শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচন নিয়ে নেতায় নেতায় অন্তর্দ্বন্দ্ব!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১  

দীর্ঘ ২৯ বছর পর ফতুল্লা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ঝুলে থাকা মামলাটি সম্প্রতি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে, মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ; এমন খবরে স্থানীয়দের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা গেলেও কে হবেন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী, তা নিয়ে দলটির তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চলছে নানামুখি আলোচনা। সাধারণ ভোটারদের মাঝে দেখা দিয়েছে কৌতুহল।

 

তবে, স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাসীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নেতায় নেতায় চলছে অর্ন্তদ্ব›দ্ব। সূত্রটির দাবি, দিন যত গড়াচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফতুল্লায় নেতায় নেতায় অর্ন্তদ্ব›দ্ব যেন ততই ঘণিভুত হচ্ছে। যদিও নেতাদের মাঝে সৃষ্ট অর্ন্তদ্ব›েদ্বর বিস্ফোরণ ঘটেনি এখনো। তবে মনোনয়ন প্রত্যাসী নেতাদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে চলছে বাদানুবাদ। নিজ নিজ নেতার পক্ষে যোগ্যতার যুক্তি তুলে ধরছেন কর্মীরা। এর মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবেই অপর নেতাকে করা হচ্ছে তিরস্কার।  

 

জানা গেছে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাসা করেছেন ইউনিয়নটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন, থানা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও আসন্ন যুবলীগ কমিটির সম্ভাব্য নেতা হাজী আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক এবং থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ আহমেদ লিটন। তারা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষভাবে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী ও বিশ্বস্ত কর্মী। প্রত্যেকেই মনোনয়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে লবিং কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।  

 

সূত্র গুলো জানায়, বর্তমানে সাংসদ শামীম ওসমান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যেকোন সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন। তিনি দেশে ফেরার পরই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাসী নেতারা মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে সাংসদ শামীম ওসমানের দারস্থ হবেন। বোদ্ধা মহল বলছেন, ফতুল্লায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাসা করা নেতারা প্রত্যেকেই শামীম ওসমানের নিজস্ব কর্মী হওয়ায় আগামী ইউপি নির্বাচনে তাদের মধ্যে কাকে বেছে নিবেন, তা নিয়ে কিছুটা বিপত্তিতে পড়তে পারেন সাংসদ শামীম ওসমান।

 

জানা গেছে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসদাইর বাংলা ভবনে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন আয়োজিত এক সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘সংসদ নির্বাচন শেষ করেই ফতুল্লা ও সদর উপজেলা নিয়ে কাজ করবো। নির্বাচন হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী থাকবে। সেটা আমিই ঠিক করে দিব। যাকে যে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে হয় সে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে যাব।’ তবে, শামীম ওসমানের ওই ঘোষণার পরও ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ ও সদর উপজেলার নির্বাচন নিয়ে পরবর্তীতে তার মাঝে আর আগ্রহ দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলছেন, শামীম ওসমান চাইলেই নির্বাচন সম্ভব, কিন্তু নির্বাচন হলে তিনি কাকে বাদ দিয়ে কাকে বেছে নেবেন, সেই ভেবেই হয়তো নিশ্চুপ আছেন।

 

তাছাড়া, ফতুল্লা ইউনিয়নের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় কারণেই তার আজ্ঞাবহ আছেন আর সদরের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বিএনপির ব্যানারে থাকলেও তিনিও সংযত কারণেই শামীম ওসমানের পোষ্যতা স্বীকার করে টিকে আছেন। তাই উভয় চেয়ারম্যান শামীম ওসমানের কব্জায় থাকায় তিনি ওই দুই ইউনিয়নে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এদিকে, শামীম ওসমান আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে বোদ্ধামহলের কেউ কেউ এমনটা মনে করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা নির্বাচন নিয়ে মুখিয়ে আছেন। সবশেষ কি হতে যাচ্ছে ফতুল্লা ইউনিয়নবাসির ভাগ্যে সেটাই এখন দেখার বিষয়। অন্যদিকে মনোনয়ন নিয়ে নেতায় নেতায় অর্ন্তদ্ব›দ্ব চলমান থাকলেও প্রত্যেকেই চেয়ে আছেন শামীম ওসমানের দিকে। তারা জানিয়েছেন, শামীম ওসমান চাইলেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে, মনোনয়ন নিয়ে নেতাদের মধ্যে চলমান এই অর্ন্তদ্ব›দ্ব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেই কৌতুহলই দেখা দিয়েছে বোদ্ধামহলে।
 

এই বিভাগের আরো খবর