শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বন্দরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২২  


 
 

# চিঠি চালাচালিতেই আটকে আছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ
# চিঠি চালাচালি ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই : এটিও বন্দর
# স্থানীয় সাংসদের ঘোষিত চারতলা ভবন এখন শুধুই স্বপ্ন

 

 

‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। তাই কোন জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌছাতে হলে সেই জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাই বলা হয়ে থাকে ‘যদি কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাও, সর্বপ্রথম সে জাতির প্রাথমিক শিক্ষাকে ধ্বংস করে দাও। যদি কোনো জাতিকে পিছিয়ে রাখতে চাও, সর্বপ্রথম সে জাতির প্রাথমিক শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করো।’ আর তাই আমাদের দেশের সরকারের কাছে এই প্রাথামিক শিক্ষার বিষয়টিতে আলাদা গুরুত্ব থাকে। শিক্ষা ব্যবস্থা তরান্বিত করার জন্য নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি ও জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

 

কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার ধারাবাহিক সিস্টেমে গ্যাপ থাকার কারণে বন্দরের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এর ২৪ নং ওয়ার্ডের নোয়াদ্দা-কাইতাখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৬ নং ওয়ার্ডের রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এরই মধ্যে স্থানীয় সাংসদ নোয়াদ্দা-কাইতাখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে ছয়তলা ফাউন্ডেশনসহ চারতলা সম্পন্ন করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। পরে এই বিষয়ে আর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ২৬ নং ওয়ার্ডের রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ রশিদের বাড়ি সংলগ্ন। অন্যদিকে তিনি বর্তমান সাংসদেরও খুব কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত। ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ মূল ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হলেও অদ্যাবদি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করার লক্ষণ নেই।


 
২০২০ সালে নিলামের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ঝুকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর পিইডিপি-৪ বা চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কিংবা অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের অনুমোদন দেয়। যার মধ্যে এই বিদ্যালয় দুটির নামও উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। কবে নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে কিংবা আদৌ ভবন নির্মাণ হবে কি-না তার কোন সঠিক ব্যখ্যা বা উত্তর দিতে পারছেন না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা উপজেলা শিক্ষা অফিস। অথচ এই পিইডিপি-৪ নামক প্রকল্পের কার্যকর সময় বা প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ এর জুলাই থেকে ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী। তাই এই ভবনগুলো নির্মাণের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা দেখা গেছে।


 
গতকাল সরেজমিনে বিদ্যালয় দুটি ঘুরে দেখা যায় করুন চিত্র। নোয়াদ্দা-কাইতাখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন টিনের তৈরি একটি ঘরের চারটি রুমের তিনটিকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যটি অফিস রুম। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন শাহানা জানান, ’৯২ সালে প্রথম নবাঙ্কুর ক্লাবের সামনে কমিউনিটি স্কুল হিসেবে এই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। পরে ’৯৭ সালে এখানে স্থানান্তরিত করার সময় একটি বিদেশি সংস্থার উদ্যোগে ১ তলা ভবন করা হয়। বর্তমানের এখানে প্রায় তিনশত শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৪ জন। তিনি জানান, তিনটি রুমে এই ৪ জন শিক্ষিকার মাধ্যমে তিনশত শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪/৫ বছর আগে এখানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বিদ্যালয়ের তৎকালীন জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ ভবন দেখে ঘোষণা দিয়েছিলেন এই ভবনটি ভেঙ্গে এখানে ৬ তলা ফাউন্ডেশন করে ৪ তলা সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু এই বিষয়ে আর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।


 
২৬ নং ওয়ার্ডের রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে একতলা একটি ভবনের ৪টি রুমের ৩টিকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যটি অফিস রুম। এখানে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা পাঠ নিচ্ছে। এখানকার প্রধান শিক্ষক নাছিমা বেগম জানান, ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি ৭২-এ জাতীয়করণ করা হয়। এখানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪শত। যার জন্য শিক্ষকের সংখ্যা ৭। প্রায় দেড় বছর আগে জরাজীর্ণ মূল ভবনটি ভাঙ্গা হয়। তারপর নতুন ভবনের অনুমোদন হয়েছে জানি কিন্তু এরপর এই বিষয়ে আর কোন তথ্য পাচ্ছি না। স্কুল ভবনটি নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে শিক্ষা অফিসও কোন তথ্য দিতে পারছে না।


 
বন্দর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সাইফ উদ্দিন বিপ্লব বলেন, আমাদের কাছে সর্বশেষ যে তথ্য আছে তাহলো এই বিদ্যালয়গুলোর ভবন তৈরির ব্যাপারে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আমাদের অধিদপ্তর থেকে মিনিস্ট্রিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন ২০২২ সালের মাঝামাঝি চলে আসছি, কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের আর কোন অগ্রগতি নাই। এখন সেখান থেকে বলা হচ্ছে, আগে যেগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো যাচেছ, আপনাদেরটা সিরিয়াল অনুযায়ী আসবে। তিনি বলেন, আমরা শুধু তথ্য পাঠাতে পারি, কিন্তু সিদ্ধান্ততো আসবে উপর থেকে। এই বিষয়ে আমরা অনেক চিঠি পাঠিয়েছি। উপর থেকে অগ্রগতি না আসলে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কিছু করার নাই।

 

তিনি জানান, এই স্কুলগুলোর মধ্যে নোয়াদ্দার স্কুলটির অবস্থা খুবই খারাপ, এখন তদবীর করে কাজ আনার কোন সিস্টেম নাই। তাই কাগজপত্র চালাচালি ছাড়া আমাদের নিজেদের আর করার কিছুই নেই। এই বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানও চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে কোথায় তদবীর করে কিছু করা যাবে সেই বিষয়টি আমাদের জানা নাই।

 

তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে স্কুল ভবনগুলো করার একটি কাগজ পেয়েছিলাম এরপর আর কোন খবর নাই। তিনি জানান, সে সময় যে স্কুল ভবনগুলো নির্মাণ বা অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় তারমধ্যে আমাদের বন্দরের এই দুইটি বিদ্যালয়ের নামও উল্লেখ করা আছে। কিন্তু এরপর দেড় বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা আর কোন খবর পাইনি।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর