্ড আর হকারদের কারনে বর্তমান এই গুরুতপূর্ণ সড়কটি হয়েছে অর্ধেক। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অবৈধ গাড়ি পার্কিং।

 

 

পথচারী মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, সড়ক আর ফুটপাত দখলের এবং অবৈধ গাড়ি পার্কিং-এর কারনে এখন শহরের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা দিন দিন দুর্বিষহ হচ্ছে। এত কিছুর পরও প্রশাসনের কোন স্থায়ী পদক্ষেপ নাই।

 

 

তিনি আরোও বলেন, দখলকারীরা সরকারের কোন বিধি বিধান না মেনে কোন রকমের আইন কানুনকে তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ফুটপাতে অবৈধভাবে রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করছে।

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, নারায়ণগঞ্জের ফুটপাত দখলকারীরা বর্তমানে এতটাই প্রভাবশালী যে তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। এদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যাবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন কারনে অপারগতা প্রকাশ করেন। যা সাধারণ জনগনের ভোগান্তির মাত্রা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

 

 

তিনি আরোও বলেন, সড়কে পথচারীর অধিকার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আমাদের এই শহরে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। তিনি দৈনিক যুগের চিন্তার মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অবিলম্বে ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করা হোক।

 

 

পথচারী মোঃ শিহাব বলেন, ফুটপাত হচ্ছে সাধারন মানুষদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য। কিন্তু প্রভাবশালীদের দখলের কারনে ফুটপাতের এই সুবিধা পাচ্ছেনা পথচারীরা। তাছাড়া ফুটপাত মেরামতও করা হয় না দেখাশোনাও করা হয় না। যার কারনে আমাদের প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। আমাদের এই দশা দেখার কেউ নাই।

 

 

সরকারি তোরারাম কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী অমিত হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই শহীদ মিনারের ফুটপাথ দখল করে হকাররা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফুটপাত হলো পায়ে চলার পথ। অথচ এই পথের অনেকটাই রয়েছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের দখলে। এমনিতেই গাড়ির চাপ তার ওপর ফুটপাত দখল।

 

 

এই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ভিত্তিহীন অভিযানে কোন কাজ হচ্ছে না। তাই ঝুঁকি নিয়েই রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের। এখানকার এই ফুটপাথ দখল করে গড়ে উঠেছে, চায়ের দোকান, ফুচকা হাউজ, চটপটির দোকান এবং চাপের দোকানসহ বিভিন্ন রকমের হকার ব্যবসা।

 

 

তিনি আরোও বলেন, শুধুমাত্র লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ফুটপাত দখলমুক্ত করার পর পুনরায় যাতে দখল না হয় সেজন্য সবইকে সচেতন হতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ আইন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এম আর ইয়াকুব বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাত দখল করে চলছে রমরমা বাণিজ্য। শুধু হকার নয়, যত্রতত্র অবৈধ গাড়ি পার্কিং-এর কারনেও দখলে রয়েছে এই শহরের ফুটপাত। ফলে রাস্তায় চলতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন পথচারীরা। শহরের ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর