বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

কেউ কাউকে ছাড় নয়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৪  

 

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৮ মে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করেছে জেলা নির্বাচন অফিসার। তার মাঝে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা প্রার্থী হয়ে মাঠে লড়াইয়ের জন্য রয়েছেন। তারা বিভিন্ন দলের নেতা হলেও প্রত্যেকেই নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের অনুসারি হিসেবে পরিচিত।

 

এছাড়া রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে তলে তলে বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আশীর্বাদ নিয়ে প্রার্থী হয়েছে। তাছাড়া এই উপজেলা নির্বাচনে পরোক্ষ ভাবে দুই সাংসদ দ্বয়ের প্রভাব রয়েছে। যা এর আগে স্থানীয় নির্বাচনের তারা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার যদি উপেজলা নির্বাচনে কোন এমপি প্রভাব বিস্তার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান নির্বাচন কমিশন। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের হাই কমান্ডও এ নিয়ে বার বার হুশিয়ারি দিয়ে আসছেন।

 

এদিকে এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীতা উম্মুক্ত রাখায় দল থেকে একাধিক প্রার্থী হতে কোন বাধা নেই। আর এজন্য ক্ষমতাসীন দল থেকে এখানে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তবে অন্য দলের প্রার্থীরা আট ঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন। তারাও কোন ভাবে ছাড় দিচ্ছে না। তারই ধারাবাহিকতায় বন্দর উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীরা মাঠে নেমে ভোটারদের মনজয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমনকি প্রার্থীতার জানান দিয়ে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আগে থেকেই মাঠে উত্তাপ তৈরী করছেন।

 

জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, প্রথম ধাপে নারায়ণগঞ্জের সদর ও বন্দরসহ সারা দেশের মোট ১৫২ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। (২১ মার্চ) বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনের ২৯তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

 

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে সদর ও বন্দর উপজেলা নির্বাচন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার  শেষ সময় ১৫ এপ্রিল। মনোনয়ন যাচাই বাছাই ১৭ এপ্রিল এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করেছে জেলা নির্বাচন অফিসার।

 

নির্বাচন কমিশন সুত্রমতে, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ প্রার্থীরা হলেন, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এবং তার ছেলে মাহমুদুল হাসান।

 

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন চারজন। তাঁরা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, মো. আলমগীর হোসেন, মোশাঈদ রহমান ও শহিদুল ইসলাম জুয়েল। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোননয়নপত্র জমাদানকারী ২ জন হলেন- মাহমুদা আক্তার ও বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন।

 

বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মাসে এক সমাবেশে বন্দর-সদর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদকে সমর্থন দিয়েছেন। পাশাপাশি চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য করেন এবং আরেক প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুলকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। যদিও এমপিদের বার বার সতর্ক করা হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে এমপিরা কোন প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারবে না।

 

অপরদিকে রাজনৈতিক বোদ্ধামহলে আলোচনা হচ্ছে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। এখানে বিএনপি না থাকলেও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুলের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা এমএ রশিদ, আবু সুফিয়ান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাকসুদ হোসেন মাঠ কাপিয়ে যাচ্ছেন। আর এজন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন শেষ পর্যন্ত তারা প্রত্যেকে নির্বাচনের মাঠে থাকলে তাহলে বন্দরে এবার আওয়ামী লীগ, জাপা বিএনপি লড়াই হবে।

 

যদিও বিএনপির এই উপজেলা নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। তবে আতাউর রহমান মুকুলের পক্ষে বিএনপি নেতারা ভিতরে ভিতরে কাজ করছে বলে মনে করেন তার সমর্থকরা। এছাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন জাতীয়া পার্টির নেতা মাকসুদ হোসেন। আর এতে করে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। এজন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরাও একক ভাবে পার হতে পারবে না।

 

যা গত নির্বাচনে হয়েছিল। তাছাড়া এবার বন্দর উপজেলা নির্বাচনে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় এখানে লড়াই হবে হাড্ডা হাড্ডি। তাছাড়া এখানে তিন দলের প্রার্থী থাকায় সহজে কেউ পার পাচ্ছে না। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ. জাতীয় পার্টি, বিএনপি না থেকেও তাদের বহিষ্কৃত নেতা পুরোদমে নির্বাচনের মাঠে থাকায় তিন দলের মাঝে লড়াই হবে। যা আগামী ৮ মে নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে বেছে নিবেন। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর