শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

পাঁচ বছর যাবৎ পূর্ণাঙ্গ হয়নি জেলা যুবদল

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২৪  

 

# দুই দফায় নেতা পরিবর্তনেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি
# সাদেক-রনি-সজিবের দ্বন্দ্বের বেড়াজালে আটকা যুবদল

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলে পাঁচ বছরে দুই দফা কমিটি গঠন করলেও রাজপথের যোগ্য নেতাদের রাজনৈতিক পরিচয় দিতে ব্যর্থতার প্রমান দিয়েছে কমিটিতে স্থান পাওয়া জেলা যুবদলের নেতারা। এদিকে যোগ্যতার মাপকাঠিতে সমন্বয় করে জেলা যুবদলের তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করলে। নেতারা কেউ কাউকে মূল্যায়ন করে না সকলেই আন্তকোন্দলে জড়িয়ে আলাদা আলাদাভাবে জেলা যুবদলের ব্যানারে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকে। তা ছাড়া কমিটি গঠনের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।

 

সংগঠনটির পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গত জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এক লাঁফে জেলা বিএনপির পদে আসতে বিভিন্ন ‘কূট-কৌশল’ শুরু করেছিলেন যাকে ঘিরে ওই সময় আহ্বায়কের শূন্যতায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এবারও বিগত কমিটির নেতাদের মতোই ‘কূট-কৌশল’ গ্রহণ করছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। বর্তমান কমিটির নেতারাও আগের মতো নানা অজুহাতে এটিকে পূর্ণাঙ্গ না করে মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় আছেন সেই পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির তিন নেতা একত্রিত হচ্ছে না সকলেই আলাদা আলাদা বলয়ের মাধ্যমেই আন্তকোন্দলে একত্রিত না হয়ে আলাদা আলাদাভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

 

জানা গেছে, বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের ঘনিষ্ঠ, অপরদিকে সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও আজাদের বিপক্ষের মাহমুদুর রহমান সুমনের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন ও কমিটিতে স্থান পাওয়া সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজিব বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং সোনারগাঁয়ের বিষফোঁড়া খ্যাত নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের ছেলে।

 

যাকে ঘিরে তারা তিনজন তিনভাগে বিভক্ত হয়ে আছেন। যাকে ঘিরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরছেন দলের নেতাকর্মীরা। অপর দিকে বিগত দিনে শহিদুল ইসলাম টিটু ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বাধীন যে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছিলো সেগুলো দিয়েই এখনো চলছে ইউনিট কমিটির কার্যক্রম দ্রুত এই কমিটিগুলো ও ভেঙ্গে নয়া ইউনিট কমিটি না করলে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল হবে না জেলা যুবদল এমনটাই দাবি রয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।

 

সূত্র বলছে, জেলা যুবদলের আওতায় মূল হিসেবে রয়েছে, ফতুল্লা, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ৪ টি থানা। যার মধ্যে একটির মধ্যে কমিটি দেওয়া হয়নি যোগ্যদের যাচাই করে। এদের দিয়েই দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে যুবদলের থানা কমিটিগুলো যা শীঘ্রই পরিবর্তন হাওয়ার আশায় রয়েছে। তা ছাড়াও বাকি আরো অনেকগুলো ইউনিটগুলোতে দীর্ঘদিন কোনো কমিটি নেই। জেলা যুবদলের কমিটিতে বারবার রদবদল হলেও এসব ইউনিট কমিটির পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মনের আশা আর পূরণ হয় না।

 

জানা যায়, এর আগে ২০১২ সালে মোশারফ হোসেনকে সভাপতি ও শাহ আলম মুকুলকে সাধারণ করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট জেলা যুবদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় যুবদল। কিন্তু দলীয় ও নিজের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠন করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের (১৯ অক্টোবর) শহিদুল ইসলাম টিটুকে সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট জেলা যুবদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।

 

কমিটি গঠনের ১ বছরের মাথায় ২০১৯ সালের (২৩ মার্চ) শহিদুল ইসলাম টিটুকে সভাপতি এবং মো. গোলাম ফারুক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পুর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। দলীয় সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী গত ২০২২ সালের ১৬ মার্চ ঘোষনা করা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি। গোলাম ফারুক খোকনকে আহ্বায়ক আর মশিউর রহমান রনিকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় ভিপি কবিরকে।

 

এই কমিটি গঠনের পর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি কবির দেশের বাহিরে পারি জমায়। যার কারণে দুই নেতাই চলতে থাকে জেলা যুবদলের কমিটি। কিন্তু আহ্বায়ক মূল দলে যেতে লবিং করায় জেলা যুবদলে এক হয়ে পরেছিলেন মশিউর রহমান রনি। যার কারণে ইউনিটসহ কমিটি পূর্ণাঙ্গ দিশেহারার ছায়া দেখা যায়। পরবর্তীতে কমিটির ছয় মাস পর ১৫ নভেম্বর ঘোষনা করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি যেখানে সদস্য সচিব করা হয় জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে।

 

যার কারণে সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি জেলা যুবদলে একাই রাজত্ব শুরু করে কিন্তু কমিটি পূর্ণাঙ্গ বা ইউনিট কমিটি গঠনে ছিলো না তার কোন ভূমিকা। এদিকে এর ৯ মাস পর ২০২২ সালের (২৯ আগস্ট) জেলা যুবদলের তিন সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

 

আহ্বায়ক পদে অদিষ্ঠ হন সাদেকুর রহমান সাদেক, সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজীব। কমিটি গঠনের পর থেকেই দলীয় ও নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তারা ৮ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সামনের আন্দোলনে জেলা যুবদলকে আন্দোলনমুখী রাখতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোন বিকল্প নেই আর কত বছর আংশিক কমিটি দিয়েই জেলা যুবদল চলবে এমনই প্রশ্ন রয়েছে নেতাকর্মীদের।

 

পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে ও তিনি কলটি রিসিভ করেননি। এস.এ/জেসি 

এই বিভাগের আরো খবর