শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চেয়ারের মজা ছাড়তে নারাজ আজাদ বিশ্বাস

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৪  

 

দীর্ঘ ১৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হয়েছে। নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে থেকে নিজেদের অবস্থান তৈরী করছেন। এছাড়া এখানকার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা প্রার্থীরা তাদের গুরুর আশীর্বাদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করতে কোন কমতি রাখছেন না। তবে তফসিল হওয়ার পর এই নির্বাচনকে আদালতের মাধ্যমে আইনিভাবে স্থগিত রাখার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে এমন গুঞ্জন উঠেছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এড.আজাদ বিশ্বাসও যেন তেমন ইশারা ইঙ্গিতে তেমন কিছু বুঝাতে চেয়েছেন এক সভায়।  

 

এদিকে জানা যায়, আইনজীবী হিসেবেই রাজনীতিতে উত্থান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের। বিএনপি এই নেতার ভাগ্য খুলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকালেই। ২০০৯ সালে নির্বাচনে জেতে এখনও পর্যন্ত তিনি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আসীন আছেন। গতকাল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার হাট বাজার ঘাটের টেন্ডার উম্মুক্ত করা হয়।

 

এ সময় যারা হাট বাজারের ইজারা পেয়েছে তাদের নাম ঘোষনার আগে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বলেন, আমাকে মাস কয়েক আগে নির্বাচন কমিশন সচিব ডেকে এখানকার নির্বাচন কেন বন্ধ ছিল তা জানতে চান। পরে আমি তাদের বলেছি কি কারনে বন্ধ ছিল তা আমি জানি না। তবে এই উপজেলা নিয়ে আদালতে মামলা ছিল। সেই মামলা কি অবস্থা তা আমার জানা নেই। পরে সচিব স্যার আমাকে বলে আপনি ২০৪১ সাল পর্যন্ত থাকেন। তার কথায় আমি কোন উত্তর দিতে পারি নাই। আমি তাদের বলেছি স্যার আমি হলাম অশিক্ষিত সরল সোজা লোক।

এখানকার নির্বাচনের বিষয়ে কি হবে তা আমার জানা নেই। এ সময় বড়মজলিসে একজন জনপ্রতিনিধি আজাদ বিশ্বাসকে বলে উঠেন আপনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সদর উপজেলার চেয়ারম্যান থেকে যান। তার এমন মন্তব্যে আরেকজন সহমত পোষন করেন। আবার কেউ কেউ বলে উঠেন দীর্ঘদিন চেয়ারে থেকে মজা পেয়ে গেছে তো এখন আর ছাড়তে চান না। আজাদ বিশ্বাস বলেন, এখানে কারা নির্বাচন করছে আর কারা করবে না তা আমি জানি না। তাছাড়া এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

 

অপরদিকে একাধিক সুত্র বলছে, ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকার সুবাধে তৎকালীন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ভোটের মাধ্যমে সদর উপজেলার নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন।

 

পরবর্তীতে ফতুল্লা ইউনিয়ন নিয়ে মামলা জটিলতায় আটকে আছে এই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। বর্তমান উপজেলা পরিষদটি নির্বাচন উপযোগী হলেও যেকোনো সময় আইনি জটিলতায় আটকে যেতে পারে এই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। যদিও ইতোমধ্যে সদর উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে নারায়ণগঞ্জের সদর ও বন্দরসহ সারা দেশের মোট ১৫২ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। ২১ মার্চ নির্বাচন কমিশনের ২৯তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

 

রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা এলাকাটি মুলত নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সংসদীয় এলাকা। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও বর্তমান চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাস নির্বাচনে দাঁড়াবেন কিনা সেটা নিয়ে বড় প্রশ্ন। যদিও তিনি বলেছেন নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে চান না।

 

ভিন্ন একাধিক সূত্র বলছে, আইনি জটিলতা সৃষ্টির জন্য আবারো দৌড়ঝাঁপ করছেন আজাদ বিশ্বাস। উচ্চ আদালতে মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর সেখানে আপিল করা হয়। সেই আপিলও খারিজ হয়ে গেছে। তবে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আবারো আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকলে আটকে যেতে পারে নির্বাচন। সেই চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছেন বলে গুঞ্জন চলছে। যদিও মামলার বাদী তিনি নন। তার অনুগামী একজনকে দিয়ে মামলা করানো হয়েছে বলে দীর্ঘদিন যাবত এমন আলোচনা। তবে আদালত থেকে কোন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আগামী ৮ মে সদর উপজেলার নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

নির্বাচন কমিশন ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে সদর ও বন্দর উপজেলা নির্বাচন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল। বাছাই ১৭ এপ্রিল এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হলে সদর উপজেলার কিছু অংশ সিটি কর্পোরেশনে চলে যায়। উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (২০০৯ সনের ৩০ জুন সংশোধিত) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সদর উপজেলা পুর্নগঠন করে। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর