শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ছাত্রদল-ছাত্রলীগ দুটোই ছন্নছাড়া

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২২  

 

 

# সাবেক হলেও ছাত্ররাজনীতি করবো : আজিজ
# পর্দার আড়ালে থাকলেও সাপোর্ট দেবো : সাহেদ

 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতি এই মুহুর্তে অনেকটাই গরম অবস্থায় রয়েছে। রাজনীতির মধ্যে মুখ্য বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইতি মধ্যে পুরো রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত রেখেছে।

 

 

দুই মুল দলেরই সব চাইতে সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্র সংগঠন। অতীতে এ ছাত্র সংগঠনগুলো সকল পর্যায়ে মাঠে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। কিন্তু এখন ছাত্র সংগঠনগুলো কেমন ছন্নছাড়া অবস্থায় পরে রয়েছে। তারা আর আগের মতো সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করতে পারছে না।

 

 

ইতি মধ্যে দুই দলের দুই সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ দুটোই এখন বিলুপ্ত অবস্থায় পরে রয়েছে। কারো হাতে নেতৃত্ব না থাকার কারণে সবাই সবাইকে এখন নেতা মনে করছে। যার কারণে নিজেদের মধ্যে নানা দ্বন্দ সৃষ্টি হচ্ছে এবং দলের ও দূর্নাম হচ্ছে। তারই ধারাবিহতকতায় ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত হয়ে পরেছে তৃণমূল।

 

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ২০১৮ সালের ১০ মে জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান আজিজ ও সদস্য সচিব আশরাফুল ইসমাইল রাফেলকে দিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়।

 

 

পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই জেলা ছাত্রলীগে আজিজকে সভাপতি ও রাফেলকে সাধারণ সম্পাদক করে  ১৮৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

 

 

অপর দিকে  ২০১৫ সালে ৪ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও যুগ্ম, আহ্বায়ক ছিলেন হাসনাত রহমান বিন্দু।

 

 

পরবর্তীতে দীর্ঘ তিন বছর পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীক কমিটি কতৃক রিয়াদকে সভাপতি ও বিন্দুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬১ বিশিষ্ট মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। নবাগত কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে কোন দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেনি এ ছাত্রলীগ।

 

 

শুধু দলীয় সাংসদ শামীম ওসমানের সকল প্রোগ্রামে তাদের ভূমিকা ছিল দেখার মতো। যার কারণে অনেকই ছাত্রলীগকে শামীম ওসমানের নিজস্ব সংগঠন বলতো। তারই ধারবাহিকতায় শামীম আইভীর দা কুমড়োর সম্পর্ক হওয়ার কারনে ছাত্রলীগের কর্মীরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরে ও তাকে সমর্থন করেনি ছাত্রলীগ।

 

 

এ অভিযোগে ছাত্রলীকে মেয়াদউত্তীর্ণ ইস্যু দেখিয়ে ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আল নাহিয়ান খান জয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ নেই। এবং তারা সকল কার্যক্রমে অনেকটাই ঝিমিয়ে পরার মতোই আছে।

 

 

ছাত্রলীগে এখন কেউ কাউকে নেতা মানে না সবাই নেতা হতে চায়। এ বিষয় নিয়ে ২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্য প্রশ্ন রেখে বলেন, এটাই কি ছাত্রলীগ! কোনো শৃঙ্খলা নেই!

 

 

পোস্টার নামাতে বলছি, নামায় না, স্লোগান থামায় না! এই ছাত্রলীগ আমার চাই না। সব নেতা, তাহলে কর্মী কোথায়! এত নেতা স্টেজে? শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ, এই ছাত্রলীগ না। মুজিব কোট পরলেই মুজিব সৈনিক হওয়া যায় না। মুজিব সৈনিক হতে হলে মুজিবের আদর্শের সৈনিক হতে হবে। শেখ হাসিনার খাঁটি কর্মী হতে হবে। খাঁটি কর্মী বিশৃঙ্খলা করে না।

 

 

সব নেতা হয়ে গেছে! সুশৃঙ্খল করুন, সুসংগঠিত করুন। কথা শুনবে না, এই ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নেই। অপকর্ম করবে এই ছাত্রলীগ দরকার নেই। দুর্নামের ধারা থেকে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

 

 

একই চিত্র নারায়ণগঞ্জে ও যার কারণে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন বিলুপ্ত থাকার কারণে তাদের মধ্যেই অনেকটা দ্বন্দ দেখা দিচ্ছে। সবাই সবাইকে বড় নেতা মনে করে। যার কারণে বিলুপ্ত কমিটিকে আরো শক্তিশালী করে আবার পূনরায় গঠন না করলে পরবর্তীতে দলের মধ্যে অনেকটাই সমস্যার দেখা দিবে।

 

 

বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। জেলা ছাত্রদল ২০১৮ সালের ৫ জুন মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও খাইরুল ইসলাম সজিবকে সাধারন সম্পাদক করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।

 

 

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ আরিফুর রহমান মানিককে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও খাইরুল ইসলাম সজিবকে সাধারন সম্পাদক করে জেলা ছাত্রদলের ৫৯২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

 

 

অপর দিকে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক কমিটি ২০১৮ সালের ৫ জুন শাহেদ আহম্মেদকে সভাপতি ও মমিনুর রহমান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। পরবর্তীতে এ কমিটি দীর্ঘদিন মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় পরে থাকে যার কারণে কোন আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে না।

 

 

তার কারণে কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবন ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল। কিন্তু সামনে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের জন্য কমিটি করতে পিছিয়ে পরে কেন্দ্র। ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষিত সর্বশেষ মহাসমাবেশ।

 

 

এই সমাবেশে কারা কার নেতৃত্বে যোগদান করবে এ নিয়ে চলছে তর্ক বিতর্ক যার কারণে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছে নেতৃত্ব কারো হাতে না থাকার কারণে সবাই সবাইকে নেতা ভাবছে কেউ কাউর কথা শুনছে না।

 

 

অপর দিকে বলয়কৃত রাজনীতি ধুকছে বিএনপি যার কারণে সবাই যার যার বলয়কৃত নেতার ইন্দনে নিজেদের নেতা মনে করে বিএপির ছোট নেতৃবৃন্দ। সকল দিক মিলিয়ে দেখা মিলে দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র সংগঠন অনেকটাই ছন্নছাড়া হয়ে পরেছে।

 

 

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ যুগের চিন্তাকে জানান, আমাদের কমিটি দীর্ঘদিন যাবৎ মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় পরে রয়েছে। আগামী ৬ তারিখে আমাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি সম্মেলন হবে। তার পরে দেখি যদি কমিটি দেয় তাহলে হতে পারে।

 

 

আর আমি যতটুকু জানি এখনই কমিটি হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই একটু সময় লাগবে। কারণ আগে কেন্দ্রীয় কমিটি হবে। পরে মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনগুলো রয়েছে সেগুলো দেখে দেখে নবাগত কমিটি গঠন করা হবে।

 

 

আর ইতি মধ্যে আমরা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে ও মাঠে কাজ করে যাচ্ছি এবং সবাইকে উজ্জ্বীবিত রেখেছি। আর এখন আমার বয়স কম যার কারনে আমি যুবলীগের নেতৃত্বে আসতে পারবো না। যদি কমিটি পূর্নগঠন করা হয় তাহলে আমি সাবেক হয়েও ছাত্র রাজনীতি করবো।

 

 


এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহেদ আহম্মেদ যুগের চিন্তাকে জানান, আমাদের ছাত্রদলের নবাগত কমিটি ইতি মধ্যে হয়ে যেতো কিন্তু আমাদের ১০ই ডিসেম্বরের যে মহাসমাবেশ হতে যাচ্ছে যার কারনে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি।

 

 

আর ১০ই ডিসেম্বরের যে সমাবেশ হবে সেখানে যেতে যাতে কোন নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ সৃষ্টি না হয় সেদিকে ও আমরা খেয়াল রাখবো। এখন আমরা সাবেক অবস্থায় থাকার পরে ও পর্দার আড়ালে থেকে ও তাদের পিছনে আমরা সাপোর্ট দেব। কারণ আমরা চাই আগামী ১০ই ডিসেম্বরের আমাদের সমাবেশ সফল করতে।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর