বুধবার   ০১ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

চতুর্মুখী গ্যাড়াকলে রশীদ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৪  

 

পরিস্থিতি যে এমন হয়ে দাঁড়াবে তা ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার জোরালো দাবিদার ছিলেন তিনিও। কিন্তু পরবর্তীতে সরে যান, আর ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের আস্থাভাজন থাকার পুরস্কার স্বরূপ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এম.এ রশীদ।

 

এরপর তো সংগঠন নিয়ে রীতিমত মাথাব্যথা ছেড়েই দেন তিনি। হাজারও অভিযোগ, হাজারো বিশৃঙ্খলা কোন কিছুই টলাতে পারেনি এম.এ রশীদকে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল অপেক্ষা নিজেই আস্থাভাজন হয়ে থাকার চেষ্টা করেছেন এই আসনের জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানের। উপজেলা তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় নির্বাচনের সময় পুরনো কৌশলই অবলম্বন করেছিলেন এম.এ রশীদ। গতবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছেন জাতীয় নির্বাচনে।

 

নানা জায়গায় সেই পোস্টারও দেখা গিয়েছিল এম এ রশীদের। কিন্তু তাতে কাজে না আশায় নিজেই পোস্টার লাগানোর কথা অস্বীকার করেছেন। জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে সেলিম ওসমান চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের এম.এ রশীদই থাকবেন এমন ঘোষণা দেন। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন আরও দুইজন এইবার সেলিম ওসমানের কথা মানেননি। এতে যে বেকায়দায় পড়ে গেলেন এম.এ রশীদ।

 

বন্দর উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি মাকসুদ হোসেন তো মুসাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকেই ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে। এই ইস্তফা যে এম.এ রশীদের জন্য বিরাট বড় ধাক্কা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতোটুকু হলে না হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো মাকসুদ আর রশীদের মধ্যে। সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠভাজন হতে গিয়ে কত কথাই না শুনতে হয়েছে বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলকে।

 

সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে না পছন্দের হয়েছেন বিএনপি, না পছন্দের জাতীয় পার্টি কিংবা আওয়ামী লীগের। পরিশেষে তো বিএনপি থেকে বহিষ্কারই হলেন আতাউর রহমান মুকুল। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে সেলিম ওসমানের কথায় এম.এ রশীদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হওয়ার সুযোগ করে দেন গ্রহণযোগ্যতা থাকা সত্বেও। কিন্তু এবারও আগের মতো ছাড় দিয়ে থাকতে পারলেন না মুকুল। সেলিম ওসমানের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়েই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

 

তার মনোনয়ন পত্র বৈধও হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বহিষ্কৃত মুকুল ওসবের ধার ধারেননি। আর বিপত্তি বেড়েছে আওয়ামী লীগের এম.এ রশীদের। প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবশাম্ভাবী। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে এতোদিন অবজ্ঞা করে তাদের দ্বারস্ত হওয়াও এখন কঠিন। এরই মধ্যে আরেক দুঃসংবাদ এম.এ রশীদের জন্য। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ানও উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

 

যার ফলে বন্দরের এতোদিন উপেক্ষিত সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা এবং নির্যাতিত তৃণমূল কর্মীরা যে এম.এ রশীদকে ছেড়ে সুফিয়ানের পিছু নেবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই উপজেলায় মোট ১১ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। এম.এ রশীদ যে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে পোস্টার সাটিয়েছেন, সেই তিক্ততা কি ভুলতে পারবে ওসমান পরিবার। নাকি এম.এ রশীদ বাদে ওসমানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল কিংবা মুসাপুর ইউপির ইস্তফা দেয়া জাতীয় পার্টি নেতা মাকুসদকে বেছে নেবেন তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।

 

নির্বাচনের মাঠ সবসময়ই অনিশ্চয়তার। মুখে এক তো মাঠের খেলা আরেক। কে কাকে সমর্থন দিয়ে হারায়, আর পেছন থেকে কে কাকে সমর্থন দিয়ে এগিয়ে রাখে তা বলা দুষ্কর। এদিকে একেএম আবু সুফিয়ান যে বন্দরের পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন নিয়েই মাঠে নেমেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর ২০১১ ও ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে পুরো বন্দরে চষে ফেলায় ভোটের হিসাবেও বেশ পরিপক্ক একেএম আবু সুফিয়ান। তাই চতুর্মুখী গ্যাড়াকলে যে পড়েছেন এম.এ রশীদ এনিয়েই ঈদের ছুটিতে চায়ের দোকান থেকে পাড়া মহল্লায় এই আলোচনা। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সময় আর অল্পই হাতে রয়েছে। এই চার প্রার্থী যে লড়বেন ভোটের মাঠে তা অনেকটা নিশ্চিত বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এতে যে এম.এ রশীদের পরিস্থিতি খুব ভালো হওয়ার কথা নয়, তা তিনি নিজেও জানেন। এস.এ/জেসি 
 

এই বিভাগের আরো খবর