শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্রয়লার মুরগিতে ডাবল সেঞ্চুরি

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

 

# দাম বাড়ায় বেকায়দায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা
# মাংস ছেড়ে বেশির ভাগই ঝুঁকছেন সবজিতে

 

 

আমিষ আমাদের খাদ্যের ছয়টি উপাদানের একটি। আর বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা ও সহজলভ্য আমিষের উৎস ব্রয়লার মুরগি। মুরগির মাংসে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। যা শরীর গঠন, মেধা বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে শহরের দ্বিগুবাবুর বাজারসহ নারায়ণগঞ্জের সব ব্রয়লার দোকানে ব্রয়লার মুরগিসহ সব মুরগির দাম বেড়েছে। যার কারনে ব্রয়লার মুরগি সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

 

নারায়ণগঞ্জের দ্বিগুবাবুর বাজারসহ কয়েকটি ব্রয়লার মুরগির দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং পোল্ট্রি সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারনে বাজারে ব্রয়লার মুরগিসহ সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ায় বাজার ব্যয় সামলাতে কাটছাঁট করতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। গরুর মাংস বা খাসির মাংসের দাম বেশি হওয়ার কারনে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তরা ব্রয়লার মুরগিতে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ শহরের দ্বিগুবাবুর বাজারের একাধিক ব্রয়লার মুরগি ক্রেতা। মো. আমিনুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা। যে আয় তাতে গরুর মাংস খাওয়া যেন সপ্নের মত। আমিষের চাহিদা মেটাতে ব্রয়লার মুরগির উপর নির্ভর করতে হয় আমাদের। কিন্তু এই ব্রয়লার মুরগির দাম অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে কয়েকদফা বাড়ার কারনে আর মনে হয় কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

 

দ্বিগুবাবুর বাজারের ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা মো. শামিম বলেন, অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্রয়রার মুরগিসহ সব মুরগির দাম বেড়েছে। বাবা মায়ের দোয়া চিকেন হাউজ-এর ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, কক মুরগি ২৯০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ২৭০ টাকা, প্যারেন্ট খাসি মুরগি ৩১০ টাকা এবং প্যারেন্ট খাসি মোরগ ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলার বাসিন্দা নাদিরা বেগমের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৫ জন। এই ৫ জনের পরিবার চলে এক জনের উপার্জনে। তিনি জানান, আগে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মুরগির মাংস খাওয়া হতো। কিন্তু সব ধরনের মুরগির দাম বাড়ার কারনে এখন আমাকে শাক-সবজির দিকেই বেশি ঝুঁকতে হচ্ছে।

 

এদিকে বিসিক শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি ব্রয়রার মুরগির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়রার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়। এখানকার বাবুল ব্যপারী পোল্ট্রির দোকানদার জানান, আমাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই বিক্রিও বেশি দামে হচ্ছে। আমরা বেশি দামে মুরগি কিনে তো আর কম দামে বিক্রি করতে পারি না। এই দোকানের পাশেই রয়েছে কবির পোল্ট্রি নামের আরেকটি ব্রয়রার মুরগির দোকান। কবির পোল্ট্রির দোকানে কথা বললে এই দোকানদার বলেন, গত কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি আরোও বলেন, আমাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এখন সব ধরনের মরগি নিতে আগে থেকে ফোনে কথা বলে অর্ডার করে রাখতে হয়। তা না হলে মুরগি পাওয়া যায় না। শেষে তিনি বলেন, এখন সব কিছুর দাম বাড়ছে। পোল্ট্রির সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়ার কারনে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে বলে তিনি জানান।

 

এই দোকানে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসেছেন বিসিকের গার্মেন্টস কর্মী নাজমা বেগম। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, “গার্মেন্টস-এ কাজ করি। যা বেতন পাই তা শুধু তরিতরকারি, চাল আর ঘর ভাড়া দিতেই চলে যায়। মাছ-মাংস কিভাবে খাবো। গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি। ৭০০ টাকা দিয়ে আমার পক্ষে এই দামি গরুর মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। দিনে দিনে সব কিছুর দাম বাড়ছে। আমাদের বেঁচে থাকা অনেক কঠিন হয়ে পরছে। এদিকে বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে। কোথায় যাবো কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েটা কয়দিন ধরে বায়না ধরেছে মুরগি দিয়ে ভাত খাবে। তাই দোকানে এসেছি এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনবো বলে। কিন্তু এখানে এসে দেখি আজ এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯৫ টাকা। আমি সাথে করে নিয়ে এসেছি ২০০ টাকা। কিভাবে যে কি করি”।

 

বিসিক শিল্পাঞ্চল-এর একজন চিকিৎসক মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, “একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫০-৭০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন। যা অল্প দামে মুরগির মাংস থেকে পাওয়া যেত। কিন্তু নিত্যপন্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে মানুষের প্রোটিন গ্রহণের ওপর প্রভাব পরছে। কারন টানাপড়েনে থাকা পরিবারগুলো ব্যয় সামলাতে সবার আগে প্রোটিনজাত খাবার কেনা কমিয়ে দেয়”।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর