শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান হলেও অধরা ফতুল্লা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২১  

সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল মেঘনা ওয়েল ডিপো এলাকায় একেরপর এক অভিযান চালিয়ে অবৈধ তেল ব্যবসায়ী, তেল চোর সিন্ডিকেট ও শ্রমিক সংগঠনের নামে গড়ে উঠা পরিবহন চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করছে র‌্যাব-১১। সবশেষ গতকাল দুপুরে গোদনাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলো আব্দুল হামিদ, মজিবর রহমান, বাদল শেখ ও জসীম উদ্দিন। র‌্যাব জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকায় অবস্থিত পদ্মা ও মেঘনা ডিপোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিক সমিতি। এসব সংগঠনের কতিপয় সদস্যরা নামে-বেনামে বিভিন্ন সমিতি ও মাদ্রাসার নাম ভাঙ্গিয়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা করে উত্তোলণ করছে।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মূলত ট্যাংক লরি ও তেলের ডিপোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সংগঠনের নেতারা আড়ালে থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মাধ্যমে বছরের পর বছর প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে। একই পন্থায় চুড়ি করছে জ্বালানি তেলও। এর নেপথ্যে থাকা মাফিয়াদের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের আশরাফের নাম উঠে এসেছে। আশরাফ বাংলাদেশ ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন গোদনাইল মেঘনা শাখার সভাপতি। তাই স্থানীয়দের মতে, এই সেক্টরে অপরাধ দমন করতে হলে আশরাফসহ অন্যান্য নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার বিকল্প নেই। এদিকে, র‌্যাবের এমন লাগাতার অভিযান সিদ্ধিরগঞ্জে প্রসংশা কুড়ালেও আক্ষেপ প্রকাশ করছেন ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় অবস্থিত মেঘনা ও যমুনা ডিপো এলাকার সচেতন কর্মকর্তা ও বাসিন্দারা। কেননা, সিদ্ধিরগঞ্জের মত ফতুল্লাতেও একই দশা হলেও দীর্ঘদিন ধরে সেখানে অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে। তা নিয়ে কারো কারো মনে রহস্যের দানা বেঁধেছে।  

 

সম্প্রতি দেখা গেছে, কেবল পরিবহন চাঁদাবাজই নয়, সিদ্ধিরগঞ্জের চিহ্নিত তেলচোরা কারবারিদের আটক করে আইনের আওতায় এনেছে র‌্যাব। তবে, অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে রয়েছে ফতুল্লার তেলচোর ও পরিবহন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।  তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, ফতুল্লায় জ্বালানি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তেল চুরির ঘটনা বর্তমানে ওপেন সিক্রেট। বছরের পর বছর চোরাই তেলের এই রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে একটি শক্তিশালী চক্র। এই চক্রের মূল হোতাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন ফতুল্লার যমুনা ইউনিটের আহবায়ক আব্দুল মতিন মুন্সি, পাভেল ওরফে মির্জা পাভেল, মেজর বাবু, ইকবাল, আবু সালাম, রনি ভান্ডারী, জামাই ইব্রাহিম, রাসেল, সালাউদ্দিন, আফসুসহ আরো অনেকে। ডিপোর তেল চুরির মধ্যদিয়ে এদের প্রত্যেকে হয়ে উঠেছে অঢেল সম্পদের মালিক। তেল চুরির অপরাধে এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। মাঝে দু’একবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেড়িয়ে আবারও একই কায়দায় চলতে থাকে তেল চুরি। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় ওই চক্রটি চোরাই তেলের এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। 

 

জানা যায়, ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় যমুনা ও মেঘনা তেল ডিপোর অবস্থান। ডিপোর তেল নদীপথে জাহাজযোগে আনা হয়। আর জ্বালানি তেল পরিবহনের এই প্রথম ধাপ থেকেই শুরু হয় তেল চুরি। আবার ডিপো দুটি থেকে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর পথে পথে নানা প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকার তেল লোপাট হচ্ছে। জ্বালানি তেল সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিমাণে কম দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ডিপো থেকে তেল নিয়ে ফিলিং স্টেশনে যাওয়ার পথেও তেল লোপাটের ঘটনা ঘটছে। নদীপথে পরিবহনকালে জাহাজের গোপন খুপরি থেকেও তেল চুরির ঘটনা ঘটে। এই পন্থায় তেল চুরিতে প্রসিদ্ধ ওই তেল চোর সিন্ডিকেটটি।   

 

এদিকে, ফতুল্লার যমুনা ও মেঘনা ডিপোর চোরাই তেল সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিকবার চোরাই তেল সিন্ডিকেটগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পান থেকে চুন খশলেই শুরু হয় অবৈধ অস্ত্রের মহড়া। এতে আতঙ্কিত ওই এলাকার বাসীন্দারা। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীরা বলছেন, অচিরেই অভিযান চালানো হবে ফতুল্লাতেও। বোদ্ধা মহলও বলছেন, রাষ্ট্রের এই জ্বালানি খাতকে সুরক্ষিত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কঠোরতার বিকল্প নেই।  
 

এই বিভাগের আরো খবর