শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিকে সয়লাব

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২২  

# অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : সিভিল সার্জন

 

নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকা ও তার আশ পাশের এলাকা গুলোতে প্রায় হাজার খানিক ক্লিনিক, প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। কিন্তু এর মাঝে অনুমোদন আছে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটির। আবার অনেক ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করে সিলগালা করা হলেও তারা আবার নাম পরিবর্তন করে চালু করে কার্যক্রম চালান।

 

নারায়ণগঞ্জে গতবছরের তালিকা অনুযায়ী প্রায় ২০টি ক্লিনিক-ডায়গনষ্টিক সেন্টার অনুমোদনহীনভাবে চালাচ্ছেন। কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে বছরের পর বছর। অনেকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে বহু আগে, কিন্তু তা নবায়নের নাম নেই। অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে কারা চিকিৎসা দিচ্ছে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বাড়ছে অপচিকিৎসার অভিযোগ।

 

বছর দেড়েক আগে সারা দেশে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৯৮২ সালের মেডিকেল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল

 

ক্লিনিক বা ডায়াগনেস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে তাদের চিকিৎসা সেবা। ওই সকল ক্লিনিকগুলো কতটুক মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে তা জানা নেই অনেকেরই। অনেক ক্লিনিকে ভূল চিকিৎসায় রোগি মারা যাওয়ার অভিযোগ পর্যন্ত আছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানাযায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর এলাকায় অনুমোদনহীন ভাবে জয় মেডিকেল সার্ভিসেস এবং ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার খোলে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের কর্তৃপক্ষের দাবী তারা অনুমোদেন চেয়ে জেলা সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা বিভিন্ন পরীক্ষার নামে রোগিদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন।

 

এছাড়াও কাশিপুর ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন সত্যায়িত করার জন্য ২শ’ থেকে ৩ শ টাকা নেন। তাদের ভালোমানের মেশিন না থাকায় রোগীদের পরীক্ষায় ভূল রিপোর্টের অভিযোগ আছে। কাশিপুরের পার্শবর্তী এলাকা বক্তাবলী ঘাট সংলগ্ম বাজার এলাকায় রাজিয়া ক্লিনিককে একাধিকবার সিলগালা করা হলেও তারা আবার অবৈধ ভাবে অনুমোদনহীন ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এখানে ডাক্তার থাকে না, রিজিয়া নামে এক নারী এই ক্লিনিক খুলে গর্ভবতি নারীদের ছিজার করার জন্য কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগি পাঠান। এছাড়া তার এখানে চিকিৎসা নিতে এসে অনেক রোগি সঠিক চিকিৎসার পরিবর্তে ভূল চিকিৎসার সিকার হন।

 

অন্যদিকে শহরের আশ পাশের এলাকা গুলোর বিভিন্ন ওলিতে গলিতে অনুমোদনহীনভাবে ব্যাঙ্গের ছাতার মত ক্লিনিক, ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার, মেডিকেল সেন্টার, নামে বেনামে মিনি হাসপাতাল গড়ে উঠে।

 

এদিকে জেলার গত বছরের শুরুর দিকে অনুমোদনহীন ২২ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের অভিযান পরিচালনা করে লাইসেন্স ও চিকিৎসক ছাড়াই অপারেশনসহ সেবা দেওয়ার অভিযোগে ৩টি ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হয়।

 

সিলগালা প্রতিষ্ঠান গুলো হলো, নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের খানপুর ও ডন চেম্বার এলাকায় আশশিফা ডায়াগনস্টিক এন্ড জেনারেল হসপিটাল, নিউ সম্রাট জেনারেল হাসপাতাল ও সোহেল জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও সিলগালা করা হয়।

 

এছাড়াও তখনকার অনুমোদনহীন ১৯টি ক্লিনিক রয়েছে এগুলো হলো, মেট্রোহল চত্বরের সোহেল জেনারেল হাসপাতাল, খানপুরের আশশিফা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার,খানপুরের সম্রাট জেনারেল হাসপাতাল, চাষাঢ়া জাকির সুপার মার্কেটের লাইফ জেনারেল হাসপাতাল, মনির টাওয়ারে অবস্থিত ভিশন আই কেয়ার এন্ড ফ্যাকো সেন্টার,ডিআইটির জে এস সুপার মার্কেটের সহিতুন নেছা লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল

 

নাগবাড়ি এলাকার নারায়ণগঞ্জ ডায়বেটিক হাসপাতাল, শিবু মার্কেটের সেতু জেনারেল হাসপাতাল,সিদ্ধিরগঞ্জ কদমতলী পুল এলাকার কদমতলী জেনারেল হাসপাতাল, চিটাগাং রোড ডাচ বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল,সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাকের কনক জেনারেল হাসপাতাল,পঞ্চবটি চৌরাস্তার মেলোডি ডায়গনস্টিক সেন্টার, পঞ্চবটির মেরী স্টার জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব

 

গোদনাইল এস ও রোডের আধুনিক জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার,২ নং ঢাকেশ্বরী মেডিফ্যান ডিজিটাল ডায়গনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, রূপগঞ্জের ভূলতার হযরত শাহজালাল (রঃ) হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার, আড়াইহাজার বাজার ভূইয়া প্লাজার আড়াইহাজার জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড।

 

সচেতন মহলের মতে কোনো জবাবদিহিতা নেই বলেই শহরের অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ক্লিনিক প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় মানুষের ‍মৃত্যুর অভিযোগও রয়েছে। এদিকে প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থা আরও ভয়াবহ।

 

যত্রতত্র ছোট ছোট ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে সাধারণ মানুষের শরীরের নানান ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের থাকার কথা থাকলেও কিন্তু দায়িত্ব পালন করেন হাতুড়ে লোকজন। ফলাফল প্রতিনিয়ত ভুল রিপোর্ট। প্রতিবাদে ভাঙচুর হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।

 

এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আ.ফ.ম মশিউর রহমান বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর করোনা ভ্যকসিন দেয়ার পাশাপাশি অবৈধ ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছি।

 

যে সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘কোনোভাবেই অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। খুব শিগগিরই তালিকা করে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরো খবর