শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অভিযানেও বন্ধ হয় না চোরাই তেলের ব্যবসা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২১  

ফতুল্লার পঞ্চবটি ও সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকায় তেলের ডিপোকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে জ্বালানি তেল চুরির শক্তিশালি সিন্ডিকেট। ডিপো থেকে তেল লোড-আনলোড বা সরবরাহের সময় প্রতিনিয়তই হচ্ছে জ্বালানি চুরি। এই সেক্টরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী তথা র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবি প্রায় সময় অভিযান চালিয়ে থাকলেও জ্বালানি তেল চুরি বন্ধ হচ্ছে না। চুরি ঠেকাতে না পাড়ায় বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ বা চোরাই জ্বালানি তেলের ব্যবসাও।

 
জানা গেছে, গত কয়েক মাসে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত জ্বালানি তেলের ডিপো ঘিরে র‌্যাব বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অভিযানে চোরাই তেল উদ্ধার ও তেল চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। এরপরও সেখানে বন্ধ হচ্ছে না চোরাই তেলের ব্যবসা, বন্ধ হচ্ছে না তেল চুরি।


একটি সূত্র জানিয়েছে, র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে যারা আটক হচ্ছে, তারা মূলত তেল চোর সিন্ডিকেট বা অবৈধ জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের মাঠ পর্যায়ের কর্মী। অন্যদিকে, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের গ্রেফতারের পর মামলা হলেও ওই সকল মামলার তদন্ত গভীরে পৌছায় না। ফলে অভিযান চালালেও বা চুনোপুটিদের গ্রেফতারের পর মামলা হলেও ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রাঘোব বোয়ালরা।


এদিকে, সম্প্রতি দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে ঘণ ঘণ র‌্যাব বা পুলিশের অভিযান হলেও নিরাপদ থেকে যাচ্ছে ফতুল্লার তেল চোরাদের সিন্ডিকেট। তুলনামূলক কম অভিযান লক্ষ করা যাচ্ছে ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় অবস্থিত মেঘনা ও যমুনা ডিপোতে। ফলে ওই ডিপো গুলোর তেল চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। একই সাথে ওই অঞ্চলের অবৈধ জ্বালানি তেলের অবৈধ ব্যবসায়ীরাও রয়েছে বহাল তবিয়তে।


জানা গেছে, গত ২১ মে রাত ৮টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের আটি ওয়াপদা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ১২টি ড্রাম ভর্তি ২ হাজার ৫২০ লিটার চোরাই ডিজেল উদ্ধারসহ চোরাই চক্রের সক্রিয় সদস্য মোঃ শাহজাহান (৪৮)’কে গ্রেফতার করা করে র‌্যাব-১১। এ সময় চোরাই কাজে ব্যবহৃত ০১টি নীল রংয়ের ছোট পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়।


এর আগে গত বছরের ২৫ ও ২৬ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল মেঘনা ওয়েল ডিপো এলাকায় পরপর দু’দিন অভিযান চালিয়ে মোট ৮ হাজার ৮শত ১০ লিটার জ্বালানি তেল উদ্ধারসহ শাহাজাহান ও মাহবুবুর রহমান ওরফে মামুন নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি গোদনাইল তেলে ডিপো সংলগ্ন আটিগ্রাম এলাকা থেকে ১০ হাজার লিটার চোরাই ফার্নিশ তেল সহ জাহাঙ্গীর আলম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। এসময় একটি ট্যাংকারও জব্দ করা হয়।


 
২০২০ সালের ২ মার্চ গোদনাইল বার্মাস্ট্যান্ডের পদ্মা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই হাজার লিটার চোরাই তেল (ডিজেল) উদ্ধার করা সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। গ্রেফতারকৃতরা হলো জ্বালানি তেল চোর চক্রের সদস্য হলো তারা মিয়া, লিটন ও হোসেন। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল গোদনাইল বামাষ্ট্যান্ড এলাকায় চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের দোকানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ হাজার লিটার চোরাই তেলসহ আকাশ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। সে ডিপো সংলগ্ন অবৈধ তেলের দোকানের কর্মচারী।


 
সচেতন মহল বলছে, কর্মচারী পর্যায়ের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করলেও মূল ব্যবসায়ীদের বা নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী মহলকে আইনের আওতায় না আনায় অভিযান হলেও সুফল মিলছে না। অন্যদিকে, ফতুল্লাবাসি বলছেন, সিদ্ধিরগঞ্জে থেমে থেকে এমন অভিযান হলেও ফতুল্লাতে এমন লাগাতার অভিযান না হওয়ায় আয়েশে আছেন  ফতুল্লার চোরাই তেলের কারবারিরা। ফতুল্লায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান না হওয়ায় তা নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।  


 
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, ফতুল্লায় জ্বালানি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তেল চুরির ঘটনা বর্তমানে ওপেন সিক্রেট। বছরের পর বছর চোরাই তেলের এই রমরমা ব্যবসা চলে আসছে একটি শক্তিশালী চক্র। এই চক্রের মূল হোতাদের মধ্যে রয়েছে পাভেল ওরফে মির্জা পাভেল। যদিও সম্প্রতি ঝুট সেক্টর নিয়ে একটি মারামারি মামলায় তেল চোর পাবেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

এছাড়া চিহ্নিত তেল চোরা ইকবাল, আবু সালাম, রনি ভান্ডারী, জামাই ইব্রাহিম, রাসেল, সালাউদ্দিনসহ তাদের সিন্ডিকেটের অন্যান্যরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। ডিপোর তেল চুরির মধ্যদিয়ে এদের প্রত্যেকে হয়ে উঠেছে অঢেল সম্পদের মালিক। তেল চুরির অপরাধে এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। মাঝে দু-একবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেড়িয়ে আবারও একই কায়দায় চলতে থাকে তেল চুরি। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় ওই চক্রটি চোরাই তেলের এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। যদিও র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামিতে ফতুল্লাতেও চলবে অভিযান।  
 

এই বিভাগের আরো খবর