শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শামীম ওসমান-লিপি ওসমানের ছবি ব্যবহার করে চাঁদাবাজি

বটুক লাল ভট্ট

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২২  


# চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারলে শৃঙ্খলা আসবে : এড. মাসুম
# থানায় জিডি করা হবে : শাহ নিজাম

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ কে এম শামীম ওসমান ও তার সহধর্মিনী লিপি ওসমান এর ছবি ব্যাবহার করে ষ্টিকার ছাপিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে টেলিগ্রাফ নিউজ২৪.কম এর সম্পাদক জনাব আরিফ সাহেব এর বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জ শহরে বর্তমানে বেশ কয়েকটি স্পটে ইজিবাইক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও ব্যাতিক্রম ধরা পরে টেলিগ্রাফ নিউজ২৪.কম নামক একটি অনলাইন প্রোর্টাল এর ষ্টিকার সম্বলীত ইজিবাইক এর ক্ষেত্রে । এরা কোনোরকম বাধা ছাড়াই প্রবেশ নিষিদ্ধ স্পটে হরহামেশাই বিচরণ করছে।


আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে কোনো রকম বাধা ছাড়াই এরা চষে বেড়াচ্ছে কালির বাজার, ২নং গেইট, চাষাঢ়া, উকিলপাড়া সহ বেশ কয়েকটি প্রবেশ নিষিদ্ধ এলাকায়। গত কয়েকদিনের যুগের চিন্তা প্রতিনিধির অনুসন্ধানে দেখা যায় সম্পাদক আরিফ সাহেব এর টেলিগ্রাফ নিউজ২৪.কম নামক একটি অনলাইন নিউজপেপার শামীম ওসমান এবং তার সহধর্মিনী লিপি ওসমানের ছবি ব্যবহার করে ষ্টিকার বানিয়ে ইজিবাইকে তা বিতরণ করে মাসে ১৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। 


এ ব্যাপারে তারই ষ্টিকার সম্বলিত একটি ইজিবাইক চালকের সাথে কথা বললে তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, আমি আরিফ সাংবাদিক এর ষ্টিকার নিয়েছি মাসখানেক হলো। এর জন্য প্রথমে আমাকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। তারপর আমি ষ্টিকার পেয়েছি। আগে শহরে প্রবেশ করলে গাড়ি আটকে দিতো। কিন্তু এ ষ্টিকার লাগানোর পর আর কোনো জামেলায় পড়তে হয়নি। আমি প্রতি মাসে আরিফ সাহেব কে ১৫০০ টাকা করে পরিশোধ করি এ ষ্টিকার বাবদ। আমি যদি ১০ জন কে এই ষ্টিকার বিতরণ করতে পারি তাহলে আমাকে আর ষ্টিকার বাবদ আর কোনো টাকা পরিশোধ করতে হয়না।  


সাংবাদিক আরিফ এর টেলিগ্রাফ নিউজ ২৪.কম এর ষ্টিকারধারী আরেকজন ইজিবাইক চালক জানান, আমাদের ষ্টিকার এর মালিক আরিফ খুব প্রভাবশালী। অন্য যেকোনো ষ্টিকার এর চেয়ে এই ষ্টিকার এর প্রভাব বেশি। কেউ আটকায় না এই ষ্টিকার দেখলে। আমরা প্রতি মাসে ১৫০০ টাকার বিনিময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে গাড়ি চালাতে পারি।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেলিগ্রাফ নিউজ২৪.কম এর সম্পাদক আরিফ জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে ষ্টিকার ব্যাবহার করে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে তা সম্পর্কে আমি কিছ¦ুই জানিনা। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাবো।’


এ ব্যাপারে প্রেস ক্লাব এর সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, ‘নারায়ণগঞ্জে যানজটের অন্যতম কারণ শহরে ইজিবাইক এর প্রবেশ। অথচ কিছু নামধারী সাংবাদিক তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে ষ্টিকার বিলিয়ে যে চাঁদাবাজি করছে তা একেবারেই সঠিক নয়। 


এছাড়াও অনেকে শামীম ওসমানের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এদের কারণে ট্রাফিকরা সঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এসব সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি অবিলম্বে বন্ধ করে ট্রাফিকদের সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে সহায়তা করতে পারলে নারায়ণগঞ্জে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’


নারায়ণগঞ্জের এমন প্রভাবশালী, সম্মানীয় একজন নেতার ছবি ব্যবহার করে এমন চাঁদাবাজির ঘটনা তিনি কিভাবে দেখছেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ‘যুগের চিন্তা’কে জানান, ‘এটা অবশ্যই সঠিক নয়। এবং এ ব্যাপারে আমি অবগত নয়। এটা নিয়ে সঠিক তথ্য পেলে থানায় জিডি করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


প্রসঙ্গত, শহরে যেখানে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত গাড়ি প্রবেশ সম্পূর্ন নিষিদ্ধ সেখানে কিছু নামধারী সাংবাদিক তাদের নাম,পরিচয় ব্যবহার করে ষ্টিকার বিলিয়ে পরিবহনে প্রকাশ্য চাঁদাবাজির মহৌৎসবে লিপ্ত আছে। আর এসব নামধারী অপসাংবাদিকদের ষ্টিকারযুক্ত গাড়ি বিনা বাধায় প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ জায়গায় চলাচল করছে।


গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে শহরের ২ নং গেইট, চাষাড়া, মেট্রোহল, কালির বাজার, ডিআইটি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় সম্পাদক জাকির সাহেব এর “দৈনিক জনতা”, সম্পাদক আরিফ সাহেব এর “টেলিগ্রাফ নিউজ ২৪.কম”, সম্পাদক দিপু সাহেব এর “newssadhinbangla.com", সম্পাদক আব্দুল রিয়েল রাজা সাহেবের “দৈনিক নগর সংবাদ”, সম্পাদক দেলোয়ার সাহেব এর “নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ”, এর ষ্টিকার সম্বলিত কয়েকশত ইজিবাইক। 


এছাড়াও প্রেস মিডিয়া the dhaka bd এর মতো আরোও বেশ কিছু  ষ্টিকারযুক্ত গাড়ি চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, নামধারী ঐ সাংবাদিকরা প্রতিটি ষ্টিকার এর জন্য ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে নিচ্ছে। যদি কোনো চালক সাংবাদিক এর  ১০টি ষ্টিকার বিতরণে সক্ষম হয় তাহলে উক্ত চালক এর জন্য তার কার্ড এর বাবদ মাসিক ফি নেয়া হয় না। 


অর্থাৎ ১০ টি কার্ড বিতরণে সক্ষম হলে ১ টি কার্ড এর টাকা সম্পূর্ণ মওকুফ হয়ে যায়। এভাবে তারা চাঁদাবাজিকে আরোও ব্যাপকভাবে প্রসারের পরিকল্পনা চালাচ্ছে। উপরোক্ত সব সাংবাদিক প্রায় একইভাবে পরিবহনে চাঁদাবাজি চালাচ্ছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক এর কার্ডধারী ইজিবাইক চালক যুগের চিন্তাকে জানান, আমি যেই সাংবাদিক এর কার্ড নিয়েছি সে ১০০ এর বেশি ইজিবাইকে এভাবে কার্ড দিয়ে মাসে ১৫০০ টাকা  করে নিচ্ছেন। এই কার্ড দেখলে ট্রাফিক পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ  শহরে গাড়ি প্রবেশে কোনো বাধা দেয় না। 


যদি কোনো সমস্যায় পড়ি সাংবাদিক ফোন দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তিনি আরো জানায়, খুব পাওয়ারফুল আমার সাংবাদিক। এই ষ্টিকার দেখলে  কোনো ট্রাফিক বাধা দেয় না। এতে করে জনমনে প্রশ্ন জাগে তবে কি যারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত তারাও এসব চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত? তারা কি ঐসব অপসাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনো রকম সুবিধে নিয়ে এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।


এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (এডমিন) মো. করিম ‘যুগের চিন্তা’কে জানান, ‘সাংবাদিক ষ্টিকারযুক্ত কার্ড দিয়ে চাঁদাবাজি আগে আরোও ব্যাপক আকারে ছিল। আমি কয়েকমাস দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এই সংখ্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও অনেকটাই কমে গিয়েছে। আগে চাষাড়া মোড়,  মেট্রোহলে কোনো চেকপোস্ট ছিলো না। এখন সেখানে চেক পোস্ট হয়েছে। 


আমরা এখন এসব ইজিবাইক শহরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রনের জন্য অনেক বেশি তৎপর। মাঝে মাঝে এসব ষ্টিকার যুক্ত গাড়ি ধরলে সম্পাদক ফোন দেয়। তখন আমরা তাদের সহনশীলতা দেখিয়ে ছেড়ে দেই। না ছাড়লে তারা এসে এটা সেটা নিয়ে প্রশ্ন করে আমাদের কাজে বাধাগ্রস্থ করে। কিন্তু বারবার আমরা ছেড়ে দিবোনা। আমরা এগুলো কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রন করবো। 


একটা মহল চায় না আমাদের চেকপোস্ট গুলো থাকুক। কিন্তু আমরা চেকপোস্ট রেখেছি। আমরা সাংবাদিকদের এসব পরিবহন চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন করতে বদ্ধ পরিকর। তিনি আরোও বলেন আমাদের কোনো কমিউনিটি পুলিশ যদি এসব কর্মকান্ডে জড়িত থাকে আমরা সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। জেসি / এনএইচ
 

এই বিভাগের আরো খবর