শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বন্দরে দুর্বল বিএনপি’র নেতৃত্ব

নীরব প্রকাশ

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২২  


 
# ’৯১ এর পর জোরালো ভূমিকা রাখে বন্দর বিএনপি

# দলের বিরুদ্ধে গিয়েও ফায়দা লুটেন অনেকে

# বন্দরে এখন শত শত, হাজার হাজার নেতা তৈরি হচ্ছে : নুরুদ্দীন আহমেদ

 

 
১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন সরকার গঠন করে, তখন বিএনপির সমর্থন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন (সদর ও বন্দর) এর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এডভোকেট আবুল কালাম। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী জালাল উদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই অনেকটা আকস্মিকভাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রথম সারির রাজনীতিতে চলে আসেন। 

 


তখন নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে থাকা নেতৃবৃন্দের সাথে পাল্লা দিয়ে একজন ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এডভোকেট আবুল কালাম। তার নেতৃত্বে নীতি নির্ধারক পর্যায়েও অনেকটা জোরালো ভূমিকা রাখে বন্দর বিএনপি। এরপর ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন আবুল কালাম। সেই মেয়াদে অবশ্য বেশিদিন টিকতে পারেনি বিএনপি। একই বছর জুনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ধীরে ধীরে অনেকটা-ই নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন আবুল কালাম। 

 


অন্যদিকে একই বছর বিএনপিতে যোগদান করেন এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। সে সময় ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে আবুল কালামের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন তিনি। অন্যদিকে আবুল কালামের নিস্ক্রিয়তায় বন্দর বিএনপিতে বাড়তে থাকে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল। একদিকে দল থেকে নুরুদ্দীন আহমেদকে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ঘোষণা দিলেও নিজেকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন আবুল কালামের একান্ত অনুগত্য ও শিষ্য আতাউর রহমান মুকুল। 

 


এমনকি তখনকার বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এবং জোট থেকে চেয়ারম্যান পদে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরউদ্দীন আহম্মেদকে সমর্থন করা হলেও পরে কৌশলে তা বাগিয়ে নেন মুকুল। এর পর থেকেই বন্দর বিএনপি অনেকটা'ই কোমায় চলে যায়। বন্দর বিএনপির তৃণমূলের মতে, তখন থেকে আবুল কালাম এবং তৈমুর আলম খন্দকার এই দুই ধারায় বিভক্ত হওয়া শুরু হয় বন্দর বিএনপি। এরপর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে কালাম ভক্তদের দেখা না গেলেও বিএনপি থেকে সুবিধা নিতে ছাড়েননি তারা।

 


মহানগর বিএনপির বর্তমান সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিএনপি বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আসে। আর এর ফল স্বরুপ একাধিবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। অন্যদিকে এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে এড. আবুল কালামের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। 

 


একই সাথে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে জোরালো ভূমিকার রাখার মতো বন্দরের তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরে বিএনপির রাজনীতিতে কালাম-মুকুল বলয়ের বাইরের কিছু নেতা কর্মী ছোট ছোট কর্মসূচী পালনের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকায়ও বেশ কিছু বিএনপি সমর্থক দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বন্দর বিএনপির নিস্ক্রিয়তা ও দ্বিমূখী আচরণের বিষয়ে কথা বলার জন্য মহানগর বিএনপির সহসভাপতি এবং বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের মোবাইলে বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি তাকে। 

 


অন্যদিকে বন্দর বিএনপির বর্তমান হালচাল বা অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য সাবেক এমপি এডভোকেট আবুল কালামের পুত্র ও মহানগর বিএনপির স্বেচ্ছাসেক দলের সভাপতি আবুল কাউছার আশার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ করেননি তিনি। বন্দর বিএনপির বর্তমান অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুদ্দীন আহমেদ জানান, ‌‘একসময় আমাদের বন্দর বিএনপির আতাউর রহমান মুকুল এবং আমার সাথে একটি দীর্ঘদিনের অনৈক্য ছিল। অনেক কারণেই আমার একটা বলয় ছিল, ওনার একটি বলয় ছিল। 

 


এখন বন্দর বিএনপি অনেকটাই চাঙ্গা। আমরাও সব বিভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমাদের এখানে এখন শত শত, হাজার হাজার নেতা তৈরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন অনেক শক্তিশালী। মহানগর কমিটি গঠন করার পর পরই আমাদের থানা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো গঠন করা হবে। এগুলো গঠন হয়ে গেলে আমাদের কর্মকাণ্ডে আবারও পূর্ণ যৌবন ফিরে পাবে। আমাদের ভিতর এখন আর কোন সমস্যা নাই। বন্দর থেকে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করছি।’ এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর