শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিতর্কিত হাই-বাদলের বিদায়ের ঘন্টা

ইফতি মাহমুদ

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২২  


 # ২৩ অক্টোবর সম্মেলনে নতুন মুখ চাইছে তৃণমূল



আগামী ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উচ্ছ্বাসিত কারণ সম্মেলনের মাধ্যমেই জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হতে যাচ্ছে। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে থাকা হাই-বাদল আবার পূণরায় শীর্ষ দুই পদে বহাল থাকতে চায়।

 

 

 

 

 

 

 

 

তাদের ফের নেতৃত্বে আসা বহাল থাকা নিয়ে জেলার অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা বিরোধীতা করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তাদের সকল কর্মকান্ড তুলে ধরেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলার নেতাদের কথা শুনে বলেন, নেতৃত্বে কার হাতে তুলে দিবেন সেটা নির্ধারণ করবেন দলের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

 

 

 

 

 

 

 

ইতিমধ্যেই বর্তমান কমিটির নেতাদের আমলনামা দলীয় প্রধানের কাছে জমা পড়েছে। কাজই ধরে নেয়া যায় নানা অভিযোগে জর্জরিত বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিদায়ের ঘন্টা বাজতে শুরু হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সকল তথ্য নিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে বহু অভিযোগ।

 

 

 

 

 

 

 

 

সব কিছু দেখে বিভেচনা করে ঘোষনা করা হবে নতুন কমিটি। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির প্রধান শীর্ষ দুই নেতা হাই-বাদলের অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে দলের ভিতরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। আর এই বিভক্তির নির্মূলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা হাই-বাদল কখনোই কোন রকম প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি উল্টো তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপ বিভক্তি সৃষ্টির নৈপথ্যে ছিল।

 

 

 

 

 

 

 

 

জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই দুই নেতা হাই-বাদলের  বির্তকিত কর্মকান্ডের অন্যতম ছিল কমিটি বাণিজ্য। আর এই কমিটি বাণিজ্য করে উপজেলা ভিত্তিক বহু শীর্ষ নেতাকে মাইনাস করে কমিটি গঠনের নজির রয়েছে। পাশাপাশি নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাইকে সভাপতি, সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ৬টি পদ শূন্য রেখে ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কমিটির গঠনের প্রথম থেকেই সভাপতি এবং সম্পাদকের নানা কর্মকান্ডের কারণে তাদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের বিভিন্ন অভিযোগে অনেকটাই বিতর্কিত হয়ে পড়েন দুই নেতা। পাশাপাশি কমিটি বাণিজ্য নিয়ে সারাবছরই নানা অভিযোগে গণমাধ্যমে বির্তকিত হয়ে থাকতেন হাই-বাদল। বেশ কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলাকে দল থেকে অব্যাহতি দেন হাই-বাদল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ চাঁদাবাজি ও জমিদখলসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। পরে তারাই আবার অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করেন। আরও জানা যায়, ২০১৯ সনে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন জেলা সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদল। আর এই কমিটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে ওটমা স্কুলে সভা করতে গিয়ে লাঞ্চিত হতে হয় তাদের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পরবর্তীতে ২০২০ সনে এই কমিটিকে পূর্ণগঠন করেন এবং তাদের মনগড়া কমিটিতে বঞ্চিত নেতাদের পরবর্তীতে স্থান দেন। সর্বশেষ ২০২২ সনের ৩ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়। সেখানেও আব্দুল হাইকে লাঞ্চিত হতে দেখা যায়। তাকে ভূয়া বলে স্লোগান দেন নেতা কর্মীরা। আর এই সোনারগাঁয়ে কমিটি বানিজ্যের কারণে সবচেয়ে বেশী বির্তকিত হাই-বাদল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এছাড়া সোনারগাঁ উপজেলায় ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে হাই বাদলের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তখন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে একক ভাবে কেন্দ্রে নাম পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদলের সাথে বিতর্কিত যুবলীগ নেতা জিকে শামীমের সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই জি কে শামীমকে জেলা আওয়ামী লীগের শূন্য পদেও অধিষ্ঠ করতে চেয়েছেন। সূত্রে জানা যায়, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি খাজা রহমতুল্লাহ মারা যাওয়ার পর তার শূন্য পদে আজকের যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামী জিকে শামীমের নাম প্রস্তাব করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও ভিপি বাদল। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় কমিটিতে রাখার জন্য এই জি কে শামীমের নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আর এই নাম প্রস্তাব করেছিলেন আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল। ‘সেসময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, জিকে শামীমকে আমরা চিনি না’। অভিযোগ রয়েছে টাকার বিনিময়ে জিকে শামীমকে কমিটিতে ঢুকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এছাড়া শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নতুন ভবনের টেন্ডারের কাজ পান বিতর্কিত এই জিকে শামীম। সে গ্রেফতার হওয়ার পরে সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের ‘আমলনামা' পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তিনি নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও নেতাদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। নেতাদের ‘সি.এস আর.এস রেকর্ড রয়েছে তার কাছে। কাজেই যোগ্য ব্যক্তির কাধেই নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। গতকাল নারায়ণগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমনটাই জানিয়েছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 


জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় মেয়র আইভী হাই-বাদলের বির্তকিত কর্মকান্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যখন হয় কারা মনোনয়ন পায় তখন আমরা কোন বর্ধিত সভা পাই না। জেলা আওয়ামী লীগের সভা হয় না। পরবর্তীতে দেখা যায় মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ঘোষনা হয়ে যায় কিন্তু নেতা কর্মীরা জানে না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এটা জেলার নেতৃবৃন্দেরও একটা দায়িত্ব থাকে। সিদ্ধান্ত নিবে কেন্দ্র কাকে মনোনয়ন দিবে। কিন্তু আমাদের সাথে বসলেতো মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। যেই ভাবে নেত্রী দলকে চালাতে চাইবে সেই ভাবেই আমরা মেনে নিবো। কিন্তু মানুষের কথাতো শুনতে হবে। এখানে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী দাড় করিয়া জাতীয় পার্টিকে পাশ করানো হয়। এটা কেন আমরা বার বার সহ্য করবো। সহ্যের একটা সিমা থাকতে হবে।    এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর