শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কিন্ডারগার্টেনগুলো সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে (ভিডিও)

লতিফ রানা 

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২০  

করোনায় সরকারি ও এমপিওভূক্ত স্কুলগুলো প্রণোদনা ও সহযোগিতা পেলেও কিন্ডারগার্টেনগুলো সরকারের সহযোগিতা বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করেন জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ এর সভাপতি ফাতেমা বেগম ও সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা বিল্লাল হোসেন রবিন।
 
গতকাল বৃহস্পতিবার যুগের চিন্তা আয়োজনে উম্মে সালমা স্বর্ণার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘শিক্ষাঙ্গন’ এ নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন অতিথিরা। সরকারের শিক্ষা বিষয়ক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন ভুমিকা রাখা সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।  
 
বিল্লাল হোসেন রবিন বলেন, করোনাকালীন সময়ে সৃষ্ট সমস্যা থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের উত্তরণের কথা মাথায় রেখে এই পরিষদ চেষ্টা করেছে করোনা সংকটের বন্ধ এই স্কুলগুলো যেন প্রণোদনার ব্যবস্থা বা সহযোগিতা পায়। সরকার থেকে পায়নি। 

তাই আমরা নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করেছি যেটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার। আগামীতে আমরা সরকারী কোন নির্দেশনা থাকলে সে অনুসারে আমরা নীতিমালা এই ঐক্য পরিষদ সবাত্মক সহযোগিতা করবে।
 
তিনি বলেন, সরকারের হিসেব মতে বাংলাদেশে ৪০ হাজার কিন্ডার গার্টেন স্কুল আছে কিন্তু আনঅফিসিয়ালি আমাদের হিসেবে এই সংখ্যাটা হলো ৬৫ হাজার। এসব কিন্ডার গার্টেনের সাথে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক জড়িত আছেন। 

এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখছেন। আমার মতে সরকারী স্কুলগুলোতে যদি চাহিদানুযায়ী সুযোগ থাকতো। তাহলে এতো কিন্ডার গার্টেন গড়ে উঠার সুযোগ হতোনা।
 
স্কুলগুলোতে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে একজন শিক্ষক যখন ৪০-৪৫ মিনিট পাঠদান দেয় তখন শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো শিক্ষাটা পায়না। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ১৫-১৬জন শিক্ষার্থীদের মাঝে যখন ৪০-৪৫ মিনিট পাঠদান দেয় তখন শিক্ষাটা গ্রহন করা সহজ হয়। 


কিন্ডার গার্টেনগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে শিক্ষার মান উন্নতি করার চেষ্টা করে। এই স্কুলগুলো না থাকলে সরকারকে আরো অনেক স্কুল তৈরী করতে হতো। অনেক জনশক্তি নিয়োগ দেয়া লাগতো। কিন্ডারগার্টেন এবং প্রাইমারী স্কুলের মধ্যে একটা সেতু বন্ধন তৈরী করার মাধ্যমে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন আনতে পারবে।
 
তিনি বলেন, করোনাকালীন শিক্ষকদের অবস্থাটা তুলে ধরে আমরা প্রণোদনার একটা আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমরা সাড়া পাইনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একজন শিক্ষক কতটা অসহায় হলে সে ব্যাকআপ নেয়ার জন্য আবেদন করে! 

কিন্ডারগার্টেন স্কুল বেশীরভাগই বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই বাড়ি ভাড়াসহ শিক্ষকদের বেতনের টাকা জমে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিতে হয়েছে।
 
এসময় তিনি সোনারগাঁয়ের সুনাম অর্জন করা সিডার্স নামের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাড়িওয়ালার ভাড়া দিতে না পেরে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি স্ট্রোক করে এখন বাসায়।

তিনি বলেন, এই দুর্যোগের সময় বাধ্য হয়ে অনেকে শিক্ষকদের শিক্ষকতা ছেড়ে গার্মেন্টস এ চাকুরী নিয়েছেন কেউ ফোন-ফ্যাক্সের দোকান দিয়েছেন, কেউ গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এরকমভাবে একটা সময় অনেকগুলো স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।
 
রবিন বলেন, সরকারী স্কুল ও এমপিওভূক্ত স্কুলগুলোকে সরকার প্রণোদনা দিয়েছেন। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন ও সমমনা স্কুলগুলো তা পায়নি। কেন তারা বঞ্চিত?

তিনি বলেন, তারা নির্বাচনী কাজ আদমশুমারীসহ বিভিন্ন কাজে সময় সহযোগিতা করছে। সরকার তাদের নতুন বই সরবরাহ সহ সহযোগিতা করছেন কিন্তু শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন না। সব তথ্য দিয়ে সব নিয়ম মেনে চলে যখন তারা স্কুল চালাচ্ছে তারপরও তারা সুযোগ পাচ্ছেনা। 

কিন্ডারগার্টেন বা সমমানের স্কুলের ভূমিকার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ তুলে দিচ্ছেন না বলে তিনি মনে করেন। অথচ সরকারী স্কুলের শিক্ষকরা স্কুল বন্ধ থাকার পরেও ঘরে বসে কিন্তু টাকা পাচ্ছে।
 
তিনি মনে করেন, দুর্যোগে শিক্ষকরা বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তারা যখন অন্য পেশায় থিতু হয়ে যাবে। তখন তাদের ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা কম থাকবে। 

আমরা তখন শিক্ষক সঙ্কটে পড়ে যাবো। সরকার যদি দুর্যোগের সময় আমাদের প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারতো, তাহলে তারা চলে যেতোনা।
 
তিনি বলেন, অনেক স্কুলের প্রধানরা সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানাচ্ছেন। কিন্ডারগার্টেন তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাচ্ছে। আসলে স্কুলের ছাত্রাধিক্য ও পড়ালেখার মানের কারনে চলে যাচ্ছে।
 
কিন্ডারগার্টেনের বিরুদ্ধে না গিয়ে নিজেদের লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি ও পরিবেশ তৈরী করলে তার চলে যাবেনা বলে তিনি মনে করেন। তাদেরকে তিনি কিন্ডার গার্টেনের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রশমিত করার আহবান জানান।
 
তিনি বাচ্চাদের স্কুলমুখী করার জন্য প্রতিদিন একটি করে শ্রেণির পাঠ্যদানের মাধ্যমে সকল নিয়ম কানুন মেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একদিন প্রথম শ্রেণি পরের দিন দ্বিতীয় শ্রেণি তারপরের দিন তৃতীয় শ্রেণি এভাবে শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী এবং লেখাপড়ার সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় রাখার একটা চেষ্টা করা যায় কি না তা ভেবে দেখতে অনুরোধ জানান।
 
ফাতেমা বেগম বলেন, সরকারী স্কুলের পাশাপাশি আমরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এর বিনিময়ে তারা খুব একটা কিছু পাচ্ছেনা।
 
তিনি বলেন, নারাণগঞ্জ জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রতিবছর এসোসিয়েশনের মাধ্যমে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকি।
 
তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুল খুলতে আমরা কোন নীতিমালা গ্রহণ করিনা। সরকারী নীতিমালা অনুসারে যারা স্কুল গঠন করে আমরা তাদের সদস্য করি।
 
তিনি বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন আমরা কোন কূল-কিনারা পাচ্ছিলামনা। জুন মাস থেকে চিন্তা করলাম আমরা কিভাবে শিক্ষাক্রম চালু রাখতে পারি। তাদের সিলেবাস শেষ করতে না পারলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে। 

অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়িতে গিয়ে সাপ্তাহিক বাড়ির কাজ দিয়ে আসে। তাদেরকে শীট দিয়ে আসা হয়েছে আবার পরে তাদের কাছ থেকে সেগুলো আনার মাধ্যমে সিলেবাস শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আগে আমরা বই পেতামনা। এখন আমরা বই পাচ্ছি বৃত্তির সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা দেশের ও সরকারে অবশ্যই সহযোগিতা করছি। করোনার সময়ে শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
 
তিনি বলেন, যেহেতু কিন্ডার গার্টেন বন্ধ, এখন অভিভাবকরা মনে করে আমাদের বাচ্চারাতো স্কুলেই যায়না। তাহলে আমরা কেন মাসিক বেতন দিব? 

কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানের বাড়িওয়ালারা কিন্তু আমাদের ভাড়া মওকুফ করেনা। যারা শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন তাদের পরিবার কিভাবে চলবে?
 
তিনি বলেন, যদি নিয়মকানুন মেনে স্কুল চালানো যায় তাহলে অভিভাক তার ছেলেদের লেখাপড়ার সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে কিছুটা হলেও আমাদের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে। 

এই বিভাগের আরো খবর