শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বামীরা প্রয়াত বহু আগে, সন্তানদের আগলে রেখেছিলেন দুই মা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২১  

# ‘শামীম আইভীকেও একদিন চলে যেতে হবে। তাই বিরোধ না বাড়িয়ে জনগণের জন্য কিছু করে যাওয়াই হতে পারে তাদের আসল পুজি’
 

তারা দুইজন ছিলেন এই শহরের দুই রাজনৈতিক পরিবারের চালিকা শক্তি। এদের একজন প্রয়াত জননেতা আলী আহম্মদ চুনকার স্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর মা মমতাজ বেগম এবং অপরজন অপর প্রয়াত জননেতা একেএম শামসুজ্জোহার স্ত্রী ও সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান এবং একেএম সেলিম ওসমানের মা নাগিনা জোহা।

 

আলী আহম্মেদ চুনকা এবং শামসুজ্জোহা দুইজনেই এই শহরের অভিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তারা ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। কিন্তু তারা আরো অনেক আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আলী আহম্মদ চুনকা মৃত্যুবরন করেছেন এখন থেকে ৩৬ বছর আগে, ১৯৮৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী এবং শামসুজ্জোহা মৃত্যুবরণ করেছেন তার দুই বছর পর ১৯৮৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী। ফলে তাদের মৃত্যুর পর এই দীর্ঘ সময় দুই পরিবারের হাল ধরেছিলেন এই দুই নারী। তারা তাদের সন্তানদেরকে গড়ে তুলেছেন। আলী আহম্মদ চুনকা মৃত্যুর সময় পাঁচ সন্তান রেখে গেছেন।

 

এদের মাঝে ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী বিগত প্রায় আঠারো বছর ধরে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার এবং পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। তার ছোটো ভাই আহম্মদ আলী রেজা উজ্জল নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। অপরদিকে শামসুজ্জোহার রেখে যাওয়া সন্তানদের মাঝে একেএম শামীম ওসমান এবং একেএম সেলিম ওসমান এখন নারায়ণগঞ্জের দুটি আসনের এমপির দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের আরেক ভাই প্রয়াত নাসিম ওসমানও একাধিক বার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি ছিলেন। তাই দুই পরিবারের এই সন্তানদের গড়ে তোলার পেছনে দুই মায়ের অবদানই বেশি। দুই পরিবারে স্বামীর মৃত্যুর পরেও দুই মা তাদের সন্তানদের আগলে রেখেছিলেন এবং গড়ে তুলেছেন।

 

এদিকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে মেয়র আইভীর আগেই ওসমান ভাইদের উথ্যান ঘটে। কিন্তু বিগত বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে মেয়র আইভী এসে নারায়ণগঞ্জ পৌর সভার মেয়রের দায়িত্ব গ্রহন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং বন্দর থানা এলাকাকে সম্পৃক্ত করে গঠন করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে পর পর তিনবার জয়ী হন মেয়র আইভী। এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র আইভীর সাথে একেএম শামীম ওসমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন মেয়র আইভী। কিন্তু তারপর থেকেই এই দুই নেতার মাঝে শুরু হয় তীব্র বিরোধ। শামীম ওসমান কোনো মতেই মেয়র আইভীকে মেনে নিতে পারছিলেন না।

 

তবে শেষ পর্যন্ত মেয়রের মায়ের মৃত্যুতে একেবারে পাল্টে যায় চিত্র। শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমান দুই ভাইই মেয়রের বাড়িতে যান এবং মেয়রকে ও তার পরিবারকে শান্তনা জানান। ফলে গতকাল নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতিবাঁচক প্রতিক্রিয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষও মনে করেন এ জীবন ক্ষণস্থায়ী। তাদের পিতা মাতার মতো একদিন মেয়র আইভী এবং শামীম ওসমানকেও চলে যেতে হবে। তাহলে কি লাভ এভাবে সংঘাতে জড়িয়ে থেকে? নারায়ণগঞ্জ শহরের অনেকে মনে করেন মমতাজ বেগম এবং নাগিনা জোহা অনেক কষ্ট করে তাদের সমন্তানদের গড়ে তুলেছেন। তাই তাদের আতœার শান্তির জন্য হলেও সন্তানদের উচিৎ একে অপরকে ঘায়েল করার রাজনীতি বন্ধ করা।
 

এই বিভাগের আরো খবর