শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পরীক্ষার জন্য শিক্ষা নয়, শিক্ষার জন্য পরীক্ষা : শিক্ষক আনোয়ার

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০  

আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এবং অভিভাবকগণ সবসময় পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াটা তৈরী করে। তাই বিষয়টা এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে লেখাপড়া করাটা শুধুমাত্র পরীক্ষা দেয়ার জন্য। বাস্তবে বিষয়টা এমন হওয়া উচিৎ না। আমাদের লেখাপড়াকে টার্গেট করে পরীক্ষা হওয়া উচিৎ, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে লেখাপড়া করা উচিৎ না।

 

ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা উম্মে সালমা স্বর্ণা’র সঞ্চালনায় যুগের চিন্তা’র সাপ্তাহিক আয়োজন ‘শিক্ষাঙ্গন’এ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এ ধরণের অভিমত প্রকাশ করেন এই শিক্ষক। এবারের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘ফিরে দেখা : ২০২০ শিক্ষাবর্ষ’।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার প্রথমকার সময়ের বিষয়ে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, যখন একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন শিক্ষার জড়িত কারো কাছেই তা ভাল লাগার কোন বিষয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কবে নাগাদ আবার তা চালু হবে সে বিষয় নিয়ে আমরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম।

 

তিনি বলেন, এই বন্ধটা এত লম্বা হবে তা আমরা ধারণা করতে পারিনি। প্রাথমিক অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যখন স্কুলে আসতে পারছিল না তখন আমরা একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। শিক্ষাটা আমরা কিভাবে আগাবো এই বিষয় নিয়ে কারো কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। তখন নির্দেশনা দেয়ার মতো কারো কোন সুযোগও ছিল না।

 

তিনি বলেন, করোনার সময় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হলেও তার মধ্য থেকে আমাদের শিক্ষার বিকল্প বিষয় নিয়ে চিন্তা করার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

তিনি বলেন, প্রযুক্তির ব্যায়, ডিভাইসের সীমাবদ্ধতা, ইন্টারনেটের কস্টিং, এর মধ্যে আবার কারো অভিভাবকদের চাকুরী চলে যাওয়া বা বেতন কমে যাওয়া, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে অর্থাৎ কোন রকম চলা যাকে বলে সেটা হয়তো হয়েছে।

 

এ সময় তিনি করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সৃষ্ট বেশ কিছু অসুবিধার কথা তুলে ধরেন।

 

তিনি খুবই হতাশার সাথে বলেন, এই করোনার সময়ে শিক্ষকদের জন্য আমাদের সমাজ তেমন কিছই করেনি। সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সময়মতো তাদের বেতন পেয়ে যাচ্ছে। 

 

তারমতে, সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেশের শতকার ২০জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিচ্ছেন। বাকী ৮০জন শিক্ষা দিচ্ছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। এই করোনা সংকটে আমরা মাত্র একবার তিন হাজার করে টাকা পেয়েছি। সরকার ইচ্ছা করলে এই সময় আমাদের প্রতি মাসে তিন হাজার করে টাকা দিতে পারতো। সমাজের উচ্চবিত্তদের কাছ থেকেও আমরা কোন সহায়তা পাইনি।

 

পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ার সিদ্ধান্তকে সময়ের প্রয়োজনে গ্রহণ করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পড়াটা পরীক্ষার জন্য না। তিনি বলেন, পরীক্ষা না নিয়েও যদি আমরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারি তাহলে তা হবে ভাল পদ্ধতি। আমরা সে জায়গায় যেতে পারছি না বলে আমরা পরীক্ষাকে সামনে রেখে তাদের মুখস্ত করাচ্ছি।

 

তারমতে, শিক্ষার্থী যদি জ্ঞানকে ভালবেসে এবং বিষয়টাকে ভালবেসে লেখা পড়া করতো তাহলে সেই শিক্ষাটা হতো তাদের জন্য সত্যিকারের শিক্ষা। এখন বিষয়টা এমন হয়েছে পরীক্ষাটাই আনন্দ আর শিক্ষাটা নিরানন্দ।

 

তিনি বলেন, এখন অনলাইনের ক্লাস নেয়ার বিষয়ে সরকারের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ইন্টারনেটের মূল্য অনেক কমিয়ে দেয়া উচিৎ। শিক্ষার্থীদের জন্য করোনা উপলক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু ডিভাইসের দাম কমিয়ে দিলে অর্থাৎ ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবহার সহজলভ্য হলে শিক্ষার্থীদের অনেকটা সহজ হবে।

 

তিনি বলেন, যতদিন স্কুলের অফলাইন ক্লাস বন্ধ থাকবে ততদিন পর্যন্ত এসাইনমেন্ট থাকবে বলে আমি মনে করি, এবং তা থাকা উচিৎ।

 

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এই শিক্ষক বলেন, যতদিন না আমরা অফলাইনে ক্লাস করাতে পারছি ততদিন পর্যন্ত অনলাইনকে মেনে নিতে হবে। সময় চলে গেলেও জীবন থেমে থাকবে না, আমাদের যোগ্যতায় ঘাটটি পড়ে গেলে তা পুরণ করা সম্ভব হবে না।

 

তিনি বলেন, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাসায় যতটা সম্ভব শরীরচর্চা করতে হবে। এ সময় তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান শুধু এক বা দুই মাসের জন্য না, পুরো এক বছরের জন্য পরিকল্পনা তৈরী করার জন্য। সাথে সাথে শিক্ষার ক্ষতির পরিমান কিছুটা হলেও যেন পুষিয়ে নেয়া যায় সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন সঠিকভাবে তদারকী করে তিনি শিক্ষকদের প্রতি সেই অনুরোধ জানান।
 

এই বিভাগের আরো খবর