শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঝিনুক হাউজের কুকর্মে অস্থির এলাকাবাসী

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২২  


# খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে: এডিশনাল এসপি


ফতুল্লার শাসনগাঁও বিসিক শিল্প এলাকায় ১ নম্ব গেটের উত্তর পাশে ঝিনুক গেষ্ট হাউজ দেহ ব্যবসার পরিচালনার অভিযোগ নিয়ে শহরে হৈ চৈ শুরু হয়েছে। সেই সাথে এই গেষ্ট হাউজ বন্ধ করার জন্য স্থানীয়রা জোর দাবি তুলেছে। তাছাড়া এই বিসিক শিল্প এলাকায় এই ন্যাক্কার জনক অপকর্ম পরিচালনা করায় মানুষ নিন্দা প্রকাশ করেন।

 

 

পাশাপাশি প্রশাসনকে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত জুন মাসে জেলা প্রশাসক বরাবর, পুলিশ সুপার এবং সদর উপজেলা ইউএনও বরাবর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এলাকাবাসী আবেদন করে অভিযোগ দেন। এতো দিন বিষয়টা গোপন থাকলেও এখন তা প্রকাশ্যে চলে আসায় নগরবাসীও ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।

 


এদিকে গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় শামীমের শেল্টারে বিসিক ঝিনুক হাউজে দেহ ব্যবসা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এলাকাবাসিও আনন্দ প্রকাশ করে জানান এইবার যদি ঝিনুক গেষ্ট হাউজের অপকর্ম বন্ধ হয়। তাছাড়া এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, বিসিক ঝিনুক গেষ্ট হাউজ এর আগে শহরের ১ নম্বর রেলগেট সংলগ্ম এলাকায় ছিল।

 

 

সেখান কয়দিন পর পর অভিযান হওয়ায় তারা এবার স্থান পরিবর্তন করে বিসিকে ঘাঁটি বেঁধেছে। অপরদিকে বিসিক ঝিনুক গেষ্ট হাউজ শামীম তালুকদার জুয়ার আসর বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা মুখ খুলতে শুরু করেছে।

 

 

তিনি প্রভাব বিস্তার করে অসহায় মানুষের জায়গা দখল করে জোর করে লিখে নেয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসির। তবে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন শামীম তালুকদার। নারায়ণগঞ্জের নাম করা টানবাজার পতিতালয় ১৯৯৯ সালে জুলাই মাসে সাধারণ জনগণ ও প্রশাসন মিলে শেষ রাতে যৌনকর্মীদের ওপর অভিযান পরিচালনা করে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়।  

 

 

বিভিন্ন সভা সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন ৯৬ তে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পর টানবাজার পতিতালয় উচ্ছেদ করবেন। সেই অনুযায়ী করেছেও। তবে নগরবাসীর মতে টানবাজার পতিতালয় উচ্ছেদ হলেও শহর ও তার আশ পাশের এলাকার পাড়া মহল্লায় মিনি পতিতালয় গড়ে উঠেছে।

 

 

যে গুলোর বিরুদ্ধে তেমন একটা ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসন জানলেও তা নিয়ে নিরবতা পালন করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে তারাও সেখান থেকে ফায়দা নিয়ে থাকেন। এবার যুগের চিন্তার অনুসন্ধানে খোঁজ মিলেছে ফতুল্লার বিসিক শিল্প এলাকার ১ নম্বর গেটের উত্তর পাশে ঝিনুক গেষ্ট হাউসে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘ দিন যাবত একটি চক্র।

 

 

ঝিনুক গেষ্ট হাউস নামক দেহ ব্যবসার পতিতালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিন মাস আগে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসে অভিযোগ প্রদান করেন এলাকাবাসী। দেহ ব্যবসা চালানো গেষ্ট হাউসের মালিক শামীম তালুকদার। এই পতিতালয়ের ম্যানেরজার হিসেবে আছেন বিল্লাল হোসেন।

 

 

অভিযোগ রয়েছে এই শামীম তালুকদার প্রভাব বিস্তার করে তিনি এখানে ৫ বছর যাবত ঝিনুক গেষ্ট হাউসে অসহায় মেয়েদের দিয়ে জোর পূর্বক ভাবে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এসময় সাংবাদিকরা ঝিনুক গেষ্ট হাউসে প্রবেশ করলে এখানকার ম্যানেজার বিল্লাল বাধা প্রদান করেন। বিশেষ পেশার কয়েকন ব্যক্তিকে দৈনিক হিসেবে টাকা দেন বলে জানান তিনি।

 

 

এমনকি অর্থ প্রলোভনে মেয়েদের এখানে এনে তাদের দিয়ে যৌন কর্মী হিসেবে কাজ করানো হয়। স্থানীয়রা জানান, ঝিনুক গেষ্ট হাউসে দ্বিতীয় তলা এবং তৃতীয় তলা মিলে প্রায় ২০ টি রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমের চাবি টানিয়ে রাখা হয়। এখানে ঘন্টা প্রতি রুম ভাড়া দেয়া হয় ১ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

 

আবার অনেক ক্ষেত্রে বড় ব্যবসায়ী দেখলে তার কাছ থেকে ব্লাক মেইল করে তাকে নিঃস্ব করে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে করে কেউ লজ্জা শরমে মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পান না। বিশেষজ্ঞাদের মতে, দেহ ব্যবসা, মাদক বেচা-কেনা, মাদক সেবন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শুরুটাই হয় অসহিষ্ণুতা, হীনমন্যতা, ভারসাম্যহীন প্রেরণা এবং নষ্ট ইল্যুশন এর কারনে।

 

 

এই নষ্ট মাইন্ডসেট উদ্ধৃত চিন্তা-চেতনা সন্ত্রাসীদের মনোজগতে এমন ক্রোধ ও ঐদ্ধত্যপূর্ণ ইচ্ছ সৃষ্টি করে, যা তাকে টেনে নেয় হত্যা ও ধ্বংসের মত মহাপাপযজ্ঞে। এই নষ্ট কর্মের মধ্য দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বিস্তার করার পরিবেশ তৈরির ইচ্ছাপূরণের পৃষ্ঠপোষক ও অভয়রাণ্য হচ্ছে ঝিনুক গেষ্ট হাউজের মত নারকীয় স্থানগুলি।

 

 

এসব স্থান থেকেই যেসব কর্মকান্ডের গোড়াপত্তন হয় তা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে সমাজ ও জাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শামীম তালুকদারের শেল্টারেই এই সকল অপকর্ম হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসির।তাই বিশাল পতিতালয়টি উচ্ছেদের জন্য আবেদন জানান এলাকাবাসী।

 

 


এবিষয়ে শামীম তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঝিনুক গেষ্ট হাইজ ভবনের মালিক তিনি। এই ভবনের দ্বিতীয় তলা এবং তৃতীয় তলা জাহিদ নামের এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়েছে।  অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ‘ক’সার্কেল নাজমুল হাসান বলেন, এবিষয়ে আমার জানা ছিলনা। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর