শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

তবে কেন এত অভিমান?

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২১  

# একদিন চলে যেতে হবে আইভী-শামীম-সেলিম ওসমানকেও


# দূরত্ব অনেকটাই ঘুঁচে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে


# আর কোনো বিরোধ দেখতে চায় না মানুষ


# শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করার আহবান সবার



আরো বহুকাল আগেই চলে গেছেন আলী আহম্মেদ চুনকা এবং শামসুজ্জোহা। সাম্প্রতিক সময়ে চলে গেলেন নাগিনা জোহা, মমতাজ বেগম। এমন কি তাদের সন্তান নাসিম ওসমানও চলে গেছেন আরো আগেই। আর এটাই স্বাভাবিক। একদিন আইভী, শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানকেও চলে যেতে হবে। এখনই তাদের যথেষ্ঠ বয়স হয়েছে।

 

তবে কেনো এতো বিভেদ বিরোধ? নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে মেয়র আইভী কখনো সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানকে অযথা কখনো কোনো আক্রমন করে বক্তব্য রেখেছেন এমন কথা কেউ বলতে পারবে না। তবে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের পর ত্বকীর পিতা এবং সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ যখন এই হত্যাকান্ডের জন্য ওসমান পরিবারের সদস্যদের দায়ী করেছেন তখন আইভীও এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার চেয়েছেন। এছাড়া তাদের মাঝে অন্য কিছু নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।

 

অথচ শামীম ওসমান এবং তার কিছু অনুগত নেতাকর্মী সব সময় মেয়র আইভীর পেছনে লেগে থাকতে দেখা গেছে। আইভীর বিরুদ্ধে সারা শহরে অশ্লীল পোষ্টার সাটানো হয়েছিলো এবং সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রকাশ্য জনসভায় মেয়রকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বার বার। যদিও এখন শামীম ওসমান অনেকটাই এই পথ থেকে সরে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।  সর্বশেষ আইভীর মায়ের মৃত্যুতে তাদের মাঝে অনেকটাই দূরত্ব ঘুঁচে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ মেয়রকে শান্তনা জানাতে একদিন আগে ও পরে শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমান দুই ভাইই গিয়েছেন।

 

তাই নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের দাবি তাদের মাঝে এই সৌজন্যবোধ যেন স্থায়ী হয়। নারায়ণগঞ্জের মানুষ সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান এবং সিটি মেয়রের আইভীর মাঝে আর কোনো বিরোধ দেখতে চান না। মানুষ মনে করেন যথেষ্ঠ হয়েছে। আর নয়। মেয়র আইভীর মায়ের মৃত্যুর পর সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমান দুই জনই মেয়রের বাসায় যান এবং তাকে ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহানুভুতি জানান। সেলিম ওসমান মরহুমা মমতাজ বেগমের নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন আর শামীম ওসমান একদিন পরে মরহুমার কবর জিয়ারত করেন এবং তার বাড়িতে গিয়ে মেয়র আইভী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সমবেদনা জানান।

 

ফলে বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে নাড়া দেয়। এ বিষয়ে সাধারন মানুষের প্রতিক্রিয়া হলো, মানুষ মরণশীল। একদিন শামীম ওসমান এবং আইভীকেও চলে যেতে হবে। তবে কোনো এতো বিরোধ? নারায়ণগঞ্জের মানুষ আর তাদের মাঝে কিনো বিরোধ দেখতে চায় না। তারা দুইজন এক সাথে কাজ না করলেও যেনো নতুন করে বিরোধে না জড়ান। যার যার কাজ নিয়ে তারা যেনো ব্যস্ত থাকেন। উন্নয়ন কাজে যাতে একজন অপরজনকে সহায়তা করেন। কারণ যেভাবে হোক এই দুই পরিবারের হাতেই মহান আল্লাহপাক ন্যস্ত করেছেন নারায়ণগঞ্জবাসীর ভাগ্য। উন্নয়নের দায়িত্ব তাদের হাতে। এই শহরকে শান্ত রাখার দায়িত্বও তাদের হাতে। মানুষ এই শহরে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তাদের বিরোধের কারণে অতীতের মতো শহর আর কখনো গরম হোক এটা চায়না শহরবাসী।

 

এছাড়া শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান এবং মেয়র আইভী তিনজনেরই যথেষ্ঠ বয়স হয়েছে। দুদিন আগে-পরে তারাও চলে যাবেন। তাই তাদের মাঝে সম্পৃতির রাজনীতিই দেখতে চায় নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। এদিকে স্ত্রীর অসুস্থ্যতার কারণে শামীম ওসমান একদিন পরে গিয়েছেন মেয়র আইভীর বাড়িতে। কিন্তু দেরীতে হলেও এই এমপি মেয়ররের পরিবারে পাশে দাঁড়ানোর কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরের সর্বত্র ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়।

 

প্রসঙ্গত এর আগে মেয়রের মা মমতাজ বেগমের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। একই ভাবে বিবৃতি দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়রের বাড়িতে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। তবে শামীম ওসমান সঙ্গে সঙ্গে না যাওয়ায় বিভিন্ন সংবাদপত্রে কিছুটা সমালোচনা হয়। বলা হয় তিনি স্ত্রীর অসুস্থ্যতার কারণে যেতে পারেননি। এতে নারায়ণগঞ্জের কিছু সংবাদপত্রে সমালোচনা করে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

 

রিপোর্টগুলিতে বলা হয়, শামীম ওসমান অজুহাত দেখিয়ে মেয়রের মায়ের মৃত্যুতেও গেলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে মেয়র আইভীর মায়ের কবর জিয়ারত করলেন এবং তার পরিবারকে শান্তনা জানাতে তার বাড়িতে ছুটে গেলেন। মানুষ আশা করে এখন থেকে দুই ওসমান এমপি এবং মেয়র আইভী জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। মেয়রকে শান্তনা জানাতে গিয়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আবেগপ্রবণ হয়ে পরেন। তিনি মন্তব্য করেন চাচী আমাকে তার নিজের হাতে খাইয়েছেন। গতকাল নারায়ণগঞ্জের সব কয়টি লোকাল পত্রিকা শামীম ওসমানের এই আচরণকে ইতিবাঁচকভাবে তুলে ধরেন। ফলে সর্বস্তরের জনগণের মাঝেও প্রসংশিত হন শামীম ওসমান।

 

বৃহস্পতিবার মেয়র আইভীর মায়ের জন্য আয়োজিত দোয়া মাহফিলেও অংশ নেন এমপি শামমি ওসমান। আর সেলিম ওসমান সম্পর্কে মানুষের মূল্যায়ন হলো তিনি বরারবরই উদার। তিনি সব সময় মেয়র আইভীর সাথে মিলেমিশে কাজ করতে চান। কিন্তু এক শ্রেণির দালাল চাটুকারের কারণে শেষ পর্যন্ত আর সেটা হয়ে উঠেনি। তবে মানুষ মনে করেন এবার পরিস্থিতি পাল্টাবে। এখন কারো কান কথা শোনা থেকে বিরত থাকবেন তিন নেতা। মরহুমা মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে শোকে কাতর অনেকেই আইভীর বাড়িতে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানকে দেখে খুশী হয়েছেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর