শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিদ্যুৎ গিলছে ইজিবাইক

ইফতি মাহমুদ

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০২২  

 
# অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের খবর পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি : গোলাম মোরশেদ 

# অবৈধ অটোর বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছি: জাহেদ পারভেজ

 

লোডশেডিং এর কারণে সারাদেশের মানুষের জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে যার ব্যাতিক্রম নয় নারায়ণগঞ্জ। অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ তাদের দৈন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় বাধাগ্রাস্ত হচ্ছে লোডশেডিং এর জন্য। এদিকে লোডশেডিং বিপর্যস্ত এই সময়ে বৈদ্যুতিক চার্জ খেয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের অলি গলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ইজিবাইক। কিন্তু লোডশেডিং এর কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহালে ও ইজিবাইক চালকরা দিব্বি ঘুড়ে বেড়াচ্ছে শহরজুড়ে। এভাবে নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ এর বৃহৎ একটি অংশ দখল করে নিচ্ছে ইজিবাইক।

 

লক্ষ্য করা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরেরে প্রবেশমুখ সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে চাষাড়া এবং চাষাড়া থেকে ২নং গেইট পর্যন্ত তাছাড়া শহরের অন্যান্য রোড অলি গলিতে দেখা যায় ইজিবাইকের দাপট। কখনো কখনো চাষাড়া এলাকায় অবৈধ ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও কয়েকঘন্টা পর ঠিকই শহরে প্রবেশ করে করছে ইজিবাইক। ১৯ জুলাই থেকে সারাদেশে এক ঘন্টা করে লোডশেডিং করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানী মন্ত্রী নসরুল হামিদ। তারপর ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ জোন কখন কোথায় লোডশেডিং হবে তা জানিয়ে দেয়। লোডশেডিং এক ঘন্টা করা হবে বলা হলেও কখনো কখনো তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে। প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকে অসুস্থ হচ্ছে। লোডশেডিং এর জন্য নারায়ণগঞ্জের অন্যতম শিল্পকারখানা এলাকা বিসিক এলাকায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহতের কারণে রপ্তানীখাত ঝুঁকিতে পড়ছে।
 
 
তথ্য সূত্রে জানা যায়, দেশের ৯০ শতাংশ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। সরেজমিনে দেখা যায়,নারায়ণগঞ্জে শহরে চাঁনমারী, ইসদাইর, মাসদাইর, জামতলা, গলাচিপা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি রিকশা গ্যারেজেই নিষিদ্ধ অটো বাইক ও রিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ গ্যারেজেই ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। কিন্তু কেউ কেউ অভিনব কায়দায় একটি মিটার দেখিয়ে বলে বৈধ লাইন ব্যবহার করছি কিন্তু তাদের এর বাইরে বিদ্যুতের একটি চোরাই লাইন রয়েছে। জানা গেছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মরত কিছু অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সব অবৈধ সংযোগ দেন অর্থের বিনিময়ে। ফলে প্রতিদিন উৎপাদিত বিদ্যুতের একটা বড় অংশ ভোগ করছে এই ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ইজিবাইক। যার ফলে বাসা বাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জরুরী সেবা দেয়া স্থানগুলোতে ঠিকমত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে নগরের বেশীরভাগ এলাকায় অতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।


 
খোজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসন বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে সংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলায় বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করছে। বিশেষ করে ব্যস্ত নগরী নারায়ণগঞ্জ, শিল্পাঞ্চল ফতুল্লা, সদর এলাকায় ধারণা করা যায় এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ হাজারের মতো। কিন্তু প্রতিদিনই এই ২০হাজার অটো ঘন্টায় ঘন্টায় চার্জ নিয়ে বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে। এসব যানবাহন চার্জ দিতে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। অনুমান করা যায়, সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি এক সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে ৫ থেকে ৬ ইউনিট দিনে ও রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৯ টাকা ধরে নেয়া যাক তাহলে ২০হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় প্রতিদিন ১লাখ ৮০হাজার টাকার বেশি বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে।


 
নগরের এক অটো চালকের সাথে কথা হলে জানান, আমরা বেশিরভাগ রাত্রেই ব্যাটারী চার্জ কইরা ফেলি দিনে যখন কারেন্ট থাকে তখন আবার চার্জ দেই কারেন্ট যাওয়া নিয়ে আমগো কোন সমস্যা নাই। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের নিয়ে বলেন গ্যারেজ মালিকরা কইতে কেমনে লাইন লয় বুঝিনা আমারতে ঘন্টা প্রতি টাকা নেয়।


 
লোডশেডিং এর কারণে নগরের এক ভুক্তভোগী এক ব্যাক্তি জানান, লোডশেডিংর কারণে ছেলে-মেয়েরা ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছে না। পরিবারের অনেক লোক গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যার কারণে পরিবার নিয়ে প্রচুর ভোগান্তীতে আছি।


 
ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে রাত আটটা বাজতেই আমাদের দোকানপাট বন্ধ করে ফিলি। এমনিতেই ব্যবসা বাণিজ্য খারাপ যাচ্ছে এর মধ্যে যদি এভাবেই চলতে থাকে আমাদের ব্যবসায়ীদের সামনের দিন কিভাবে যাবে।


 
শহরে অটো চলাচলের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ জানান,আমরা অবৈধ অটোর বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযানে অবৈধ অটোগুলো শহরে প্রবেশ করলে অটোগুলোকে ডাম্পিং এর ব্যবস্থা করছি। 


 
ডিপিডিসি নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ জানান, যে জায়গায় অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে আমারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তিনি জানান, আমার জানামতে এখন অবৈধভাবে মিটার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে না। অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যাপারে আমরা তদারকি করছি। অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে এমন অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।

 

এই বিভাগের আরো খবর