শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘আশায় আশাতন, পাকলে উড়াতন’

ফরিদ আহম্মেদ বাধন

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২১  

# অন্তর্কোন্দলের সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে
# কেন্দ্রে নাম না যাওয়ায় আক্ষেপ, অবমূল্যায়নের অভিযোগ
# গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেলেন দীর্ঘদিন সার্ভিস দেয়া নেতারা

 

 ফাগুন মাসে শিমুল গাছের ফুল ফুটেছিল। দুটি কাক একটি শিমুল গাছে এসে প্রতিদিন সময় কাটাতো। গাছে শিমুল ফুল দেখে তাদের মনে আশা জন্মেছিলো ফুল থেকে ফল হবে। আর ওই ফল হলে খুব মজা হবে। ফাগুন শেষে  বৈশাখ মাসে শিমুল ফুল ফলে রূপান্তরিত হয়।  একদিন ভোরে মনের আনন্দে কাকদুটি শিমুল ডালে এসে বসেছিল। একটি কাকা মনের আনন্দে শিমুল ফলে ঠোকড় দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করলো। অনেক চেষ্টা করা পর ফলটি ঠোঁট দিয়ে ফাটানোর পর ফলের মধ্য থেকে তুলা উড়ে আকাশে উড়ে গেল। দুঃখ করে একটি কাক অপর কাককে বলেছিলো ‘বন্ধু আশায় আশাতন, পাকলে উড়াতন’। অনেক আশায় গুড়ে বালি পড়েছিলো তাদের। 

 

ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শামীম ওসমান বলয়ের প্রভাবশালী মীর সোহেল আলী, ফরিদ আহম্মেদ লিটন, আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক ও ফাইজুলসহ বেশ কয়েকজনের অবস্থা হয়েছে ওই উড়ে যাওয়া তুলার মতোই। তারা যে ৩০ বছর যাবৎ ফলের আশা করেছিলেন তা শেষ পর্যন্ত উড়ে বাতাসে মিলিয়ে গেছে। পুরাতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমান। ফতুল্লায় পরবর্তী আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে একটা বড় ফাটল দেখা দিয়েছে, যা অবস্থাদৃষ্টে দেখা না গেলেও মনের মধ্যে অনেকেই পুষে রেখেছেন। কোনো এক সময় ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগে ঐ ফাটল বড় আকারে দেখা দেবে বলেও মনে করছে বিশ্লেষক মহল। 

 

হাতে গোনা দুই চারজন ফতুল্লার নয়া কমিটিতে স্থান পেলেও একটি বিশাল অংশ মনোক্ষুন্ন রয়েছেন। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেনা প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের কারনেই। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সমর্থণের বেলায় শামীম ওসমানকে অনেক ঘাম ফেলতে হয়েছে। নতুনদের মধ্যে সবার মন রাখতে গিয়েই তিনি ৩০ বছর যাবৎ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা লুৎফর রহমান স্বপনকেই সমর্থন করেছেন।
অনেকেই বলে থাকেন রাজনীতিতে শেষ বলে কথা বা খেলা নেই। সাংসদ শামীম ওসমান ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রশিদকে সামনে নিয়েই মনোনয়নের জন্য দৌড়ে গিয়েছিলেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দরবারে। সেই সময় ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগ,ছাত্রীলীগও তার জন্য জীবন বাজী রেখে মাঠে কাজ করেছিলেন। বিএনপি সরকারের সময় ফতুল্লায় যখন আওয়ামীলীগ কথা বলতে পারেনি, সেই সময় ফতুল্লার রাজনীতিই শামীম ওসমানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। হয়েছিলেন জাতীয় সংসদের সাংসদ। এরআগে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মুকুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। আর ঐ সময়ের পর শামীম ওসমান ফতুল্লায় বেশ কয়েকটি সভা করেছিলেন। সব দিক থেকে ফতুল্লার মায়া শামীম ওসমান এখনো ছাড়তে পারেননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ফতুল্লাকে তিনি ভিন্ন চোখেই দেখেন। অনেক নেতাকর্মীদের তিনি মন থেকে ভালোবাসেন। তবে তাঁর ভালোবাসা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে বর্তমানে সীমাবদ্ধ। তিনি ঐ মানুষের কারনে দলের অনেক ত্যাগী নেতাদের খোঁজ রাখতে পারেননা বা নেননা।  


ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কমিটি নিয়ে এখনো অনেকে মনোকষ্টে ভুগছেন। কারো মনের কষ্টের কথাগুলো শামীম ওসমান এখন আর শুনতে চাননা। তিনি আবদ্ধ একটি গণ্ডির মধ্য। ফতুল্লা থানা কমিটি করার সময় অনেককে আশা করেছিলেন পদ পদবী পাবেন। কিন্তু না,তাদের সেই পদ দেয়া হয়নি। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ছিলো না দীর্ঘ ৩০ বছর। এই ইউনিয়নে  অনেকে পঞ্চাশোর্ধ বয়সের রয়েছে। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে এখনো পারেননি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন প্রায় দুই যুগ ফতুল্লা ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের স্বাদ গ্রহণ করেছেন। ফতুল্লায় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ দলের অনেক নেতাকর্মী আশা করেছিলেন এবার স্বপন চেয়ারম্যানের পর তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাবেন। তাদের যে কোনো একজনকে শামীম ওসমান সমর্থনও করবেন। কিন্তু বাস্তব অর্থে তা হয়নি। যদি ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীক না থাকতো তাহলে যারা আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতেন।যারা দলীয় সমর্থণ চেয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই দলের জন্য পোড় খাওয়া মানুষ। কিন্তু দলীয় প্রতীকের কাছে বাধা পড়ে গেছেন অনেকেই। ইচ্ছা করলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করতে চাইবে না।  


এব্যাপারে ফতুল্লা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন,স্বপনের উচিৎ ছিলো নতুনদের জন্য জায়গা করে দেয়া। এতে তিনিও স্মরনীয় হয়ে থাকতেন। নতুনদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব আসলে একদিকে যেমন ইউনিয়নে নতুন করে সকলে উজ্জীবিত হতেন অপরদিকে  ফতুল্লাতেও আওয়ামীলীগের শক্তিশালী অবস্থান তৈরী হতো।    

এই বিভাগের আরো খবর