শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চেয়ারম্যানদের পোয়াবারো, বঞ্চিত জনগণ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২১  

দিনে দিনে আর্থিক ভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছেন ফতুল্লার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তাদের কারো কারো টিনের ঘর থেকে বহুতল পাকা ভবন হয়েছে। হয়েছে বিলাসবহুল একাধিক বহুতল ভবন। এখন গাড়ি বাড়ি শান-শওকতের মালিক তারা সবাই। ফলে চাকচিক্যময় জীবন-যাপন করছেন এই চেয়ারম্যানরা। কিন্তু তারা এভাবে ফুলে ফেঁপে উঠলেও তাদের এলাকার জনগনের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন ঘটছে না। বিশেষ করে উন্নয়নে একেবারে পিছিয়ে পড়েছে ফতুল্লা।

 

নারায়ণগঞ্জ শহরতো বটেই, সিদ্ধিরগঞ্জ আর বন্ধর থানা এলাকাও এখন ফতুল্লার চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। ফতুল্লা থানার পাঁচটি ইউনিয়ন হলো কাশীপুর, বক্তাবলী, এনায়েতনগর, ফতুল্লা এবং কুতুবপুর। পাঁচ চেয়ারম্যান হলেন সাইফ উল্লাহ বাদল, শওকত আলী, আসাদুজ্জামান, লুৎফর রহমান স্বপন এবং মনিরুল আলম সেন্টু। এই চেয়ারম্যানদের মাঝে সাইফউল্লাহ বাদল এখন তার পৈত্রিক বাড়ি সহ তিনটি বাড়ির মালিক। যদিও তিনি এখনো তার পৈত্রিক বাড়িতেই থাকছেন। শওকত আলীও তার বক্তাবলীর বাড়ি বাদ দিয়েও ফতুল্লার টিনসেড ভবনকে আলিশান বহুতল ভবনে রুপান্তর করেছেন।

 

একইভাবে বাকী তিন চেয়ারম্যানই নানা ভাবে অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই ফতুল্লাবাসী মনে করেন এই পাঁচ চেয়ারম্যানের ভাগ্যের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটলেও ফতুল্লার জনগনের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এসব ইউনিয়নের রাস্তাগুলি পাকা করা হলেও অধিকাংশ রাস্তার পাশেই পরিকল্পিত ড্রেনেজ সুবিধা গড়ে তোলা হয়নি। ফলে এনায়েতনগর, ফতুল্লা আর কুতুবপুর ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা হচ্ছে। আর রাস্তাগুলিও নির্মাণ করা হচ্ছে সরু করে। বেশির ভাগ রাস্তায়ই বড় যানবাহন ঢুকতে পারে না। এমন কি দুটি প্রাইভেট কারও পাস হতে পারে না।

 

এছাড়া এসব ইউনিয়নে কোনো মেঘা প্রকল্পের বালাই নেই। বরং উল্টো ডিএনডিতে যে একটি মেঘা প্রকল্পের কাজ চলছে সেই প্রকল্পে নেই ফতুল্লা। তাই ধীরে ধীরে ফতুল্লা থানা এলাকা একটি পরিত্যক্ত এলাকায় পরিণত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এসব ইউনিয়নে কোনো ময়লা নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা নেই। তাই মানুষ ঘরগৃহস্থলির ময়লা রাস্তার পাশে বা ড্রেনে ফেলে রাখছে। এতে গোটা ফতুল্লা থানা এলাকা একটি নোংরা এলাকায় পরিনত হচ্ছে। কিন্তু তাতে এই চেয়ারম্যানদের তেমন কিছু করারও নেই বলে জানা গেছে।

 

কারণ ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতাও কম। তাই তারা জনগণকে পর্যাপ্ত সেবা দিতে না পারলেও নিজেদের ভাগ্যের ঠিকই ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়ে চলেছেন। ফলে একদিকে উন্নয়ন বঞ্চনা আর অপরদিকে চেয়ারম্যানদের ভাগ্যের উন্নয়ন দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া ফতুল্লার মানুষের আর তেমন কিছুই করার থাকছে না। যদিও এই চেয়ারম্যানদের মাঝে এক মাত্র মনিরুল আলম সেন্টু ছাড়া আর কেউই সরাসরি জনগনের ভোটে নির্বাচিত নন।

 

ফতুল্লা ইউনিয়নে ভোট হয় না প্রায় ২৯ বছর ধরে। কাশীপুর আর বক্তাবলীতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন বাদল আর শওকত। তখন কি ঘটেছিলো সেটা এই দুটি ইউনিয়নের সকলের জানা। এনায়েতনগরে নির্বাচন হলেও সকাল দশটার আগের সব কেন্দ্র আসাদুজ্জামানের লোকেরা দখল করার অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির ও জাতীয়পার্টির প্রার্থী। এই হলো ফতুল্লার চেয়ারম্যানদের অবস্থা। তাই আগামী দিনে ফতুল্লার জনগনের কপালে আরো কি আছে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে বলে ওই এলাকার মানুষ মনে করেন। তাই ফতুল্লার জনগনের অনেকেই এখনই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর