শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ২০ বছর আজ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২১  

আজ ১৬ জুন। নারায়ণগঞ্জ বোমা হামলা ট্রাজেডি দিবস। ২০০১ সালে এই দিনে নগরের চাষাঢ়ায় বিজয় স্তম্ভের আওয়ামীলীগ অফিসে নৃশংস বোমা হামলায় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলাসহ ২০ জন নিহত হয়। আহত হয় তৎকালীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এ হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতরা পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দিন কাটাচ্ছে অর্থ সংকটে ।

 

কুখ্যাত এই  বোমা হামলার ঘটনার পরদিনই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামী করে হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার  তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। অন্যদিকে বোমা হামলায় নিহত ফুটপাতেরর পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের ছেলে কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান ও তার দুই ভাইসহ অনেককে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

 

পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নিদের্শে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ২৭ জনকে ও ২০১৪ সলে হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ২২ জনকে আসামী করে  আদালতে অভিযোগ পত্র দখিল করে । এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন ।

 

আসামীদের মধ্যে বৃটিশ হাই কমিশনারের উপর বোমা হামলার মামলায়  মুফতি হান্নানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। ভারতে গ্রেফতার রয়েছে  সহোদর  আনিসুল মোরছালিন ও  মাহাবুবুল মুত্তাকিম । জামিনে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি  কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা শওকত হাসেম শকু ও ওবায়দুল হক । বাকী আসামীর পলাতক রয়েছে । ১০২ জন স্বাক্ষীর মধ্যে বাদী সহ ১৫ ব্যতিত কোন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি । এতে সংশয় ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিচার নিয়ে । ২০ বছরে ২০ হত্যা মামলার বিচার না পাওয়া ও জামিনে থাকা আসামীদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোতে শঙ্কা প্রকাশ করেন নিহতের স্বজনরা । ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের  সহায়তার  নানা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবী করেন তারা।


 
নিহত মসিউর রহমান মশুর ছোট ভাই বলেন, চাষাঢ়ায় বোমা হামলায় আমার ভাই সহ ২০জন মারা গেছেন। মামলার কোন অগ্রগতি দেখছিনা। ১০১ জন স্বাক্ষী আছে। তাদের স্বাক্ষী নেওয়া হচ্ছেনা। যারা আসামি প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। আমরা শংঙ্কিত ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি বিচার হবে কি না এ নিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি বোমা হামলার বিচারটি যেন তিনি উদ্যোগী হয়ে করেন।

 


নিহত আক্তার হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচাইতে ভয়াবহ বড় বোমা হামলাটি নারায়ণগঞ্জে হয়েছে। এর বাইরে যতগুলো বোমা হামলা হয়েছে সবগুলোর বিচার কিছু কিছু হয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জেরটির বিচার এখনো হয়নি। প্রতিবছরই বলা হয় কিন্তু বিচার হয়না। সাতখুনের বিচার হয়েছে। আমাদের সন্তানরা যখন প্রশ্ন করে আমরা আমাদের স্বজনদের হারিয়েছি এখন বিচার হচ্ছেনা কেন এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল আমার সন্তানের ব্যয়ভার দেবেন বলে বলেছিলেন, কিন্তু এরপর আর কেউ যোগাযোগ করেননাই, আসেনও নাই। আমরা  এখন আশায় আছি কত দ্রুত বিচার পাবো। 

 

বিভিন্ন কারণে মামলার আসামী ও স্বাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারায় বিচার বিলম্বিত হচ্ছে উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামলার বাদী এড. খোকন সাহা বলেন, ‘হতাশ হওয়ার কারণ নেই, এই মামলাটির বিচার সরকার অবশ্যই করবে। তবে স্বাক্ষী আসতে হবে তো। যারা ভিকটিম তাদের স্বজনদের দায়িত্ব রয়েছে কবে মামলার স্বাক্ষী দেবার তারিখ তা জানার। স্বাক্ষী দিলে অবশ্যই নেই বিচার হবে। বাংলাদেশে মামলার জট অনেক।

 

ফৌজদারী মামলায় বছরে ৪/৫ বার তারিখ পড়লেও এর মধ্যে স্বাক্ষী দেওয়া সম্ভব। আমি যখন মামলা ২৭ জনকে সাসপেক্ট করে মামলা করি। জোট সরকারের আমলে আমাকে না জানিয়ে দুটি ফাইনাল রিপোর্ট  দেয়া হয়। ২০০৮ সালে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি পুনর্জীবিত হয়। ২০১৪ সালে বর্তমান আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশীট হয়। ২০১৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত ২০ কিংবা ২২ জন স্বাক্ষী দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বিচার না হওয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছে।’


বোমা হামলার ঘটনার দায়ের করা দু’টি মামলা এখন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই   স্বাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য আছে জানিয়ে  অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এড.আব্দুর রহিম  বলেন, এক মাসে যদি ৮০ জন স্বাক্ষীও হাজির করা যায় তবে ৬ মাসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। আর স্বাক্ষী হাজির না হলে অপেক্ষা ছাড়া করার কিছুই নেই। 

এই মামলার দ্রুত বিচার নিস্পত্তি করে দোষীদের শাস্তি এবং প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রধামনন্ত্রী বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের  সহায়তা  করবেন এমন প্রত্যাশা নারায়ণগঞ্জবাসীরও ।

এই বিভাগের আরো খবর